একুশের প্রস্তুতি: রঙিন আলপনায় সেজেছে শহিদ মিনার

| আপডেট :  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৭  | প্রকাশিত :  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৭


একুশের প্রস্তুতি: রঙিন আলপনায় সেজেছে শহিদ মিনার

বিবার্তা প্রতিবেদক


অপেক্ষা আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আসছে একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পূর্ণ হবে এদিন। একুশে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহর থেকে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবে পুরো জাতি।

মহান ভাষা শহিদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রং-তুলির আঁচড়ে নান্দনিক সাজে সাজানো হয়েছে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার। মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার আদায় করতে গিয়ে যারা রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত স্মৃতির মিনার। এরই মধ্যে মূল বেদিতে আলপনা আঁকাসহ শেষ হয়েছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। শহিদ মিনারের পাঁচটি স্তম্ভ এবং বেদি ধুয়ে মুছে রঙ করা হয়েছে। আশেপাশের দেয়ালেও লেগেছে রঙ। এর ওপর আলপনা করছেন শিল্পীরা। একইসঙ্গে লেখা হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান এবং কবিতার বিশেষ পঙ্‌ক্তি।

কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের চৌহদ্দীতে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সীমানা প্রাচীর। শহিদ মিনারের পূর্ব দিকে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। শহিদ মিনারে লাগানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দন লাল গোলাকার বৃত্ত। নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। একুশে ফেব্রুয়ারির কদিন আগে থেকেই শহিদ মিনার প্রাঙ্গণের পরিবেশ বদলে যায়। চারপাশে শুধু নিরাপত্তা আর সাজসজ্জার কাজ।

শহিদ মিনারের এই সাজসজ্জার কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কেউ আলপনা আঁকছেন, কেউ দেয়ালিকা, আর কেউবা বিভিন্ন আঁকাআঁকিতে সাজিয়ে তুলছেন আশেপাশের রাস্তাগুলো।

২০ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার দুপুরে শহিদ মিনার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। দিবাগত রাত থেকেই শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে ভিড় করবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহিদ মিনারের মূল বেদির সামনে আলপনা এঁকেছেন চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। সেখানে শেষ মুহূর্তের আঁচড় দিচ্ছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। শহিদ মিনারের উত্তর পাশের দেয়ালের প্রতিটি ব্লকে লেখা হয়েছে বিভিন্ন লেখকের কবিতা ও উক্তি।

দেয়ালে লেখা হয়েছে কবি জসীম উদ্দীনের কবিতার অংশ- ‘এ ভাষারি মান রাখিতে/ হয় যদিবা জীবন দিতে/চার কোটি ভাই রক্ত দিয়ে/ ফুরাবে এর মনের আশা। ’

লেখা হয়েছে মীর মশাররফ হোসেনের উক্তি- ‘মাতৃভাষায় যাহার শ্রদ্ধা নাই, সে মানুষ নহে। ‘  আবুল ফজলের ‘একুশ মানে মাথা নত না করা। ‘

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতার অংশ- ‘মাগো ওরা বলে/ সবার কথা কেড়ে নেবে/ তোমার কোলে শুয়ে/ গল্প শুনতে দেবে না/ বলো মা তাই কি হয়?‘

এর পাশেই আঁকা হয়েছে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়ের চিত্র। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানরত আন্দোলনকারীদের প্রতিচ্ছবি। ‘উর্দু নয় বাংলা’, ‘অ আ ক খ’ প্ল্যাকার্ড হাতে মিছিলে গলা ফাটানো তরুণ-তরুণীদের ছবি, মৃত কিশোরের লাশ কোলে মায়ের চিত্র।  

রাস্তার অন্য পাশের দেয়ালে লাল রঙে লেখা হয়েছে জাতীয় সংগীতের প্রথম লাইন ‘আমার সোনার বাংলা/আমি তোমায় ভালোবাসি।’ সাথে টেপা পুতুলের আদলে ঘোড়া, মাছ, পাখি, ময়ূর খরগোশ, নৌকাসহ বাংলার নানা চিত্র আঁকা হয়েছে।

তবে পুরো দেয়ালচিত্রের কাজ এখনো শেষ হয়নি। শেষ মুহূর্তে তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা।

আঁকাআঁকিতে ব্যস্ত একজন শিক্ষার্থী জানান, চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় প্রাণ খুলে এখানে কাজ করতে আসেন। মাতৃভাষা দিবসে ভাষার নানা অনুষঙ্গ দিয়ে প্রাঙ্গণটি রঙিন করার চেষ্টা করছি আমরা। 

আঁকাআঁকির ফাঁকে চারুকলা অনুষদের মাস্টার্সের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের যে কেউ চাইলে এখানে কাজ করতে পারে। শিক্ষকদের নির্দেশনায় সবাই কাজ করে। প্রতিবারের মতো এবারো চারুকলা অনুষদ শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ রঙিন করেছে।

এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নেসার হোসেন বলেন, আমাদের প্রায় শতাধিক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী আঁকাআঁকিতে অংশ নিয়েছেন। প্রতিবারের মতো এবারও আমরা কাজ করছি।  

উল্লেখ্য, একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের বেদিতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতারা শ্রদ্ধা জানাবেন।  

এরপর পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তিন বাহিনীর প্রধানরা। পরে ভাষা সৈনিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিন ও হলের প্রাধ্যক্ষরা শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহিদ মিনার উন্মুক্ত থাকবে।

চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা

এ বছর শহিদ মিনারে চার স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহিদ মিনার এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল টিম, সোয়াত টিম, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিমসহ অন্যান্য টিম নিরাপদ দূরত্বে প্রস্তুত থাকবে। শহিদ মিনার এলাকায় সার্বক্ষণিক তল্লাশি ব্যবস্থা এবং পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। ড্রোন পেট্রলিং, মোবাইল পেট্রলিং এবং সাইবার পেট্রলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ মিনারে যাতায়াতের রুটম্যাপ

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহিদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৪ সুশৃঙ্খলভাবে পালনের জন্য কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টা পর্যন্ত নিম্নোল্লিখিত পয়েন্টে রাস্তা বন্ধ/রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে বলে নির্দেশনা জারি করেছে ডিএমপি। ১৮ ফেব্রুয়ারি, রবিবার ডিএমপি থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

যেসব রাস্তা বন্ধ/রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে সে রাস্তাগুলো হলো:
শাহবাগ ক্রসিং, টিএসসি ক্রসিং দোয়েল চত্বর ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং, জিমনেশিয়াম মাঠ গেইট, রোমানা ক্রসিং, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, বকশি বাজার ক্রসিং, চাঁনখারপুল ক্রসিং।

এছাড়াও যানবাহন চলাচলের বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিকল্প রাস্তাগুলো হলো:  
কাঁটাবন ক্রসিং-নীলক্ষেত ক্রসিং-পলাশী ক্রসিং-বকশীবাজার ক্রসিং হয়ে চাঁনখারপুল ক্রসিং, শাহবাগ ক্রসিং- কাঁটাবন ক্রসিং- বাঁটা সিগনাল ক্রসিং-সায়েন্সল্যাব ক্রসিং হয়ে মিরপুর রোড, শাহবাগ ক্রসিং- মৎস্য ভবন ক্রসিং- কদমফোয়ারা ক্রসিং- হাইকোর্ট ক্রসিং- আব্দুল গণি রোড হয়ে জিরো পয়েন্ট ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং- বঙ্গবাজার ক্রসিং-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স- গোলাপ শাহ মাজার ক্রসিং হয়ে ফুলবাড়িয়া ক্রসিং, শাহবাগ ক্রসিং- হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং- বাংলামোটর ক্রসিং- সোনারগাঁও ক্রসিং হয়ে ফার্মগেট ক্রসিং ও বকশীবাজার ক্রসিং- চাঁনখারপুল ক্রসিং- নিমতলী ক্রসিং হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার।

যেসব রাস্তায় প্রবেশ নিষেধ:
বকশি বাজার-জগন্নাথ হল ক্রসিং সড়ক, চাঁনখারপুল-রোমানা চত্বর ক্রসিং সড়ক, টিএসসি-শিববাড়ী ক্রসিং সড়ক, উপাচার্য ভবন-ভাস্কর্য ক্রসিং সড়ক।

পায়ে হেঁটে চলাচলের রাস্তা:
পলাশী ক্রসিং থেকে শহিদ মিনার হয়ে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট ক্রসিং, টিএসসি ক্রসিং, শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং।

গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানসমূহ:
জিমনেশিয়াম মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ভিআইপি), মোকাররম ভবন মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (আইন শৃঙ্খলা বাহিনী) ও নীলক্ষেত ক্রসিং-পলাশী ক্রসিং (সর্বসাধারণ)।

বিবার্তা/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত