ইসরায়েলকে সহায়তা করায় জর্ডানে বিক্ষোভ

| আপডেট :  ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫  | প্রকাশিত :  ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:১৫


ইসরায়েলকে সহায়তা করায় জর্ডানে বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ইরান থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ৩০০টির বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করা হয় গত শনিবার (১৩ এপ্রিল)৷ কিন্তু সেগুলো যেন ইসরায়েল পর্যন্ত না পৌঁছে, সেই চেষ্টা করেছে জর্ডান৷ আত্মরক্ষার জন্য এটি করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশটির সরকার৷ ‘কারণ এগুলো আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল’, বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ইরানের হামলা জর্ডান প্রতিহত করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন দেশটির জনগণ। শত শত মানুষ রাস্তায় এসে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।

রবিবার ভোর রাতে সরাসরি ইসরায়েলের ওপর হামলা শুরু করে ইরান। নজিরবিহীন এ হামলায় ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তিন শতাধিক ড্রোন ও রকেট নিক্ষেপ করেছে ইরান। হামলা হয়েছে ইরাক ও ইয়েমেন থেকেও। জেরুজালেম ও তেলআবিবসহ পুরো ইসরায়েলজুড়ে বেজেছে বিমান হামলার সাইরেন।

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয় তারা ৯৯ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জর্ডান।

আত্মরক্ষার জন্য এটি করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জর্ডান সরকার। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, এগুলো আমাদের জনগণ ও জনবহুল এলাকার জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল।

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা জর্ডানের নাগরিকেরা তাদের সরকারের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন।

মারিয়াম নামে আম্মানের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, জর্ডানে ইরানের জনপ্রিয়তা নেই৷কিন্তু আমি ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র জর্ডানের বাধা দেয়া ও অনিচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া প্রত্যাখ্যান করি।

হুসেইন নামে দেশটির একজন রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, জর্ডান যেভাবে ইসরায়েলকে রক্ষা করেছে তাতে আমি খুবই বিরক্ত।

বিপদের আশঙ্কা থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, এখানকার অনেকেই এটা মেনে নিচ্ছে না। আমরা ইরানকে সমর্থন করি না এবং গাজায় এখন যা ঘটছে, তার পেছনে ইরানের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করি। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এমন যেকোনো পদক্ষেপের সঙ্গে আমরা আছি।

জর্ডানের রানিসহ প্রতি পাঁচজনের একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত।

তবে সামরিক বিশ্লেষক মাহমুদ রিদাসাদ বলেন, ঘটনাটিকে কখনো ইসরায়েলকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে তেমনটা বলা যাবে না, বরং জর্ডানের সার্বভৌমত্ব এবং আকাশসীমা রক্ষার জন্য করা হয়েছে। কারণ, ড্রোন বা মিসাইল কোথায় পড়বে তা জানা যায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে ইরানের হামলা ঠেকাতে জর্ডান সহায়তা করেছে বলে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ সম্পর্কে রিদাসাদ বলেন, এটা ইসরায়েলের প্রোপাগান্ডা ছাড়া কিছু নয়।

ব্রাসেলসভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশ্লেষক তাহানি মুস্তফা বলেন, সপ্তাহান্তের ঘটনা নিয়ে জর্ডানের নাগরিকেরা বিভক্ত৷ কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে জর্ডানের অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে মানুষ বিস্তারিত জানে না, কারণ এসব বিষয় নিয়ে এখানে বেশি লেখা হয় না।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও জর্ডানের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু এক্ষেত্রে জর্ডানের সংসদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে সমালোচনা রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য, সামরিক যান ও প্লেন বাধা ছাড়াই জর্ডানে ঢুকতে ও ঘুরে বেড়াতে পারবে। গাজা নিয়ে আম্মানে বিক্ষোভ শুরুর পর অনেকে জর্ডান থেকে মার্কিনিদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলতে শুরু করেন বলে জানান তাহানি মুস্তফা।

গাজায় হামলার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আম্মানে ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়ে কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন৷ তারা ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও জর্ডানের মধ্যে সই হওয়া শান্তি চুক্তি বাতিলেরও আহ্বান জানান।

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত