জাল দলিলের জমি কিনে হারালেন অবসরের পাওয়া ৪৫ লাখ টাকা

| আপডেট :  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:১৬  | প্রকাশিত :  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৮:১৬

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন আনারুল কাদির। অবসরের পর পাওয়া ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে খুলনায় প্রায় ১৩ কাঠা জমি কেনেন। ২০২০ সালে জমির রেজিস্ট্রেশনও হয়। কিন্তু ২০২১ সালে খাজনা দিতে গিয়ে দেখেন ওই জমি অন্যত্র বিক্রি হয়েছে ১৯৭৫ সালে। আনারুল কাদিরের এখন মাথায় হাত। তিনি জমি পাচ্ছেন না। ফেরত পাচ্ছেন না টাকাও।

এর পেছনে রয়েছে নুরুজ্জামান ঢালী নেতৃত্বাধীন একটি প্রতারক চক্র। এ চক্রের টার্গেট অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। জাল কাগজপত্র তৈরি করে এ ধরনের মানুষের কাছে জমি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা ওই তদন্ত প্রতিবেদনটি যুগান্তরের হাতে এসেছে।

প্রতারিত আনারুল কাদিরের স্ত্রী ও মামলার বাদী স্ত্রী সৈয়েদা নিশাত সুলতানা বলেন, আমার স্বামী খুলনার গল্লামারি অগ্রণী ব্যাংক টাউনের পাশে জমি কিনেছিলেন। অবসরকালীন যে ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পেয়েছিলেন তা দিয়েই এ জমি কেনা হয়। কিন্তু ভয়ংকর প্রতারক নুরুজ্জামান ঢালী ও তার সিন্ডিকেটের ফাঁদে পড়ে আমরা এখন নিঃস্ব।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে ঢালী কৌশলে আমাদের বাসায় ভাড়াটে হিসাবে উঠেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই একটি জমি কম দামে কেনার জন্য আমার স্বামীকে উদ্বুদ্ধ করেন। ঢালি বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংক কলোনির পাশেই ১৩ কাঠার কিছু বেশি জমি আছে। ১০-১২ বছর ধরে আমি ওই জমি চাষ করছি। জমিতে কোনো ঝামেলা নেই। জমির মালিক একটা সমস্যায় পড়েছে। তুলনামূলক কম দামে জমিটি বিক্রি করে দেবে। আমি আপনাকে ওই জমি নিয়ে দিতে পারি। এজন্য মিডিয়াম্যান হিসাবে আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে।’ আমার স্বামী সরল বিশ্বাসে তার প্রস্তাবে রাজি হন। এ কারণে এখন আমাদের ভুগতে হচ্ছে।

পিবিআই সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে প্রতারিত আনারুল কাদিরের স্ত্রী সৈয়েদা নিশাত সুলতানা বাদী হয়ে গত বছরের ৮ নভেম্বর আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় প্রতারক চক্রের সদস্য আফরোজা বেগম, খোদেজা বেগম, গোলাম রসুল এবং নুরুজ্জামান ঢালীকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেন পিবিআইর ওপর। তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় এসআই পলাম চন্দ্র রায়কে। তদারকের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআই খুলনা জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমানকে। তদন্ত শেষে ২৩ জানুয়ারি খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আনারুল কাদেরের বাড়ির ভাড়াটিয়া নুরুজ্জামান ঢালী মামলার বাদী ও তার স্বামীকে (আনারুল) ফুসলিয়ে গোলাম রসুলের কথিত পৈতৃক সম্পত্তি কিনতে রাজি করান। আনারুল সরল বিশ্বাসে তার অগ্রণী ব্যাংক লি. স্যার ইকবাল রোড করপোরেট শাখার হিসাব থেকে ঢালীকে পাঁচ লাখ টাকা এবং আফরোজা ও খোদেজাকে ৪০ লাখ টাকা দেন। আসামিরা টাকা গ্রহণের পর ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দিন ধার্য করেন।

ওইদিন গোলাম রসুল এবং ঢালী নানা কারণ দেখিয়ে জমির রেজিস্ট্রেশন না করে বাদীর নামে আমমোক্তার দলিল (নং-৫৪৫৪/২০২০) সম্পাদন করে দেন। ওই বছরের ১৮ নভেম্বর জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। পরের বছর বাদী নিশাত সুলতানা ও তার স্বামী আনারুল কাদির খাজনা দিতে গেলে জানতে পারেন ওই সম্পত্তি ১৯৭৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর অন্যত্র বিক্রি হয়ে গেছে। তারা (নিশাত-আনারুল) এখন যার কাছে থেকে জমি কিনেছেন তিনি ওই জমির মালিকই নন। পরে নিশাত ও আনারুল আসামিদের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তারা টাকা দিতে অস্বীকার করেন।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসামিরা যে বাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তার ভিডিও চিত্র রয়েছে। বাদীর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড খুলনা শাখার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায়ও বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে-আফরোজা বেগম, খোদেজা বেগম, গোলাম রসুল ও নুরুজ্জামান ঢালী পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ চক্র একই জমি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত