আয়ানের মৃত্যু: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের শুনানি আজ
রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের ওপর আজ (২৯ জানুয়ারি) দিন ধার্য রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী এবি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য রবিবার (২৮ জানুয়ারি) দিন ঠিক করেন আদালত। নির্ধারিত দিনে প্রতিবেদন দাখিলের প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি জানিয়ে শুনানি ও আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করেন আদালত। এর আগে চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলায় আয়ানের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করার পর এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর আয়ান নামে পাঁচ বছরের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা কীভাবে ও কোন কারণে ঘটেছে তা যথাযথ অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলা পেলে জড়িত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলেছেন হাইকোর্ট। শিশুটির বাবা শামীম আহমেদের করা রিট আবেদনের প্রাথমিকভাবে শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওইদিন রিটের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া (আরজু)। এসময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এরও আগে জনস্বার্থে স্বপ্রণোদিত হয়ে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করা হয়। ‘লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরল না আয়ান: খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু’ শিরোনামে ৮ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে। পরে রিটে আবেদনকারী হিসেবে যুক্ত হন শিশুটির বাবা শামীম আহমেদ। পাশাপাশি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল ও নতুন রোগী ভর্তি না করাতে নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। পরে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন। রিটে এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত চিকিৎসকদের সনদ বাতিল চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হাসপাতালেরও নিবন্ধন বাতিলে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আদেশের পর আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ বলেন, গত ১৫ বছরে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে কতজন মারা গেছেন, সে বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার পর পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করে সাতদিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ‘চিকিৎসায় গুরুতর অবহেলায়’ আয়ানের মৃত্যুতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিশুটির পরিবারকে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন। সারাদেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন কতগুলো হাসপাতাল রয়েছে, তার তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে (স্বাস্থ্যসেবা) নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। টানা সাতদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায় আয়ানের পরিবার। গত ৩১ ডিসেম্বর আনন্দ নিয়েই রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অনুমতি ছাড়াই ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সুন্নতে খতনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। স্বজনরা জানান, আয়ানের সুন্নতে খতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন। আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ তখন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক আমাদের ডেকে বলেন যে দুনিয়াতে আয়ান আর নেই। তারা খুব তড়িঘড়ি করে আমাদের বের করে দেন।’ আয়ানের পরিবারের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময় এমন ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এমনকি প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরানো হয় প্রায় ছয় লাখ টাকা। অভিযোগ এড়িয়ে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের ওপর। গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের নন-মেডিকেল ডিউটি ম্যানেজার সানাউল্লাহ কবির বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবস্থপানাসহ পুরো প্রক্রিয়াতেই দুই প্রতিষ্ঠান আলাদা। এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন বা লাইসেন্স ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। গত ১৪ জানুয়ারি অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মইনুল আহসানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বিবার্তা/মাসুম
আয়ানের মৃত্যু: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের শুনানি আজ
আইন আদালত
বিবার্তা প্রতিবেদক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত