ডেল্টা রোধে যে ওষুধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. বিজনের অনুরোধ
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোধ করতে হলে ভিটামিন ‘সি’ এর সঙ্গে জিংক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীল। তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোধে সিয়ালিক এসিড (sialic acid) বন্ধ করতে হবে। এজন্য ভিটামিন ‘সি’ উইথ জিংক ব্যবহার করা হোক। এটা পৃথিবীর সব জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু একটি নির্দেশের দরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ জানান ড. বিজন।
শনিবার (০৭ আগস্ট) দুপুরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর হায়দার মিলনায়তনে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রফেসর ড. বিজন কুমার শীল বলেন, আমরা প্রত্যেকে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। আগের ভাইরাসের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট হাজার গুণ বেশি মারাত্মক। এটার অ্যান্টিবডি ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে এই ভাইরাস অল্পসময়ে দ্রুত শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া, জ্বর বেশি দেখা গেছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট খুবই উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ একটা ভাইরাস। এই ভাইরাস ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আগে যেখানে ১৫ মিনিট লাগতো। আমি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে বলবো, মিউটিনেশন টি১৯আর ডেঞ্জেরাস। এটা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানিরা চিন্তা করছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে সারা বিশ্ব ভালোভাবে জানবে। সারা পৃথিবীর মানুষ আক্রান্ত। আমাদের সে পথ অবলম্বন করতে হবে যে পথে আমরা সহজে সেবা হাতের কাছে নিয়ে যেতে পারবো।
মূল প্রবন্ধে বিজন কুমার শীল বলেন, যদি করোনাভাইরাসকে রোধ করতে হয় তাহলে আমরা যে মিউটেশনটাকে চিহ্নিত করতে পেরেছি সেটা রোধে সিয়ালিক এসিড (sialic acid) বন্ধ করতে হবে। এজন্য ভিটামিন ‘সি’ উইথ জিংক ব্যবহার করা হোক। এটা পৃথিবীর সব জাগায় ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু একটি নির্দেশের দরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনি আমাকে আসার অনুমতি দিয়েছেন। সুতরাং আমার কথাটা বিবেচনা করুন। আপনি যদি বলেন আজকে কাল থেকে সেটা হবে। সরকারকে বলবো বাংলাদেশ মেডিক্যাল কাউন্সিল দিয়ে রিসার্স করতে পারে এ বিষয়টি। আমি মনে করি এক মাসের মধ্যে একটা রেজাল্ট পাবো। তবে আমরা পারবো না, যাদের ল্যাবটরি সুবিধা আছে তাদের তাছে এটা কিছুই নয়।
তিনি বলেন, আমি আজকে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাবো, আপনি নির্দেশ দেবেন, ভিটামিন ‘সি’ ও জিংক খেতে। বাংলাদেশে ভিটামিন ‘সি’ আছে। কিন্তু জিংক নেই। এই দুইটা একসাথে পৃথিবীর সব দেশে পাওয়া যায়। সিঙ্গাপুরে প্রথম যখন করোনাভাইরাস আসে তখন ভিটামিন ‘সি’ বাজারে শর্ট পড়েছিল। বর্তমানে আবার সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস দেখা দিয়েছে সেজন্য সরকার ভিটামিন ‘সি’ এর দাম ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এটা প্রমাণিত।
ড. বিজন কুমার শীল বলেন, একটু আগেই একজন ডাক্তার বললেন, তার মা তিন দিন আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারপর তিনি তার গ্রামের সব লোকদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করান। তখন দেখতে পান গ্রামের ৭০ ভাগ লোক করোনায় আক্রান্ত। তাদের করোনার কোনো লক্ষণ নেই। আমি বলবো, এই মুহূর্তে যেটা প্রয়োজন একটি বাড়িতে বা গ্রামে কেউ আক্রান্ত হলে আপনাদের মনে করতে হবে আপনারা সবাই আক্রান্তের পর্যায়ে আছেন। এজন্য মাস্ক পরার পাশাপাশি দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার শ্বাসকষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যাব না, তাহলে সবাই অসুবিধায় পড়বেন। এছাড়া গ্রামে মানুষের মধ্যে একটা কুসংস্কার কাজ করে। অনেকেই অসুস্থ হলে কেউ বলে না। তাই জনপ্রতিনিধিদের এ বিষয়টিকে বোঝাতে হবে। করোনা কোনো খারাপ জিনিস না, যে কারোরই হতে পারে।
তিনি বলেন, গ্রামের একজনের হলে বুঝতে হবে বাকি লোকজনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এজন্য সকলকে মাস্ক পরতে হবে, হাঁচি বা কাশি এলে অবশ্যই টিস্যু অথবা রুমাল ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটা কমে আসবে। বর্তমানে দেখা গেছে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শ্বাসনালির উপরের দিকে গ্রো করে। যা আগের ভাইরাসের চেয়ে এক হাজার গুণ বেশি ভাইরাস আসছে। এর ফলে ইক্লুয়েশন গ্রো কমে আসছে, আগে ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে এখন সেটা ৩ দিনের মধ্যে হচ্ছে। তাই আমাদের কাশি না হওয়া পর্যন্ত, শ্বাসকষ্ট না হওয়া পর্যন্ত করোনা নয়—এই কনসেপ্টটা পরিবর্তন করতে হবে।
বিজন কুমার শীল বলেন, ভাইরাসের যেমন পরিবর্তন হয়েছে। আমাদেরও ভাইরাস শনাক্ত করার চিন্তা-ভাবনাও পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাঁচা খুব কষ্ট। আগে ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনের হতো, এখন ১০০ জনের মধ্যে ১০০ জনেরই করোনা হচ্ছে। তার মধ্যে ২৫ শতাংশ মানুষের সমস্যা হচ্ছে। তাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। সুতরাং ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ করতে হবে। অন্তত আমরা সবাই আক্রান্ত হওয়ার পথে। এজন্য মাস্ক পরতে হবে, হাঁচি ও কাশি এল কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকতে হবে। যাতে ভাইরাসটা দূরে না যায়, এটা সহজ একটা পথ। আর ভ্যাকসিন দিলে হাসপাতালে যেতে হবে না বা মৃত্যুর সম্ভাবনা কম।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. বিজন বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। আক্রান্ত হলে মাস্ক পরতে হবে, দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে। পাশাপাশি ভিটামিন সি ও জিংক খেতে হবে। বর্তমানে আমাদের ৫০০ এমজি দেওয়া হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি দিতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ এর বিকল্প হিসেবে প্রচুর আমলকি খেতে হবে।
কোন রক্তের গ্রুপে এই ভাইরাস আক্রমণ বেশি করছে এবং গর্ভবতী নারীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটি গবেষণা করছি কোন কোন রক্তের গ্রুপে এই ভাইরাস আক্রান্ত বেশি হচ্ছে। সেটা শিগগিরই বেরিয়ে আসবে। আর টিকা দেওয়া নিয়ে জাতীয় পলিসি আছে, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. লায়লা পারভীন বানুর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএসএমএমইউ সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম (ভাইরোলজিস্ট), বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সূত্র: বাংলানিউজ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত