নোয়াখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ, চান সহযোগিতা

| আপডেট :  ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১৩  | প্রকাশিত :  ২২ আগস্ট ২০২৪, ০৫:১৩


নোয়াখালীতে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ, চান সহযোগিতা

সারাদেশ

নোয়াখালী প্রতিনিধি


নোয়াখালী জেলায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ইতিমধ্যে বন্যায় রূপ নিয়েছে। জেলা শহর মাইজদীসহ ৯ উপজেলার সবগুলো এলাকায় ইতোমধ্যে পানি উঠেছে। এতে পানিতে ডুবে গেছে রাস্তা ঘাট আর বাসাবাড়ি ঢুকে পড়েছে পানি।  আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে উঠতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

২২ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকালে ৪নং কাদির হানিফ ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ানডের কৃষ্ণরামপুর গ্রামের আল মদিনা উচ্চ বিদ্যালয় আশয়কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় ২৫টির মতো পরিবারের প্রায় ৮০ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন।

সেই এলাকার ফরহাদ  বলেন, ‘গত ৩০ বছরে এত পানি দেখিনি। ঘরে কোমর সমান পানি উঠে গেছে। ঘরে থাকা সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। হাঁসমুরগি সব পানিতে ডুবে মারা গেছে। জান বাঁচিয়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছি। রাতে  চিড়া মুড়ি খেয়েছি।

আল মদিনা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে আসা সাজেদা বেগম জানান, আমার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে গেছে।  গতকাল বিকালে আমি ও আমার পরিবারের ৫ জনকে নিয়ে স্কুলে আসছি। রাতে স্থানীয়  মেম্বারও এলাকাবাসী চিড়ামুড়ির ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি সরকারের কাছে সহযোগীতা কামনা করছি।

আল মদিনা উচ্চ বিদ্যালয়আশ্রয় কেন্দ্রে আসা আবদুল করিম বলেন,আমার ঘরে পানি উঠে গেছে গতকাল রাতে স্কুলে উঠেছি পরিবার নিয়ে। তিনি ও সরকারের সহযোগিতা চান।

স্থানীয় কৃষ্ণরাম স্কুলের শিক্ষক আহসান উল্যা হেলাল বলেন, আমাদের এলাকার বাসিন্দাদের ঘরে ঢুকে যাওয়ায় আল মদিনা স্কুলে স্থানীয় মেম্বারকে নিয়ে রাতে ও সকালে শুকনা খাবার চিড়া মুড়ি ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

৪নং কাদির হানিফের স্থানীয় ইউপি সদস্য  নুর মোহাম্মদ সুজন বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে আসা সকল লোকজনকে রাতেও চিড়া মুড়ির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সকালে  উপজেলায় জমা দেয়ার তালিকা তৈরি করতেছি।  

স্থানীয় যুবদল নেতা জয়নাল বলেন, আমাদের যুবদলের পক্ষ থেকে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৭ ইউনিয়ন। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ২২ লাখ মানুষ। স্থাপন করা হয়েছে ৩৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র। যাতে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম।

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দা।

আবহাওয়া অফিস বলছে, মঙ্গলবার  সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাইজদী কোর্ট,  নোয়াখালী অফিস কর্তৃক রেকর্ডকৃত মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৪৪ মিলিমিটার।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ফারুক  বলেন, গুচ্ছগ্রামসহ পুরো কোম্পানীগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মানুষ দিনভর নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছে। আমাদের এদিকে স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নামছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ হাসান খান  বলেন, বিচ্ছিন্ন হাতিয়া উপজেলা ব্যতীত জেলার আট উপজেলার ৮৭ ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ২২ লাখ মানুষ। ৩৪৫টি আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। সময় বাড়ার সাথে সাথে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ বাড়ছে। ইতোমধ্যে ৮৮ টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ত্রাণের জন্য বরাদ্দ ১৫ লাখ টাকার মধ্যে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ও ৮০০ মেট্রিক টন চালের মধ্যে ১৭৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান  বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরা আগে পড়েনি। প্রচুর বৃষ্টিতে প্রথমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন আবার মুহুরী নদী, ফেনী নদী থেকে পানি আসছে। সে হিসেবে হাতিয়া উপজেলা ছাড়া বাকি ৮টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। আমরা সব স্কুল, কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। ইতোমধ্যে ২০ হাজারের মতো মানুষ । বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।

বিবার্তা/ইকবাল/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত