অভিনব উপায়ে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করলেন ম্যানেজার নিজেই!

| আপডেট :  ১০ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৫  | প্রকাশিত :  ১০ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৫

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ম্যানেজার রফিক মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিনব উপায়ে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্যাংকটির কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রফিক মাহমুদ ব্যাংকের টাকা নিজের আত্মীয়-স্বজনের নামে ৫৮টি এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট) করেছেন। কিন্তু এফডিআরে অর্থের উৎস, গ্রাহকের পরিচিতি, প্রকৃত সুবিধাভোগী ইত্যাদি বিষয়ে কোনও তথ্য সংরক্ষণ করেননি তিনি। দুদকের জনসংযোগ শাখার উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আরিফ সাদেক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এ বিষয়ে মামলা হয়েছে ও তদন্ত চলছে।

অভিযুক্ত রফিক মাহমুদ বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিনি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের শ্যামপুর মুন্সীখোলা শাখায় ছয় বছর ধরে ব্যবস্থাপকের (ম্যানেজার) দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, ২০২১ সালের ২৭ জুন থেকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিনব উপায়ে ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি। এ বিষয়ে গত ৪ এপ্রিল ব্যাংকটির এফএভিপি (ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট) জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া কদমতলী থানায় একটি অভিযোগ দেন।

কিন্তু অভিনব আত্মসাতের ঘটনা দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় থানা পুলিশ অভিযোগটি তদন্তের জন্য দুদকে পাঠায়। একইসঙ্গে অভিযুক্ত রফিক মাহমুদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে দুদক গত ৭ এপ্রিল সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ সহকারী পরিচালক জি এম আহসানুল কবীর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

দুদক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত রফিক মাহমুদের বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশে প্রতারণা, অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা অবৈধভাবে স্থানান্তর, হস্তান্তরপূর্বক উক্ত অর্থের প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মবৃত্ত করে এবং ব্যাংকের ১৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরােধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, রফিক মাহমুদ গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫৮টি এফডিআর খোলেন। এসব এফডিআর-এর অর্থের উৎস, গ্রাহকের পরিচিতি, প্রকৃত সুবিধাভােগী ইত্যাদি অনুসন্ধান না করে এবং গ্রাহকের চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাব খুলে সরাসরি তার পরিচিত আত্মীয়-স্বজনদের নামে এফডিআর খোলেন এবং তিনি নিজেই পরিচালনা করেন। ৫৮টি এফডিআর এর মধ্যে ৪৭টি এফডিআর নগদায়নের মাধ্যমে তিনি ৭ কোটি ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ টাকা তুলে নেন। এছাড়া অবশিষ্ট ১৭ কোটি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৬ টাকা তিনি পৃথক পে-অর্ডারের মধ্যমে ইউসিবি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর করেন।

দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত রফিক মাহমুদের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানাধীন জুবলী রোডের খালইস্ট এলাকায়। তার বাবার নাম আব্দুর রশীদ। তার এই অভিনব প্রতারণার সঙ্গে আর কেউ জড়িত রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে। মামলার তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত