ইভিএমে তোমার আঙ্গুল আমি টিপ দেবো, ওটাই সুষ্ঠু ভোট: আ.লীগ নেতা

| আপডেট :  ০৩ জুন ২০২২, ০৯:৫৪  | প্রকাশিত :  ০৩ জুন ২০২২, ০৯:৫৪

ইভিএম না থাকলে রাতেই ভোট নিয়ে ফেলতেন- এমন বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী। গত ২৮ মে নির্বাচনী প্রচারণায় দেওয়া ওই বেফাঁস বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর তাকে শোকজ করে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে তার ওই বক্তব্যের বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশন তদন্ত করে বক্তব্যের সত্যতাও পেয়েছে। এবার আরেক বক্তব্য দিয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন ওই চেয়ারম্যান প্রার্থী।

এদিকে গত ১ জুন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাতেও ভাইরাল বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা হয়। এসময় প্রার্থীদের বেফাঁস কথাবার্তার বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মমিনুর রহমান এবং জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রাশিদুল হক প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি দেন। এসময় তারা আচরণবিধি মানার বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করেন।

কিন্তু তারপরেও দমে যাননি চাম্বল ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুল হক। ডিসি, এসপির কঠোর সতর্কবাণীর পরদিন (২ জুন) নিজ এলাকায় আরেক নির্বাচনী সমাবেশে আবারও বেফাঁস বক্তব্য দেন মুজিবুল হক। তার দেওয়া ৫৪ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে তিনি বলেন, আমরা বললে ভোট সুষ্ঠু হবে, না বললে অসুষ্ঠু। যে রকম দেই, সেই রকম। ইভিএম মেশিনে তোমার আঙ্গুল আমি টিপ দিয়ে দেবো, ওটাকেই সুষ্ঠু ভোট বলে।

গত ২ জুন রাতে নির্বাচনী সভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘‘এন্ডে সুষ্ঠ গরিদেও আঁরা, অসুষ্ঠ গরিদেও আঁরা। আঁরা হইলি সুষ্ঠ, আঁরা নঁ হইলি অসুষ্ঠ। যিক্কাত্ দি, ইক্কা। পৌরসভা ভোডর সমত, আঁরে উগ্গা বিএনপি নেতায় ফোন দিইয়্যি। হদ্দে- ‘আরেঁ এইল্যা গাইল দের।’ আঁই হইদ্দি, ইয়্যিন লই কিল্লায় মাতঅর, এক্কানা নঁ মাতছুনা। হয়দে, ‘কেঁয়া কমরু মেয়র অইবু, সুষ্ঠু ভোড অইবু।’ আঁই হইদ্দি, সুষ্ঠ ভোড অইবু, তোয়ারে হনঅ লেহা দিইয়্যিনি সরগারে। হয়দে ‘কেয়া ইভিএমত কেনে অইবু’। আঁই হইর, ইভিএমত কেনে অইবু তুঁই নঁ জানঅ। হয়দে ‘না’। আঁই হইদ্দি, ইবিএমত তোয়ার য়োঁল (আঙ্গুল), আঁই টিপ মাইরগুম, ইবা অইলদি সুষ্ঠ ভোড। আঁরারে ইয়্যিন কিয়ে পাইয়্যেদে, আঁরাত্তে নৌকাঘান লারদে এনা। আর মুসলমানি হাম অইলদি, একজনে নোয়াজ (নামাজ) পড়াইবু, পাঁচ আজারে পিচদি নোয়াজ পড়িবু। এতেল্লায় মাইনষুদ্দে ভোড দনঅর দরহার আছিল।’’

(এখানে সুষ্ঠু করবো আমরা, অসুষ্ঠুও করবো আমরা। আমরা বললে সুষ্ঠু, আমরা না বললে অসুষ্ঠু। যে রকম দেই, সেই রকম। পৌরসভা ভোটের সময় আমাকে এক বিএনপি নেতা ফোন করে বলছিলেন,‘ আমাকে গালি দেওয়া হচ্ছে’। আমি ওই বিএনপি নেতাকে বলছিলাম, এসব নিয়ে কেন কথা বলছেন? একটু নীরব থাকেন। তখন উনি বলেন, ‘কেন, কমরু (স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির কামরুল ইসলাম হোসাইনি) হবে, সুষ্ঠ ভোট হবে।’ আমি তাকে বলছিলাম, ‘সুষ্ঠ ভোট হবে, একথা সরকার আপনাকে কি লিখে দিয়েছে?’ তিনি বলেন, ‘ইভিএমমে কীভাবে (জোর করে ভোট নেওয়া) হবে?’ আমি বলেছিলাম, ইভিএমে কীভাবে হবে আপনি জানেন না? উনি জবাব দেন ‘না’। তখন আমি বলছিলাম, ইভিএম মেশিনে তোমার আঙ্গুল আমি টিপ দিয়ে দেবো। ওটাকেই সুষ্ঠু ভোট বলে। আমাদের এত কিছু কী প্রয়োজন! আমাদের শুধু নৌকা প্রতীকটাই প্রয়োজন। আমাদের মুসলমানদের কাজ হচ্ছে, একজনে নামাজ পড়াবে, তার পেছনে আরও পাঁচ হাজার মানুষ নামাজ পড়বে। এজন্যই তখন মানুষের ভোট দেওয়ার দরকার ছিল।)

এর আগে গত ২৮ মে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থি বক্তব্যের সত্যতা পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই বক্তব্যে চাম্বল ইউনিয়নে সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা সৃষ্টি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা। গত ১ জুন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন রিটার্নিং অফিসার রকর চাকমা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হকের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দিয়েছি। কমিশন যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থি একটি বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরী প্রকৃতপক্ষে তার নিজের জবানিতে নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থি বক্তব্য দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়। এতে ভোটার ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ সর্ম্পকে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিও পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চাম্বল ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার রকর চাকমা শুক্রবার (৩ জুন) বিকেলে বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হকের আরেকটি ভিডিও আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

তবে এ বিষয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুল হক চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত