সুবিধা বাড়ানোর নতুন সিদ্ধান্তে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ

| আপডেট :  ১৯ জুন ২০২২, ০৮:১৪  | প্রকাশিত :  ১৯ জুন ২০২২, ০৮:১৪

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আরও একটি সুবিধা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসকারী মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের প্রতি সদস্য দৈনিক ১২৫ লিটার পানির বিল মওকুফ সুবিধা পান। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার নিজস্ব বাড়ির ১৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত হোল্ডিং ট্যাক্স, দুই বার্নার গ্যাসের বিল, ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল মওকুফ সুবিধা পান। এবার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুরো বাড়ির কর মওকুফ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছ।

স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের চিহৃবহনকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, খেতাবপ্রাপ্ত শহীদ পরিবারের সদস্যদের ১৫০০ বর্গফুটের স্থলে পুরো বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স ও অন্যান্য সকল প্রকার ট্যাক্স মওকুফের প্রজ্ঞাপনটি গেজেটকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় খেতাবপ্রাপ্ত, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবার কল্যাণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কর্তৃক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত পত্রটি সদয় পরবর্তী কার্যার্থে নির্দেশক্রমে এতদসংগে প্রেরণ করা হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দুটি উৎসব ভাতা, জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিজয় দিবস ভাতা এবং সবার জন্য বৈশাখী ভাতাও চালু করা হয়েছে। ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির সর্বমোট ৭ হাজার ৮৩৮ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শহীদ পরিবার ও বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হচ্ছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ গজনবী সড়কে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এ ৮৪টি ফ্ল্যাট ও ৭৪টি দোকান আছে। তন্মধ্যে ৩৩টি ফ্ল্যাট ও ৩৩টি দোকান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতাভাগী সকল শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে স্বল্প মূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা ভাতা, বিবাহ ভাতা, উৎসব ভাতা, চিকিৎসা খরচ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ, লাঠি, কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, জুতা, মোজা, শ্রবণ যন্ত্র, চশমা ইত্যাদি প্রদান করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তার ইচ্ছাকৃত স্থানে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মৃত দেহ দাফন/সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সহিত যোগাযোগের জন্য ২০১৭ সালে হুইল চেয়ারে চলাচলকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। এ খাতে প্রতিজনকে মাসিক ১১০০ টাকা হতে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত মোবাইল বিল প্রদান করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে এবং আন্তর্জাতিক যে কোন রুটে (ইকোনমি) বছরে একবার যাতায়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বিআরটিসির বাসে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র জলযানে প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে তাদের বহনকারী গাড়ির টোল মওকুফ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরি পারাপারের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে তাদের বহনকারী প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স বিনা ভাড়ায় পারাপারের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জনকে সম্মানী ভাতা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব হিসাব নম্বরে প্রেরণ করা হচ্ছে। সারাদেশের হাট-বাজারের ইজারালব্ধ অর্থ হতে প্রাপ্ত ৪% টাকা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রদান করা হয়।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সুপারিশের আলোকে ১৮৮ জন মহিলা মুক্তিযোদ্ধার (বীরাঙ্গনার) নাম গেজেটে প্রকাশ। ৬৪টি জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ৬০টি ভবনের নির্মাণ সম্পন্ন। ১০টি ভবনের নির্মাণকাজ চলমান। ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করার লক্ষে ২৯৭১টি বাসস্থানের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত।

অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ‘বীর নিবাস’ নামের এই নান্দনিক ঘরগুলো দেশে ৮টি বিভাগ ও ৬৪ জেলায় নির্মিত হচ্ছে। ২৬৩টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মাণ। ৬৫টির নির্মাণ কাজ চলমান।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত