ইউপিতে গিয়ে নিয়মিত অফিস করতে হবে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের

| আপডেট :  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১০:০৭  | প্রকাশিত :  ১১ এপ্রিল ২০২২, ১০:০৭

তৃণমূল পর্যায়ে জনসাধারণের সেবা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে সারা দেশে ২ হাজার ২০০টি আধুনিক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স করেছে সরকার। পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নেই এমন ভবন হবে। এ ভবনেই ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিসের’ ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে সাতটি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় পর্যায়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নিয়মিত অফিস করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়ে আছে।

তবে সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানছেন না সাতটি মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখনো পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ কমপ্লেক্সেই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছাড়া অন্য সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিস করছেন না। এ অবস্থায় সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে এসব মন্ত্রণালয়ের কাজ নিশ্চিত করতে চায়। সেজন্য ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) কাছে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে কক্ষ রয়েছে। সরকার থেকে হস্তান্তরিত কর্মকর্তারা সরকারি প্রকল্প, স্কিম ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে। যদি এসব কর্মকর্তা বা কর্মচারীর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন তাহলে পরিষদ তদন্ত করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে শাস্তির সুপারিশ করতে পারবে।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ধারা ৬৩ অনুযায়ী এ কার্যক্রম চলবে বলে সম্প্রতি দেওয়া অফিস আদেশে এসব তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এবিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ে সাতটি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরাসরি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাই ওইসব কর্মকর্তা ইউনিয়ন কার্যালয়ে বসবেন। সরকার চেয়েছে সবাইকে এক ছাদের নিচে আনতে। সেই লক্ষ্যে সরকারপ্রধানের নির্দেশে এভাবেই ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে দেশের সব ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অফিস করতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পরিদর্শন করে দেখেছি সব ইউনিয়নে তারা বসেন না। মন্ত্রণালয় থেকে বারবার তাগাদা দিচ্ছি। ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় সব সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। যদি তাদের কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা থাকে; তবে পরিষদ তা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাতে পারবে। এর মানে এই নয় যে, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ হস্তান্তরিত কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যে যার মতো করে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তৃণমূল পর্যায়ে জনসাধারণের সেবা সহজীকরণের জন্য ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ চালু করেছে সরকার। আর এ কাজটি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। সারা দেশে ইতিমধ্যে প্রায় ২ হাজার ২০০ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও দেড় হাজারের মতো কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন রয়েছে। এসব কমপ্লেক্স করতে খরচ কমবেশি কোটি টাকা। এ কমপ্লেক্সে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষ ছাড়াও ১০ থেকে ১১টি কক্ষ রয়েছে। এসব কক্ষেই সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর অফিস করার কথা রয়েছে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ ইউপি কমপ্লেক্সে এখনো অন্য সংস্থার অফিস হয়নি। সেখানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বসছেন না। তাই গত ১৪ মার্চ স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান সব ডিসিকে চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি ছক আকারে সাতটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা সংস্থাগুলোর কোন কোন কর্মকর্তা অফিস করছেন এ বিষয়ে তথ্য দিতে বলেন।

নিয়ম অনুযায়ী এ কমপ্লেক্সে স্থানীয় সরকার বিভাগের স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের টিউবওয়েল মেকানিক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তরের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক ও পরিবার কল্যাণ সহকারী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেটেরিনারি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনসার ভিডিপি অধিদপ্তরের ইউনিয়ন দলনেতার অফিস করার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ধারা ৬৩ এ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিষদে হস্তান্তরে সরকারের ক্ষমতা ও অন্যান্য বিষয়ে বলা আছে। সেখানে ৬৩ এর উপধারা (১) এ বলা হয়েছে, ‘নির্ধারিত শর্তসাপেক্ষে পরিষদের সাধারণ বা বিশেষ কার্য সম্পাদনের লক্ষ্যে সরকার তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী এবং তাহাদের কার্যাবলি নির্ধারিত সময়ের জন্য পরিষদে হস্তান্তর করিতে পারিবে, উক্তরূপে হস্তান্তরিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণ সংশ্লিষ্ট পরিষদের ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করিবেন। (২) উপ-ধারা (১) এর অধীন হস্তান্তরিত কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন মনে করিলে পরিষদ এ বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করিবে। (৩) উপ-ধারা (১) এর অধীন পরিষদে হস্তান্তরিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণ তাহাদের ওপর অর্পিত সাধারণ দায়িত্ব ছাড়াও পরিষদ কর্তৃক, সময়ে সময়ে, নির্ধারিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করিবেন। (৪) উপ-ধারা (১) এর অধীন হস্তান্তরিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণ পরিষদের নিকট এই আইন বা বিধি অনুযায়ী স্থানান্তরিত নহে উক্তরূপ সরকারি প্রকল্প, স্কিম, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করিবেন।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব জেসমীন প্রধান বলেন, ‘দেশে মোট ৪ হাজার ৫৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। এগুলোকে তিনটি ধাপে ভাগ করে আধুনিক ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই ধাপে প্রায় তিন হাজারের মতো নির্মিত হয়েছে। এ কমপ্লেক্সগুলো করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানে এক ‘ছাতার নিচে’ সব সেবা নিশ্চিত করা হবে। সেখানে আগের নির্দেশনা অনুযায়ী সাতটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে একাধিক সংস্থার সংশ্লিষ্টদের অফিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সেখানে নিয়মিত অফিস করার কথা রয়েছে। আমরা এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যই জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি দিয়েছি।’

নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক আকন্দ বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে মোট ১৫টি কক্ষ রয়েছে। যেখানে চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, হিসাব সহকারী ও উদ্যোক্তা, গ্রাম আদালত ও একটি হল রুম রয়েছে। সব মিলিয়ে তিন-চারটি রুমের বেশি ব্যবহার করা হয় না। বাকি রুমগুলো অব্যবহৃত আছে। এখনো এসব রুমে সরকারের নির্ধারিত কর্মকর্তারা অফিস করেন না।’

বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘মানুষ উপজেলা পর্যায়ে না গিয়ে ইউনিয়নে সেবাটা পাবে। তারা বসলে তো অনেক ভালো হতো। কিন্তু তারা বসেন না। বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদে বসেন না। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত মানছেন না। আমরা চাই তারা দ্রুত সরকারের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে অফিসে আসবেন।’

তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কর্মকর্তারা না বসলে ইউনিয়ন পরিষদ তা প্রতিবেদন আকারে জানানোর কথা। সেই অনুযায়ী চেয়ারম্যানরা চিঠি দিলেও কোনো কাজ হয় না।’

সূত্র-দেশ রূপান্তর

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত