আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপ বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন

| আপডেট :  ১১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭  | প্রকাশিত :  ১১ আগস্ট ২০২৪, ১০:৪৭


আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপ বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবদেক


দুষ্কৃতিকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ভাঙচুর চালানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও। লুটপাট হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির সব স্মৃতিচিহ্ন। আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র।

সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু ভবনের আশেপাশে ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। বাতাসে পোড়া গন্ধ। পুড়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি দেখতে উৎসুক মানুষের ভিড়।

গত বুধবার বিকাল তিনটার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, ব্যারিকেড দিয়ে মূল সড়ক থেকে ভেরে যাওয়ার পথ বন্ধ করে রেখেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সাধারণ মানুষ মানুষ পুড়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু ভবন দেখার জন্য ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের যেতে দিচ্ছেন না। নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর আইডি কার্ডের ছবি তুলে ভেতরে যাওয়ার সুযোগ দিলেন।

পরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের প্রবেশের চেষ্টা চালালে দেখা যায় বাঁশ দিয়ে পথ বন্ধ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে তারা বলেন, ভেতরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে। আমরা ভেতরে কাউকে এ্যালাউ করছি না। গেটে আমাদের যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারাও যাচ্ছেন না। শুধু আমাদের নির্দিষ্ট কয়েকজন ভেতরে কাজ করছেন। আমরা সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার পর উনারা চাইলে প্রবেশ করতে পারবেন।

এর কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর একটি টহল দল এসে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে যান। পরে তাদের কাছ থেকে অনুমতির পর ভেতরে প্রবেশ করতে দেন শিক্ষার্থীরা। ভেতরে প্রবেশ করে ডানদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, নিচের ও দোতলার প্রতিটি কক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র পুড়ে মেঝেতে ছাই-কয়লার স্তূপ হয়ে আছে। ভাঙচুর করা কাচ মেঝেতে পড়ে আছে। খসে পড়েছে ছাদের পলেস্তারা। কালো হয়ে আছে দেয়াল। সোমবার (৫ আগস্ট) এই ভবনে আগুন দেয়া হলেও পোড়া গন্ধ নাকে এসে লাগছে।

এই ভবনের পাশেই ভুতুড়ে দাঁড়িয়ে আছে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। বাড়িটির মিতলা ও দ্বিতীয় তলা একেবারে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে রূপ নিয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মেঝেতে পরে আছে ছাইয়ের স্তুপ আর কাচের টুকরো। পুড়ে যাওয়া পাখাগুলো ছাড়াই ধুমড়ে মুছড়ে ঝুলে আছে সিলিং ফ্যান। ভবনটির মূল সিঁড়িতে ভাঙা কাচের টুকরো আর ছাই পড়ে কালো হয়ে আছে।ভবনটির দ্বিতীয় তলায়ও একই অবস্থা। বামপাশের কক্ষগুলোতেও ধ্বংসযজ্ঞের ছাপ।

সিড়ির ডান দিকে থাকা কক্ষে আগুনে পোড়ানোর কোনো চিহ্ন নেই তবে জাদুঘরে কক্ষটিতে থাকা সমগ্র স্মৃতিচিহ্ন লুটপাট হয়ে গেছে। মেঝেতে পড়ে আছে কাঠের বাক্স আর কাঁচ। এর পাশের রুমেরও একই দশা। এই রুম লাগোয়া বাথরুমে কমোডেও ভাঙচুর চালিয়ে বাথটাবে রাখা হয়েছে। এসব কক্ষর দরজাগুলো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

ভবনটির পেছনের অংশ দিয়ে তৃতীয় তলায় উঠে দেখা যায়, এই অংশে আগুনের ক্ষতি কম। তবে দরজা জানালায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কক্ষগুলো যা ছিল তা লুট হয়ে গেছে। মেঝেতে পড়ে আছে শুধু কাচের টুকরা পড়ে আছে।

মূল বাড়ির পাশে থাকা রান্নাঘর, পৃথক দু’টি ছোট ঘরেও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তিনটি গাড়ি। মূল বাড়ির পেছনে একটি নতুন ভবন করে পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র ও সেমিনার কক্ষ তৈরি করা হয়েছিল। দেখা যায়, সেই ভবনের নিচলায়ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

এদিকে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। শোকের মাসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি করা হয়েছে সসেব বাঁশও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়ক ও বঙ্গবন্ধু ভবন পরিস্কারের কাজে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। এই ভবনকে ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিও জড়িত। আর যাতে কোনো ধরণের ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য আমরা এসেছি।

তারা জানান, গত মঙ্গলবার থেকে তারা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোড ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। ভবনের ভেতরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সংগ্রহ করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার অপেক্ষায় আছেন।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও সংলগ্ন এলাকায় উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা গেছে। আজিমপুর থেকে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর দেখতে এসেছিলেন সেলিম আহমেদ। তিনি বিবার্তাকে বলেন, জাতির পিতা এই বাসভবনে থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগের দিনগুলোতে দিকনির্দেশনা দিতেন। আজ সেই বাড়িটি পুড়িয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন ক্ষত তৈরি করা হলো। যারা এই ধ্বংসযজ্ঞে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।

প্রসঙ্গত, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ত্রী–পুত্র, পুত্রবধূসহ আত্মীয়-স্বজনদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ১৯৯৪ সালে ভবনটিকে একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তর করেন তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। এসময় বাড়িটি হত্যাকাণ্ডের সময় যে অবস্থায় ছিল অবিকল সেই অবস্থায় বাড়ির আসবাব, গুলি চিহ্নিত দেয়াল, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সব সংরক্ষণ করে বাড়িটিকে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

বিবার্তা/সোহেল/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত