মিয়ানমারে ২ বিদ্রোহীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভিডিও প্রকাশ

| আপডেট :  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৭  | প্রকাশিত :  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:০৭


মিয়ানমারে ২ বিদ্রোহীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ভিডিও প্রকাশ

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


মিয়ানমারে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সংঘর্ষ প্রকট আকার ধারণ করার পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানির ঘটনাও। এমন অবস্থায় দেশটিতে ২ বিদ্রোহী যোদ্ধাকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ সামনে এসেছে। যদিও তিন মাস আগে ঘটা এই ঘটনার একটি ভিডিও মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাগওয়ে অঞ্চলের একটি গ্রামে জান্তাবিরোধী ২ যোদ্ধাকে আগুনে পুড়িয়ে জনসমক্ষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। নিহত ওই দুই যোদ্ধার বয়স ২০ বছরের বেশি মূলত মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নামে গাছে ঝুলিয়ে তাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।

ইরাবতী বলছে, জান্তাবিরোধী দুই যোদ্ধাকে হত্যার ভিডিওটি প্রথমে স্থানীয় দুটি মিডিয়া আউটলেট সামনে আনে। রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স (ওয়াইডিএফ) বলেছে, জান্তা সৈন্য এবং পিউ স এইচটি নামের একটি মিত্র মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্যরা গাঙ্গাও শহরের মায়াউক খিন ইয়ান গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দুই যুবককে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয় যে, তারা স্থানীয় জনপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। সেনাবাহিনী তাদের মুখ দিয়ে স্বীকার করতে বাধ্য করে যে, তারা ‘কুকুর’। যারা তাদেরকে এই স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে তার মধ্যে কিছু সদস্য ছিল সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা। অন্যরা ছিল সাদা পোশাকে। ঘটনার সময় ওই দুই যুবককে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের। মূলত জান্তা সৈন্যদের বোঝাতে অনেক বেসামরিক ব্যক্তি ‘সামরিক কুকুর’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন।

ভিডিওতে তথ্যপ্রমাণ মেলে যে, ওই দুই যুবককে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার আগে নির্যাতন করা হয়। তাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষত ছিল। তা থেকে রক্ত ঝরছিল। রক্তে ভেজা ছিল শরীর। তাদেরকে যখন টেনে একটি গাছে ঝোলানো হয়, তখন তাদের হাত ও পা বাঁধা ছিল লোহার চেইন দিয়ে। এরপর তাদের শরীরে জ্বালানি ঢেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে তারা জীবন্ত পুড়ে মারা যান।

এছাড়া জীবন্ত পুড়িয়ে মারার আগে ওই দুই ব্যক্তিকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে দেখা গেছে ভিডিওটিতে।

এদিকে এই ঘটনার জন্য জান্তা সৈন্য ও তাদের মিত্র মিলিশিয়া সদস্যদের দায়ী করেছে জান্তা সরকার বিরোধী প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইয়াও ডিফেন্স ফোর্স (ওয়াইডিএফ)। নিহত ওই দুজনকে ফোই তাই ও থার হতুয়াং হিসেবে শনাক্ত করে ওয়াইডিএফ বলেছে, নৃশংস এই হত্যাযজ্ঞ দেখতে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি থেকে একজনকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।

ওয়াইডিএফ আরও বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর এই দুই যুবককে মাইউক খিন ইয়ান গ্রামে অভিযান চালানোর সময় গ্রেপ্তার করে জান্তার সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র পিউ শয়ে হতির সদস্যরা।

ওই গ্রামটি নিয়ন্ত্রণ করছে পিউ শয়ে হতি মিলিশিয়ারা। তাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন- সামরিক বাহিনী সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সাবেক আইনপ্রণেতা বুলেট হ্লা শয়ি। বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতন চালানোর জন্য কুখ্যাত এই মিলিশিয়ারা। তারা গ্রামে গ্রামে গোলা নিক্ষেপ করে। ২০২২ সালের মার্চে একই গ্রামের দুজন সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এই মিলিশিয়াদের সম্প্রসারণের ফলে গ্রামের অনেক অধিবাসী পালিয়েছেন।

এদিকে নির্যাতন ও জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যার ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু ব্যবহারকারী ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করছেন।  

এ নিয়ে এব বিবৃতিতে ওয়াইডিএফ বলেছে, বহুদিন আগে থেকেই সেনাবাহিনী অমানবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আর এমন ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনীর শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে। বিপ্লবের সফলতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সব মানুষকে বিপ্লব সফল না হওয়া পর্যন্ত নীরব না থেকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত