দরিদ্র পরিবারের সাগরিকা, চমক দেখালেন ফুটবলে!
দরিদ্র পরিবারের জন্ম নেওয়া সাগরিকা এখন দেশের নারী ফুটবলে আলোচিত মুখ। ফুটবল খেলা নিয়ে এক সময় প্রতিবেশীরা সাগরিকাকে দেখতেন বাঁকা চোখে, করতেন কটু মন্তব্য, গুজব রটাতেন। তারাই এখন সাগরিকা নিয়ে গর্ব করছেন। নানা প্রতিকূলতায় ফুটবল খেলে এখন শীর্ষ খেলোয়াড়ের জায়গা করে নিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গি ইউনাইটেড প্রমীলা ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড় সাগরিকা। কমলাপুর স্টেডিয়ামে চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দুর্দান্ত ফুটবল খেলছেন সাগরিকা। নেপাল ও ভারতের বিপক্ষে জয়ের মূল কারিগর হিসেবে সকলকে দেখিয়েছেন সাগরিকা। রানীশংকৈল উপজেলার রাঙ্গাটুঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা লিটন আলী মেয়ে সাগরিকা। তার বাবা পেশায় একজন স্থানীয় চায়ের দোকানি। দুই সন্তানের মধ্যে সাগরিকা ছোট। আর ছেলে মোহাম্মদ সাগর একটি ইটের ভাটায় কাজ করেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সাগরিকার এমন প্রতিভার খবরে এলাকায় উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এখন অপেক্ষা বাড়ি ফিরলেই তাকে নানা ভাবে বরণ করা হবে। এর আগে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দেখতে সাগরিকার মা-বাবা মেয়ের খেলা দেখতে ঢাকায় গেছেন। সাগরিকার ভাই মোহাম্মদ সাগর বাড়িতে একাই আছেন। গেল বৃহস্পতিবার রাতে ফাইনাল খেলা দেখার জন্য গ্রামের ছেলেরা বড় পর্দার ব্যবস্থা করেছিল। স্থানীয়রা জানান, সাগরিকার খেলা দেখতে সেখানে ভাই সাগর ছুটে আসেন। খেলার শুরুতে বাংলাদেশ গোল খেলেও দমে যাইনি সে। শেষ পর্যন্ত সাগরিকাই দেশের সম্মান বাঁচায়। যা দেখে মুগ্ধ এলাকার সবাই। ছোট থেকেই ফুটবলের প্রতি সাগরিকার টান ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় বঙ্গমাতা টুর্নামেন্ট দিয়ে ফুটবল খেলা শুরু তার। এরপর রাঙ্গাটুঙ্গী ফুটবল একাডেমির মেয়েদের ফুটবল প্রশিক্ষণে যোগ দেন সাগরিকা। সে সময় মেয়েদের ফুটবল খেলা দেখে কটূক্তি করতেন গ্রামের অনেকে। তাঁদের কথায় বিরক্ত হয়ে সাগরিকার বাবা লিটন আলী মেয়েকে মাঠে যেতে বারণ করে ঘরে আটকে রাখেন। এসব উপেক্ষা করে মাঠে চলে যেতেন সাগরিকা। এক সময় রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলামের অনুরোধকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন লিটন আনজু দম্পতি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তার খেলায় উন্নতি হয়। এ বিষয়ে রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম জানান, সাগরিকা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাঙ্গাটুঙ্গী ইউনাইটেড ফুটবল একাডেমি থেকে কয়েকজন মেয়েকে ভর্তি করাতে বিকেএসপিতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সাগরিকা সেখানে গিয়ে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি। শেষ মেশ গ্রামে ফিরে আসে। এরপর সেই রাঙ্গাটুঙ্গী থেকেই সাগরিকাকে অন্য নারী ফুটবলারদের সঙ্গে দলে ভেড়ায় মেয়েদের ফুটবল লিগের দল এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। মেয়েদের লিগে সাগরিকা পাল্লা দিয়েছেন দেশের শীর্ষ নারী ফুটবলারদের সঙ্গে। সেবার সাগরিকা গোল করেছিলেন ১০টি। এরপরই মেয়েদের ফুটবলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন তাকে নিয়ে আসেন মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলে। সেই থেকে বাংলাদেশের জার্সিতে ফুটবল শুরু সাগরিকার। তার জন্য বাংলাদেশ আজ গর্বিত। আমরা তার অপেক্ষায় দু-তিন দিনের মধ্যে গ্রামে আসার কথা রয়েছে। লিটন ও আনজু দম্পতি মুঠোফোনে জানান, গত বছর প্রতিবেশীরা জানতে চান আমাদের মেয়ে সাগরিকা কোথায়? তারা জানতেন আমাদের মেয়ে একটি ছেলের সঙ্গে লুকিয়ে চলে গেছে। আমরা তাদের প্রমাণ দেখাই যে মেয়ে ফুটবল লিগে খেলছে। যে খেলা তাদেরকে সরাসরি মোবাইলে দেখাই। এখন সাগরিকার অর্জনে সবাই খুশি। তারাই আমাদের দেখান যে সাগরিকার ছবি কত বড় করে পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। মেয়ের জন্য এখন আমাদের অনেক গর্ব হয়। মেয়ের খেলা বন্ধ করতে গিয়ে আমি যে কতটা ভুল করতে গিয়েছিলাম, এখন তা বুঝতে পেরেছি। মেয়েটা যেন দেশের জন্য আরও সম্মান বয়ে আনতে পারে, তাই সবার কাছে দোয়া চান। বিবার্তা/মিলন/সউদ
দরিদ্র পরিবারের সাগরিকা, চমক দেখালেন ফুটবলে!
খেলা
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত