ইসরায়েলি হামলায় আল শিফা হাসপাতালে ২১ রোগীর মৃত্যু: ডব্লিউএইচও

| আপডেট :  ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৮  | প্রকাশিত :  ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৮


ইসরায়েলি হামলায় আল শিফা হাসপাতালে ২১ রোগীর মৃত্যু: ডব্লিউএইচও

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বাড়েই চলেছে। হামলায় গত ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত উত্তর গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে ২১ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রোগীদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, রবিবার (৩১ মার্চ) গাজার আল-আকসা হাসপাতালে হামলার বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দল প্রত্যক্ষ করেছে। দলটিকে গাজার উত্তরে প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন করতে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। ১৮ মার্চ থেকে উত্তর গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে ২১ রোগী মারা গেছে। গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালটিতে বর্তমানে প্রতি ১৫ জনের জন্য মাত্র এক বোতল পানি রয়েছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজার আল-শিফা হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এক্সে দেয়া পোস্টে আল-শিফা হাসপাতালে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন ডব্লিউএইচও প্রধান।

তিনি বলেছেন, হাসপাতালের বিধ্বস্ত ভবনের মধ্যে এখনও ১০৭ জন রোগী আছেন, যাদের অবস্থা খুবই করুণ। তাদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা। এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ থেকে শুরু করে কোনও রকম পথ্য বা অন্যান্য সামগ্রিরও অভাব রয়েছে।

হাসপাতালে গুরুতর ২৮ রোগী ও ৪ শিশু রয়েছে দাবি করে টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস আরো জানান, তাদের জন্য ডায়াপার, ইউরিন ব্যাগ এমনকি ক্ষতস্থান পরিষ্কারের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও নেই।

পানির অভাব বিশেষভাবে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি জানান, গতকাল শনিবার পর্যন্ত প্রতি ১৫ জনের জন্য শুধু একটি পানির বোতল অবশিষ্ট ছিল।

এছাড়া খাবারের পরিমাণও সীমিত যা ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের জন্য জীবনের হুমকিস্বরূপ বলেও উল্লেখ করেছেন ডব্লিউএইচও প্রধান। হাসপাতালে অবিলম্বে ত্রাণ সতায়তা পাঠাতে মানবিক কর্মীদের সেখানে প্রবেশে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাসপাতালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে, তাদের একটি বিমান “দেইর আল-বালাহ এলাকায় আল-আকসা হাসপাতালের উঠানে অবস্থিত একটি অপারেশনাল ইসলামিক জিহাদ কমান্ড সেন্টার এবং সন্ত্রাসীদের উপর হামলা চালায়। সুনির্দিষ্ট হামলার পরে, আল-আকসা হাসপাতাল ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং এর কার্যকারিতা প্রভাবিত হয়নি।

এদিকে ইসরায়েলি হামলায় ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের কমান্ডার ইসমাইল আলী আল-জিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে হিজবুল্লাহ।
অপরদিকে শিগগির নতুন দফায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হবে এমন খবর অস্বীকার করেছেন হামাসের ওসামা হামদান।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরেই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরায়েল। গাজার উত্তর, দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চলে কোনো স্থানই ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে রেহায় পায়নি।

পুরো গাজা যেন এখন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সেখানকার অধিকাংশ মসজিদ, বাড়ি-ঘর এবং ভবনই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গত পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আগ্রাসনে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭৮২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৭৫ হাজার ২৯৮ জন।

এদিকে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তি ও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী তেল-আবিবে বিক্ষোভ করেছে ইসরায়েলিরা। তবে এই বিক্ষোভ থেকে ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ইসরায়েল।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতাল থেকে সোমবার সেনা প্রত্যাহার করেছে ইসরায়েল। তবে দুই সপ্তাহ ধরে চলা ধ্বংসযজ্ঞে হাসপাতালটির কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ধ্বংসস্তূপের চারপাশে মৃতদেহ ছড়িয়ে আছে বলে জানা গেছে।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত