‘আমার সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের জন্মকালীন যে আন্দোলন তাতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি’

| আপডেট :  ০৭ মে ২০২৪, ১০:২৮  | প্রকাশিত :  ০৭ মে ২০২৪, ১০:২৮


‘আমার সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের জন্মকালীন যে আন্দোলন তাতে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি’

বিবার্তা প্রতিবেদক


বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাখদুমা নার্গিস। জন্ম কলকাতায়, ১৯৪৫ সালে। বাবা ব্যারিস্টার আব্দুল গনি খান এবং মা সেকেন্দার জাহান বেগম। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তার রক্তে মিশে ছিল রাজনীতি। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের সময় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। ’৬৬, ’৬৯, ’৭০ পেরিয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিলেন সক্রিয় ভূমিকায়।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে চাকরি ছেড়ে দেন। ৩ মে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে পৌঁছান ভারতের আগরতলায়। বিজয় অর্জন পর্যন্ত শরণার্থী এবং আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করেন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সভা-সমাবেশ করতেন, অংশ নিতেন পার্টির গোপন বৈঠকে। বিজয়ের পর ৩০ ডিসেম্বর দেশে ফিরে দেশ পুনর্গঠন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদ-বাশিকপ সভাপতি হিসেবে, একইসাথে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্টের সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতিসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিবার্তা প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন নানা বিষয়ে। সাক্ষাৎকারটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

বিবার্তা : আপনার ছোটোবেলার গল্প শুনতে চাই।

ডা. মাখদুমা নার্গিস : আমার জন্ম কলকাতায় ১৯৪৫ সালে এবং আমার বাবা তখন কলকাতা পুলিশের অফিসার ছিলেন। খুব কম সংখ্যক বাঙালি তখন কলকাতা পুলিশে চাকরি পেত। বাবা খেলাধুলা ও পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন, তাই সরাসরি কলকাতা পুলিশে চাকরি পেয়েছিলেন। সাতচল্লিশে আমরা কলকাতাতেই ছিলাম। পঞ্চাশ সালের রায়টের সময় তখন বাবা লন্ডনে, কারণ তিনি আগেই চাকরি ছেড়ে দিয়ে লন্দনে চলে গিয়েছিলেন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য।

কিন্তু আমাদের পরিবার তখন কলকাতাতেই ছিল। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যখন চলছে তখন নানা চাইলেন না, আমরা আর কলকাতায় থাকি, তখন তিনি আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসলেন। আমার সেসময়ের কথা মনে নেই, কারণ তখন আমি খুব ছোট, কিন্তু সবার মুখে শুনেছি সেই দাঙ্গার সময় আমরা ঢাকায় আসি। এই হলো একদম ছোটবেলার গল্প।

আমার জন্মের সাথে একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা জড়িয়ে আছে।

বিবার্তা : সেই ঘটনাটা আমাদের বলুন।

ডা. মাখদুমা নার্গিস : আমি হলাম আমার বাবা-মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম। আমার আগে তিন বোন আছে, সবচেয়ে বড় ভাই। আমার জন্মের সময় আমার দাদি খুব আশায় ছিলেন এবার ছেলে হবে। আমাদের অরিজিনাল বাড়ি খুলনা, দাদি খুলনা থেকে কলকাতা চলে এলেন নাতির মুখ দেখার জন্য। কিন্তু নাতি না হয়ে নাতনি হওয়ায় উনি খুব দুঃখিত, ক্রুদ্ধ ও রাগান্বিত হলেন।

যদিও আমি আমার বাবা-মায়ের খুব প্রিয় ছিলাম, কিন্তু দাদি খুব অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন আমার জন্মে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতিফলন আরকি, আমার জন্মটা খুব আনন্দময় হয়নি।

বিবার্তা : ঢাকায় আসার পর কী হলো, কেমন ছিল সেসময়ের দিনগুলো?

ডা. মাখদুমা নার্গিস : ঢাকায় আসার পর আমরা কিছুদিন নারিন্দায় ছিলাম। নারিন্দা থেকে কিছুটা সামনে গেলেই তারাবাগ। সেখানে থাকতেন সুফিয়া কামাল। সুফিয়া কামালের সাথে আমার মা ও ফুপুর বেশ যোগাযোগ ছিল। তারা দুপুরবেলায় বস্তির মেয়েদের সেলাই ও বিশেষত লেখাপড়া শেখাতেন। দুপুরের অবসরে সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে আমার মা-ফুপুরা এই কাজটা করতেন। জাস্টিস আসিরের স্ত্রীসহ আরও অনেকেই ছিলেন এই কাজটাতে। তারা খুব যত্ন সহকারে বস্তির নারীদের পড়ালেখা ও সেলাই শেখাতেন, মেয়েরা তাদের বাচ্চা নিয়ে দুপুরে চলে আসতেন।

আমি তখন খুব ছোট, কিন্তু আমি সবটাই দেখতাম। সেই ছোটবেলায় সুফিয়া কামাল খালাম্মাকে দেখলে আমার এত ভালো লাগত যে সেই স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। এরপর আমরা লক্ষ্মীবাজার চলে আসি এবং বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি।

সেসময়ে স্কুলে আমরা প্রার্থনা সংগীত করতাম, আমাদের গানের শিক্ষক ছিল, এখন আর সেসব নেই। স্কুলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান শিক্ষক ছিল। আমাদের স্কুলের যিনি প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন তিনি হলেন লুতফুন্নাহার চৌধুরী, তিনি সাংবাদিক জহরুল হোসেনের স্ত্রী,

আমি এখনো তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। তিনি অত্যন্ত আধুনিক মনস্ক একজন মহিলা ছিলেন এবং সেভাবেই আমাদের গড়ে তুলেছেন। সরোজিনী, মার্গারেটসহ আরও শিক্ষিকারা ছিলেন, তারা সবাই ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ এবং উদার মনের, তারা আমাদের সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। এরপরে আরও প্রধান শিক্ষিকা এসেছেন স্কুলে, প্রত্যেকেই খুব উদার মনের ছিলেন এবং তাদের সংস্পর্শে আমাদের চিন্তা বিকশিত হয়েছিল।

বিবার্তা : কলেজজীবন কোথায় ছিল?

ডা. মাখদুমা নার্গিস : আমি ইডেন কলেজে পড়েছি। তখন ইডেন কলেজ ছিল বকশিবাজারে, পরবর্তীতে আজিমপুরে আসে। কিন্তু আমাওরা বকশিবাজারেই পড়েছি। যখন ইডেন কলেজে ভর্তি হই, তখন মতিয়া চৌধুরী বিএসসিতে পড়েন, আর আমরা আইএসসিতে পড়ি।

মতিয়া আপা আমার বড় বোনের সহপাঠী ছিলেন। তিনি ভিপি নির্বাচনে দাঁড়ালেন। আমরা তখন রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু বড় বোনের সহপাঠীর পিছনে পিছনে মিছিলে যেতাম। অন্যরকম একটা উত্তেজনা। তারপর মতিয়া আপার সংস্পর্শে আসলে কী হয় বোঝাই যায়, যেহেতু উনি অগ্নিকন্যা।

তারপর মতিয়া আপার সংস্পর্শে এসে আমি অনেক ইনফ্লুয়েন্সড হলাম। এরপর পাশ করে ঢাকা মেডীকেল কলেজে ভর্তি হলাম। ঢাকা মেডিকেল কলেজে আমার প্রথম যেদিন ক্লাস ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর, সেদিন হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে মইছিল ছিল এবং সেই মিছিলে গুলি চালানো হয়। একজন মারা যায় এবং নিহতের লাশ এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রাখা হয়। প্রথম দিন ক্লাস হবে। আমরা মহা উৎসাহী ছিলাম। কিন্তু ক্লাস হলো না। কারণ ছাত্ররা ধর্মঘট ডেকেছিল।

সেদিন খুব মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলাম। কিন্তু আমার এখন ভাবলে বেশ হাসি পায় যে এরপর আমি এত বেশি মুভমেন্ট আর মিছিলে জড়িয়ে পড়েছিলাম।
 
বিবার্তা :  রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠলেন কবে থেকে?

ডা. মাখদুমা নার্গিস : মতিয়া আপার সাথে তো আগে থেকেই কানেক্টেড ছিলাম আর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হলাম। মূলত ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর আমি সত্যিকার অর্থে রাজনীতিটা শুরু করলাম। তখনই তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যোগাযোগ এবং এর সেলের সাথে যুক্ত হলাম এবং আস্তে আস্তে সম্পৃক্ততাটা বাড়ল।

বিবার্তা : একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগে আপনার রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে বলুন।

ডা. মাখদুমা নার্গিস : ১৯ জানুয়ারি আসাদ যখন গুলি খেল তখন আমি একদম মেডিকেল কলেজের সামনে। আমরা আসাদকে ট্রলি ঠেলে ওটিতে নিয়ে গেলাম। কিন্তু এর মধ্যেই সে মারা গেল। এরপর যে বিক্ষোভ হলো, সবকিছুতেই উপস্থিত ছিলাম। ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের সময় আমরা প্রতিদিন হেঁটে পল্টন চলে যেতাম। আমাদের মনেই হতো না আমরা হেঁটে অনেক পথ গিয়েছি।

তবে, আমি মনে করি এটা আমার সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশের জন্মকালীন যে আন্দোলন তাতে সবসময় অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। আমার অংশগ্রহণটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু আমি যে অংশ নিতে পেরেছি এটা আমার সৌভাগ্য।

বিবার্তা : মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেন, সেই সময়ের কথা বলুন।

ডা. মাখদুমা নার্গিস : বঙ্গবন্ধু যখন ৭ মার্চের ভাষণ দেন তখন আমি রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলাম এবং আমার সামনেই ছিলেন খালাম্মা মানে সুফিয়া কামাল। ততদিনে খালাম্মার সাথে আমার খুব সুসম্পর্ক। ৭ মার্চ আমি আর খালাম্মা একসাথে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু যখন ভাষণের পর জয় বাংলা বললেন, খালাম্মাও উঠে দাঁড়িয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে বললেন, সাবাশ বাপের বেটা, এটা শোনার জন্যই তো এসেছি। আর আমার মনটাও ভরে গেল।

৩ মে আমি, ফওজিয়া (বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. ফওজিয়া মোসলেম) ও ফরিদা (বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আখতার জাহান) আগরতলায় যাই। আমি বিবি হোস্টেলে উঠি। তিনদিন সেখানে ছিলাম। এরপর ক্রাফটস হোস্টেলে যাই। ওখানেই রোগী দেখতাম। গেরিলা যোদ্ধারা যেতেন। আগরতলার দিনলিপি তুলে ধরে ডা. রত্না বলেন, ক্যাম্পের অন্যদের কাছে মেয়েকে রেখে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করি। আমার মেয়েকে সবাই দেখত। কমরেডদের কোলে কোলে থাকত। এজন্য আমি স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারতাম। আমি ডাক্তার তাই আগরতলা পৌঁছেই চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পেলাম। আমরা ওষুধ সংগ্রহ করতাম। জিবি হাসপাতাল আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।

বিবার্তা : ২৫ মার্চের অপারেশেন সার্চলাইটের নামে যে গণহত্যা চালাল পাকিস্তানি হানাদাররা সেসময়ের কথা বলুন, আপনি কোথায় ছিলেন?

ডা. মাখদুমা নার্গিস : ২৫ মার্চ রাতের কথা বলি, সেসময় আমার হাজবেন্ডের বাড়ি ছিল নয়াপল্টন পুলিশ ফাঁড়ির সাথেই। আমরা সেখানে ছিলাম। সেই রাতে ভয়াবহ ম্যাসাকার হলো। ভয়াবহ বিস্ফোরণ, বড় বড় ট্যাংক গেল।

২৭ তারিখ কারফিউ ব্রেক হওয়ার পর আমরা ওখান থেকে চলে গেলাম। আমি চলে গেলাম আমার মায়ের বাড়িতে। এখানে একটা কথা বলা দরকার, সেসময় আমি তৎকালীন পাকিস্তানি এয়ারফোর্সে সিভিল এন্ড মেরিন অফিসার হিসেবে কাজ করতাম। বঙ্গবন্ধু ১ মার্চ যখন অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলেন। তারপর কিন্তু আমি আর ক্যান্টনমেন্টে যাইনি কাজ করতে।

সেজন্য সেসময় দেশে থাকাটা আমার জন্য বিপদজনক ছিল। সেজন্য আমি দেশে যতদিন ছিলাম জায়গা বদল করে ছিলাম। আর বাইরে গেলেই বোরকা পরে থাকতাম যাতে আমাকে চেনা না যায়।

বিবার্তা : বর্তমান সময়ের নারী আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি জানতে চাই।

ডা. মাখদুমা নার্গিস : বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এখন মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। আগের কথা যদি চিন্তা করি, লেখাপড়া কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক নির্ভরতা সবকিছুতেই মেয়েরা এগিয়েছে।

কিন্তু আমি বলব, রাষ্ট্র যতটা এগিয়েছে, সংবিধান আমাদের যে অধিকার দিয়েছে, আমাদের পরিবারগুলো ও সমাজ ততটা আগায়নি। পরিবার ও সমাজের চিন্তাচেতনার জায়গাটা খুব বেশি আগায়নি। সংবিধানের ২৮নং ধারায় স্পষ্ট বলা আছে নারী পুরুষের সমান অধিকার। সংবিধানে নারী অধিকারের নানা বিষয় আছে কিন্তু আইনগুলো সেভাবে পরিবর্তিত হয়নি।

এর কারণ বলে আমি মনে করি, আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে যতটা এগিয়েছি, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে ততটা এগিয়ে যেতে পারিনি। আমরা যখন মেডিকেল কলেজে পড়তাম একসঙ্গে ২০টা মেয়ে ভর্তি হলো। আমাদের সময়েই একসঙ্গে এতগুলো মেয়ে ভর্তি হলো। আমরা একজনও ছিলাম না, হিজাব পরা। এখন মেডিকেল কলেজ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে দেখেন হিজাবের ছড়াছড়ি। আমরা প্রথম থেকেই মহিলা পরিষদ পর্দাপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আর আজকে এসে আমরা পর্দাকে আলিঙ্গন করছি। নারী সমাজ স্বাধীন হওয়ার জন্য নিজেই এখনো মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি।

আমাদের সামাজিক মূল্যবোধগুলোকে জাগ্রত করতে হবে। মানুষের মধ্যে মানুষের জন্য ভালোবাসা জাগ্রত করতে হবে। মানুষকে মূল্যায়ন করতে হবে। তাহলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো।

বিবার্তা/এসবি/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত