প্রাথমিকের সংরক্ষিত ছুটি অনেকটা প্রতরণারই শামিল

| আপডেট :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৪৬  | প্রকাশিত :  ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০১:৪৬

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ছুটির তালিকায় প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষের হাতে তিনদিন বা তারও বেশি সংরক্ষিত ছুটি দেয়ার ক্ষমতা থাকে। সে অনুযায়ী উচ্চ বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজের প্রধানগণ প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ক্ষমতাবলে সংরক্ষিত ছুটি দিয়ে থাকেন।

এর ব্যতিক্রম হলো শুধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে। প্রাথমিকের ছুটির তালিকায় সুস্পষ্টভাবে লেখা থাকে প্রধান শিক্ষকের হাতে সংরক্ষিত ছুটি তিনদিন। তালিকার নিচে লেখা থাকে, এ ছুটি উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদনক্রমে ভোগ করতে হবে। এ ছুটির ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি না লিখে থানা বা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সংরক্ষিত ছুটি লিখলে মনে হয় যথাযথ হতো। প্রাথমিকের এ ছুটি অনেকটা গাছে উঠতে বলার কথা বলে পায়ে বেড়ি দিয়ে বেঁধে উঠতে না দেয়া। বিষয়টি অনেকটা প্রতরণারই শামিল।

সংশ্লিষ্টদের ভাবনা, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো উপজেলা শিক্ষা অফিসের ছাদের নিচে অবস্থান করছে। সংরক্ষিত ছুটি সাধারণত আকস্মিক কোনও ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে দূর দুরান্তের বিদ্যালয়গুলোর জন্য আকস্মিক কোনও ঘটনা বা বিশেষ কারণে সংরক্ষিত ছুটি ভোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

অপর দিকে প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি লিখে তাতে আবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন নেয়ার বিধান রাখাটা শিক্ষকদের মর্যাদা লঙ্ঘনেরই শামিল। এ ক্ষেত্রে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের ‘অনুমোদন’ নেয়া লেখা বা প্রধান শিক্ষকদের ‘সংরক্ষিত’ ছুটি লেখা বাদ দেয়াই উচিত।এ সাংঘর্ষিক কথা কতটা বাস্তবসম্মত বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখতে বলছি।

স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের দেশের শিশুরা কতটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বেড়ে উঠছে, প্রাথমিক ছুটির তালিকা একটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে তা উপলব্ধি করা যাবে। শিশু শিক্ষার্থীরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি জেনে একজন সুনাগরিক হিসাবে বেড়ে উঠুক, এ কামনা থাকা উচিত প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের। প্রাথমিকের ছুটির তালিকায় ২১ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, শিশু দিবস বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, বাংলা নববর্ষসহ জাতীয় ও বিশেষ দিবসে ছুটির তালিকায় বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। ছুটির তালিকার নিচে উক্ত দিবসগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনের নির্দেশ থাকে। শিক্ষার্থীর কাছে ছুটি অত্যন্ত আনন্দের। একটু ছুটির আভাস পেলে হৈ হুল্লা জুড়ে দেয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি কবিতাটি মনে পড়ছে।

‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি
আজ আমাদের ছুটি, ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি।’

বিদ্যালয় ছুটি থাকায় দিবসগুলো শিক্ষার্থীবিহীন দায়সারা ভাবে পালন করা হয়ে থাকে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতির সংগ্রামী ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান লাভ করতে পারে না। উক্ত দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত রেখে জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হলে, তারা দেশপ্রেমে বলীয়ান হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গর্বিত নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। এ প্রেক্ষিতে জাতীয় ও বিশেষ দিবসে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের তালিকা থেকে বাদ দেয়া প্রয়োজন। উক্ত ছুটিগুলো গ্রীষ্মের ছুটির সাথে যোগ করে ১৫ দিন করা হোক।

মুক্তিযুদ্ধের সরকার আজ ক্ষমতায়। অথচ শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য এই গতানুগাতিক বন্ধের তালিকা, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনারও পরিপন্থী। তাই প্রধান শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটি, জাতীয় ও বিশেষ দিবসে বিদ্যালয় খোলা রেখে আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় ও বিশেষ দিবস পালন করা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। আর প্রধান শিক্ষকের হাতে অর্পিত সংরক্ষিত ছুটিগুলো উপজেলা কর্মকর্তার অনুমোদন ছাড়াই প্রয়োগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
আজকের শিশু আগামী প্রজন্মের মাঝে মুক্তি চেতনায় দেশ প্রেম জাগ্রত হোক সে ভরসায়।

লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত