আ.লীগ নেতাকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দিলো ছাত্রলীগ নেতারা
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার আব্দুস সালামকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির দলিল করার জন্য দুপুর দেড়টার দিকে আব্দুস সালাম মোটরসাইকেল চালিয়ে রাজৈর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসেন। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঢোকার পথে তার গাড়ি থামান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাসিবুল হাসান। পরে হাসিবুলের ভাই আশিকুর রহমানসহ ১২-১৫ জন মিলে আব্দুস সালামকে মারধর করেন। একপর্যায়ে কয়েকজন মিলে সালামের হাত-পা ধরে উপজেলা চত্বরের পুকুরে ফেলে দেন। সেইসঙ্গে তার মোটরসাইকেলটি পুকুরে ফেলে দেন তারা।
স্থানীয়রা আহত অবস্থায় সালামকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে বিকালে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, গত ৩১ আগস্ট খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন আব্দুস সালাম। সভায় রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের আরেক অংশের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদা হাসান পল্লবীর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর ফরিদা হাসান বাদী হয়ে আব্দুস সালামসহ উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ তুলে মামলা করেন। এরই জের ধরে ফরিদা হাসান পল্লবীর উপস্থিতিতে তার দুই ছেলে হাসিবুল হাসান ও তার ভাইসহ তাদের সহযোগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সালামকে একা পেয়ে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেন।
মারধরের শিকার খন্দকার আব্দুস সালাম বলেন, ‘জমির দলিল করার জন্য উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যাচ্ছিলাম। সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ঢুকতেই পল্লবীর উপস্থিতিতে আমার ওপর হামলা চালায় তার ছেলেরা। আমাকে মারধর করে পুকুরে ফেলে দেয় তারা। এরপর আবার পুকুরের পানিতে নেমেও মারধর করেছে। পাজামা-পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেছে। আমার পকেটে দলিল খরচের দুই লাখ টাকা, একটি সোনার চেইন, হাতঘড়ি ও মোবাইল ফোন ছিল। মারধরের সময় ওরা আমার কাছে যা ছিল, সব নিয়ে গেছে। আমি এ ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।’
অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে হাসিবুল হাসান ওরফে পিয়াল বলেন, ‘তিনি (খন্দকার আব্দুস সালাম) সিনিয়র মানুষ, তাকে কেন মারধর করবো? আমি রাজনীতি করি, তাই আমার দিকে আঙুল তুলতেই পারেন তিনি। আমি যখন উপজেলায় যাই, তখন দেখি তিনি পুকুরে পড়ে আছেন। পরে পুকুর থেকে তুলেছি, সমস্যার কথা শুনেছি। আমি শুনেছি, তিনি এক লোকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ধাক্কা লেগে পুকুরে পড়ে গেছেন। তার আগে কিছু ঘটেছে কিনা, তা আমি জানি না। তাকে কারা মেরেছে তাও জানি না।’
এ সম্পর্কে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, ‘পল্লবী ও তার ছেলেরা কেউ আওয়ামী লীগ বা দলের কোনও অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে নেই। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের কর্মী। তারাই উপজেলায় হাঙ্গামা ও মারামারি করে পরিবেশ নষ্ট করে আসছে। আওয়ামী লীগে না থেকেও দলের নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাকে এভাবে মারধর করে তার মোটরসাইকেলসহ পুকুরে ফেলে দেওয়া জঘন্যতম দুঃসাহস। এ ঘটনার বিচার দাবি করছি। সেইসঙ্গে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এ ব্যাপারে রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘রাজৈরে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির, অন্যটি স্থানীয় সংসদ সদস্য শাজাহান খানের। মারধরের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা সভাপতির অনুসারী। তাকে যারা মারধর করেছে তারা সংসদ সদস্য শাজাহান খানের অনুসারী। মারধরের শিকার আব্দুস সালামের শরীরে গুরুতর কোনও আঘাত নেই। তবে তাকে চড়থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। তার হার্টে ওপেন সার্জারি করা। তাই এখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত