ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন অভিনয়শিল্পী-কলাকুশলীদের

| আপডেট :  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০২  | প্রকাশিত :  ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০২


ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন অভিনয়শিল্পী-কলাকুশলীদের

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবেদক


শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথমদিন ক্ষতিগ্রস্ত বিটিভি ভবন পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চলচ্চিত্র, নাটক ও মঞ্চের শিল্পী-কলাকুশলীরা।

১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন তারা।

তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সম্মিলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’- এই স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের মতপ্রকাশ করেন শিল্পীরা। উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস, অভিনেত্রী সুজাতা, অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, নিপুণ, নাট্য ব্যক্তিত্ব শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা। বিটিভিতে  এ ধ্বংসযজ্ঞ কেন, এর পেছনে কারা?- সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

এসময় অভিনয়শিল্পীরা জানান, এখন আর আন্দোলন ছাত্রদের হাতে নেই। তাদের ঢাল হিসেবে আরেকটি গোষ্ঠী ফায়দা লুটছে। শিক্ষার্থীদের উচিত ঘরে ফিরে যাওয়া।

অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান। তিনি বলেন, যারা বিটিভিতে আগুন দিয়েছে তারা দেশদ্রোহী। আমরা ভেবেছিলাম দেশে কোনো বিরোধী শক্তি নেই। কিন্তু এখন দেখছি সেই রাজাকারা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এদের বিরুদ্ধে সব মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এক হয়ে লড়তে হবে।

ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য, অভিনয়শিল্পী ফেরদৌস আহমেদ বলেন, এতদিন আমাদের শোকের মাস ছিল শুধু আগস্ট। এখন জুলাই মাসও আমাদের শোকের মাস হিসেবে যুক্ত হয়েছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলন যৌক্তিক হলেও এদের সঙ্গে অপশক্তি যুক্ত হয়ে আন্দোলনে ভিন্ন পথে প্রভাবিত করেছে।

তিনি বলেন, আমি দেখেছি, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সে কোটার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম, কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদেরকে ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলবো কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো আর আমরা আর কোনোদিন ফিরে পাবো না। আমার নিজের দুটি সন্তান আছে, তারাও ছাত্র। সন্তানহারা বাবা-মায়ের মনের অবস্থা কী সেটা আমরা বুঝতে পারছি। দেশ শেখ হাসিনা ঠিক করে ফেলবেন কিন্তু যারা চলে গেছেন তাদের আর ফিরিয়ে আনা যাবে না।

ফেরদৌস আরও বলেন, আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সে বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নি সন্ত্রাসী কারা? তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। যতগুলো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, আপনারা যদি দেখেন, বাচ্চারা যদি দেখে বুঝতে পারবে সু-পরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে। তাদের বিচার চাই। আজ আমরা সকল অঙ্গনের শিল্পীরা এখানে একত্রিত হয়েছি, আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।

শমী কায়সার বলেন, সকল সংস্কৃতি কর্মীরা আমরা দাঁড়িয়েছি আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে। আগস্ট মাস আমাদের একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সেরকম একটি মাসে আমরা আবারো দাঁড়াবো এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্তরে সেটা আমাদের জীবদ্দশাতেও কখনো ভাবিনি। আজকে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মহত। কারণ যে বাংলাদেশ টেলিভিশন বাঙালির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেছে- সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মর্মাহত হয়েছি। এখানে আমরা বেড়ে উঠেছি, শিল্পী হিসেবে এই প্রাঙ্গণে বড় হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের সকলের আমরা বিচার চাই। বাংলাদেশে এরকম নৃশংসতা, এমন ধ্বংসযজ্ঞ, এতো প্রাণহানি আমরা আর চাই না।

রোকেয়া প্রাচী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে ব্যহত করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল সব সময় থাকে। এই গণতান্ত্রিক দেশে বঙ্গবন্ধু কন্যা সকলকে তার অধিকারের কথা বলতে, দাবীর কথা বলতে সুযোগ দিয়েছেন। এই ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে জঙ্গি হিসেবে, দুষ্কৃতিকারী হিসেবে যারা সহিংসতার রাজনীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চাই। জীবনের যেমন মূল্য আছে তেমনি রাষ্ট্রীয় সম্পদের মূল্য আছে। আমরা প্রতিবাদ জানাতে চাই। নিরীহ ছাত্রদের আন্দোলনকে যারা ছিনতাই করে সারা দেশে সহিংসতা চালিয়েছে এসব রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়াতে চাই।

আজিজুল হাকিম বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যে সকল প্রাণ আমরা হারিয়েছি, তাদের সকলের বিদেহী আত্মার প্রতি আমি সমবেদনা জানাই, আত্মার শান্তি কামনা করি।  আমরা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, সম্প্রতির বাংলাদেশ চাই, স্বস্তির বাংলাদেশ চাই, সন্ত্রাসের বাংলাদেশ চাই না। সবাই মিলে আসুন, দেশটাকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। আর সন্ত্রাস আমাদের কাম্য নয়।

শুভ্র দেব বলেন, এই বিটিভি ছিল বাংলাদেশের প্রখ্যাত সব শিল্পীদের পদচারণামুখর একটি পবিত্র জায়গা। আমি বিশ্বাস করি, কোনো বাংলাদেশী এই বিটিভিতে আক্রমণ করতে পারে না, আক্রমণ করতে পারে কোনো টিক্কাখানের বংশধর। প্রত্যেকটা শিল্পীর হৃদয়ে যে ক্ষরণ হয়েছে, যে ক্ষত হয়েছে তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। যারা এ ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তাদের সকলকেই  বিচারের আওতায় আনতে হবে। যে সকল প্রাণহানি হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সে সবের বিচার হবে এটাই আমার কাম্য।

সুজাতা বলেন, সন্ত্রাসীরা এখনো ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, তাদেরকে খুঁজে বের করে এর বিচার হোক। আমরা শিল্পীরা যেন ঐক্যবদ্ধ হই এবং যেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। যখন দেশটা উন্নতির দিকে তখনই শত্রু আঘাত হানে, ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে দেয় দেশকে। আমরা শিল্পীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি, থাকবো। দেশজুড়ে জ্বালাও, পুড়াও এ সন্ত্রাস আমরা চাই না, আমরা মানি না।

অভিনয়শিল্পী সোহানা সাবা বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে। এই আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে এটা কখনো মেনে নেয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার অপমান কাম্য না।

শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিপুণ বলেন, শিক্ষার্থীদের উচিত এবার ঘরে ফিরে যাওয়া। তাদেরকে যাতে আর কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে বাবা-মায়ের নজর রাখতে হবে।

বিটিভির ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করে সহিংসতার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, পরিচালক ও প্রযোজক এফ এম শাহীন, হৃদি হক, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, জ্যোতিকা জ্যোতিসহ উপস্থিত অনেক তারকাই।

এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত