বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন, নেপথ্যে প্রেমিকার আপত্তিকর ভিডিও

| আপডেট :  ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:৫১  | প্রকাশিত :  ১১ জুলাই ২০২৪, ১২:৫১


বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন, নেপথ্যে প্রেমিকার আপত্তিকর ভিডিও

সারাদেশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি


কক্সবাজারের রামু থানাধীন রশিদনগর ইউনিয়নস্থ খাদেমেরপাড়ায় রেললাইনের পাশে পড়ে থাকা আব্দুল্লাহ আল মামুনের ক্লুলেস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. শাহেদ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ১৫ সদস্যরা।

মঙ্গলবার বিকেলে র‌্যাব-১৫ এর আভিযানিক দল কক্সবাজার সদর থানাধীন লিংক রোড বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

১০ জুলাই, বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব এর উপ-অধিনায়ক মেজর শরিফুল আহসান গ্রেফতারকৃত মো. শাহেদের বরাত দিয়ে বলেল, দীর্ঘ দিন ধরে প্রেমিকার আপত্তিকর ভিডিও না দেয়া নিয়ে দুই বন্ধুর মাঝে দ্বন্দের জেরে মূলত মামুনকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে শাহেদ।

গ্রেফতারকৃত মো. শাহেদ কক্সবাজার ঝাউতলা ভিশন শো-রুমের ম্যানাজার এবং দীর্ঘ দিন ধরে ইয়াবা কারবার ও অনলাইন জুয়ার এজেন্ট হিসেবে অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

আর খুন হওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০), কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত মোঃ নবী হোসেন এর ছেলে।

র‍্যাব এর উপ-অধিনায়ক মেজর শরিফুল আহসান জানান, সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ঘাটপাড়ার মৃত নবী হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩০) একজন ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ব্যবসায়ী। লিংক রোড এলাকায় যৌথভাবে পরিচালিত ভিশন ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিক্রয়ের একটি শো-রুম রয়েছে। শো-রুমটি মামুন তার বন্ধু শাহেদ ও শাহেদের ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিনের শেয়ারের ভিত্তিতে পরিচালনা করে আসছিলেন। কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ের একটি মেয়ের সঙ্গে ঘাতক শাহেদ হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক চলাকালে তারা দুজনেই কিছু আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও শাহেদের মোবাইলে ধারণ করে রাখে। মেয়েটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের অবনতি হলে শাহেদের মোবাইলে থাকা তাদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করতে বলেন প্রেমিকা।

নিজের মোবাইল থেকে ডিলিট করার আগে, শাহেদ ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের মোবাইলে সংরক্ষণ করতে প্রেরণ করে। পরে প্রেমিকার সামনে শাহেদ তার মোবাইল থেকে ছবি ও ভিডিওগুলো ডিলিট করে। পরে ছবি ও ভিডিওগুলো বন্ধু মামুনের কাছ থেকে ফেরত চান শাহেদ। কিন্তু এসব ছবি ও ভিডিও শাহেদকে দিতে অস্বীকার করে মামুন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামুনকে হত্যার ছক আঁকে শাহেদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৬ জুলাই রাত ৮টার দিকে মামুনকে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে এক জায়গায় যেতে হবে উল্লেখ করে ভিশন শো-রুম থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাহারছড়া বাজারে আসতে বলে। শাহেদের কথায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামুন বাহারছড়া বাজারে পৌঁছালে দুজনেই মোটরসাইকেলযোগে ঈদগাঁও কালিরছড়া বাজারের একটু আগে শাহেদ বন্ধু মামুনকে মোটরসাইকেল থামাতে বলে। মোটরসাইকেল থামানোর পরপরই ঈদগাঁওর শীর্ষ ডাকাত মাছুয়াখালীর আলী আহমদ ওরফে চুনতি মৌলভীর ছেলে শাহীন ওরফে লালুর নেতৃত্বে কয়েকজন দুর্বৃত্ত মামুনের মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে শাহেদকে বুঝিয়ে দেয়। এসময় তাদের এক লাখ টাকা প্রদান করে শাহেদ।

পরে মামুনের মোবাইলটি শাহেদ ভেঙে চুরমার করে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়। শাহেদের নির্দেশে ডাকাত শাহীনের নেতৃত্বে মামুনকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের পর হত্যা করে রেললাইনের পাশে ফেলে রেখে যায়। আর ৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রামু রশিদ নগর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডস্থ খাদেমের পাড়া এলাকার রেললাইনের পূর্বপাশ হতে হাত-পা বাঁধা উপুড় অবস্থায় মামুনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

র‌্যাব আরো জানায়, এই মৃত্যুর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। যার প্রেক্ষিতে ক্লু-লেস এ হত্যার রহস্য উন্মোচন করে মূল পরিকল্পনাকারী ঘাতক বন্ধু শাহেদ হোসেনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১৫।

র‌্যাব উপ-অধিনায়ক শরিফুল ইসলাম জানান, নিহত মামুনের ভাই মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ৭ জুলাই রাতে রামু থানায় হত্যা মামলার এজাহার দেন। রাতেই এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। সেই মামলায় গ্রেফতার শাহেদকে রামু থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত