‘আমার শ্বশুরবাড়ি কোথায় জানোস? পুইত্তা ফালামু’ ছাত্রীকে শিক্ষিকার হুমকি

| আপডেট :  ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৬:৩৭  | প্রকাশিত :  ৩১ আগস্ট ২০২২, ০৬:৩৭

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে ‘পুইত্তা ফালামু’ বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। হুমকির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সোমবার (২৯ আগস্ট) সকালে অডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার শাস্তিও দাবি করেছেন তারা।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষিকার নাম মাহবুবা সিদ্দিকা। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। এ ছাড়া তিনি খালেদা জিয়া হলের হাউজ টিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট (মঙ্গলবার) খালেদা জিয়া হলের সিট দিতে আবেদনকারী ছাত্রীদের সাক্ষাৎকার নেয় হল প্রশাসন। সেখানে হেনস্তার শিকার হন ওই শিক্ষার্থী। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ আগস্ট (বুধবার) ফের ওই ছাত্রীকে প্রভোস্ট কার্যালয়ে ডেকে হেনস্তা ও হুমকি দেন ওই শিক্ষিকা। এ সময় ওই শিক্ষিকা নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ‘তোমারে পুইত্তা ফালামু’ বলে হুমকি দেন। পরে শঙ্কিত হয়ে ছাত্র উপদেষ্টা ও প্রক্টর বরাবর নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী।

এদিকে, শনিবার হলের আবাসিক শিক্ষক হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাজমুল হুদাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করে হল প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নাহিদা আক্তার ও মেহেদী হাসান।

সোমবার হুমকির অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে অভিযুক্ত শিক্ষিকাকে বলতে শোনা গেছে, ‘আমি রোকেয়া হল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলাম। চিনো তুমি আমারে? আমি কত পাওয়ার চালাইছিলাম তুমি জানো? তোমার এলাকার মেয়র টিটু ভাইকে চিনো? বইল্লা ওইখানে তোমারে পুইত্তা ফালামু। আমার বাড়ি কোথায় জানোস? আমার শ্বশুরবাড়ি কোথায় জানোস? আমার সাথে ফাইজলামি না? এলাকায়ও টিকতে পারবা না।’

অডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শহীদুল হক নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওই রকম মনমানসিকতার গুরুজন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান করেন, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থার মান কেমন হবে?’

মতিউর রহমান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক সুলভ আচরণ হয়নি। তাহলে কী এবার শিক্ষক সুলভ আচরণ শেখার জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাবে?’

বিষয়টি নিয়ে সার্চ কমিটির সদস্য নাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমরা চিঠিটি হাতে পেয়েছি। যতদ্রুত সম্ভব বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন জমা দেবো।’

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা কখনও উচিত নয়। তারপরও কোনও শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকে তাহলে প্রশাসনের উচিত ঘটনার তদন্ত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অডিওটি আমি শুনিনি। এ ছাড়া অভিযোগের কোনও কপি বা অফিশিয়াল ডকুমেন্ট পাইনি। এটা অবশ্য ছাত্র উপদেষ্টারই দায়িত্ব। তবে যতটুকু শুনেছি, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা হলে গিয়ে শিক্ষিকা ও ছাত্রীর মাঝে বিষয়টি হয়তো মীমাংসা করেছেন।’

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত