এবারের বইমেলা নিয়ে আশাবাদী প্রকাশকেরা

| আপডেট :  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৬  | প্রকাশিত :  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:২৬


এবারের বইমেলা নিয়ে আশাবাদী প্রকাশকেরা

বিবার্তা প্রতিবেদক


ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে এ দেশের মানুষের এক অনন্য আবেগ অচ্ছেদ্য হয়ে আছে মাতৃভাষার সংগ্রামের জন্য। এটি এমন এক গৌরব, যা একান্তই আমাদের এবং তা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে বিশ্বজনীন মর্যাদায় আসীন হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিময় এই মাস কালক্রমে দেশবাসীর মেধা, মনন ও সৃজনশীলতার প্রধান উৎসবের উপলক্ষ হয়ে উঠেছে বইমেলাকে ঘিরে।

আজ বৃহস্পতিবার ( ১ ফেব্রুয়ারি) বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধন করার পর থেকে সারা মাস চলবে প্রাণের টানে মেলামুখী জনপ্রবাহ।

এবারের বইমেলায় যাতায়াতের জন্য প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন গ্রন্থানুরাগীরা। মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনটি ঠিক বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান–অংশসংলগ্ন। আসার সময় রেল থেকে নেমেই মেলার গেট; আর ফেরার সময় মেলা থেকে বেরিয়েই মেট্রো স্টেশনে ওঠার সিঁড়ি। ফলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সব এলাকার যাত্রী এবার অনায়াসে মেলায় যাতায়াত করতে পারবেন (দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি ও পূর্ব প্রান্তে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে প্রবেশ ও বের হওয়ার মোট আটটি পথ করা হয়েছে।)। এতে মেলায় গ্রন্থানুরাগীদের উপস্থিতি বাড়বে। মেলায় বিক্রি ভালো হবে বলে প্রকাশকদের আশা।

শুধু বই কেনা নয়, জনমানসে আরও গভীরতর এক আবেগ–অনুরাগ জড়িয়ে থাকে অমর একুশের বইমেলার প্রতি। প্রাণের সেই টানেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষ উন্মুখ থাকেন বইমেলায় যেতে।

এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইউপিএল, প্রথমা, আগামী, সময়, অনন্যা, অ্যাডর্ন, অবসর, মাওলা ব্রাদার্স, ঐতিহ্য, অনুপম ও সেবা প্রকাশনীর মতো বড় প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন ও স্টলসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকাশনা সংস্থার স্টল–প্যাভিলিয়ন থাকবে। উভয় অংশ মিলিয়ে মোট ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৩৭ ইউনিট স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্যাভিলিয়ন থাকবে ৩৭টি। প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত নয়টা এবং ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, একাডেমি অংশের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সকালে এসএসএফ ও নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞরা একাডেমি প্রাঙ্গণে তল্লাশি করেছেন। তারপর থেকে বিশেষ অনুমতিপত্র ছাড়া সাধারণের প্রবেশ বন্ধ। সকালে মেলা কমিটির সদস্যসচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, একাডেমি প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন স্টল ও প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। অবকাঠামো তৈরির কাজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগেই শেষ হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশেও স্টল-প্যাভিলিয়ন তৈরির বেশ তোড়জোড় চলছে। তবে নির্মাণের পর্ব পুরোপুরি শেষ হতে মেলার প্রথম সপ্তাহ অবধি লেগে যেতে পারে বলে মনে হলো।

রমনার কালীমন্দির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় মেলার প্রবেশপথের সামনের কিছু অংশে ইট বিছানো হয়েছে। এ ছাড়া মাঠের অধিকাংশ এলাকাতেই ইট বিছানো বাকি। অনেক স্টলের কাঠামোই তৈরি হয়নি, আছে শুধু ছাউনি আর খুঁটি। কোনোটির অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। অল্প কিছু স্টলেই দেখা গেল নির্মাণকাজ শেষে রঙের প্রলেপ দেওয়া হচ্ছে। এসব স্টলে সকালের মধ্যেই বই সাজানো হবে। এবার স্টলের স্থান বরাদ্দ পেতে একটু দেরি হয়েছে। এ কারণে অবকাঠামো তৈরিতে বিলম্ব হয়েছে বলে জানান প্রকাশকেরা।

বেচাকেনা নিয়ে প্রকাশকেরা এবার বেশ আশাবাদী। এ বছর কাগজের দাম বাড়েনি বলে বইয়ের দামও বাড়েনি।

অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা জানান, প্রতিবছর তাঁরা ২১ বা ২২ জানুয়ারি স্টল বরাদ্দ পান। এবার পেয়েছেন ২৩ জানুয়ারি বিকেলে। তাই প্রকাশকদের স্টল-প্যাভিলিয়ন তৈরির কাজ শুরু করতে হয়েছে ২৪ জানুয়ারি থেকে। বিদ্যুতের সমস্যা ছিল বলে সন্ধ্যার পর কাজ হয়নি। অবকাঠামো তৈরির কাজে বাংলা একাডেমিও অনেক গড়িমসি করেছে বলে মেলার মাঠে কর্মরত প্রকাশকদের কর্মীরা জানান।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির উপদেষ্টা প্রবীণ প্রকাশক আগামী প্রকাশনীর ওসমান গণি বলেন,  তাঁরা চেষ্টা করছেন কমিশন কমিয়ে বইয়ের দামও কমিয়ে আনতে। অন্যান্য পণ্য সেটির গায়ে লেখা দামে খুচরায় বিক্রি হয়। বইয়ের ক্ষেত্রে শতকরা ২৫ ভাগ কমিশন দিতে হয়। তাঁরা চেষ্টা করছেন এই কমিশনের প্রথা থেকে বের হয়ে গায়ের দামে বই বিক্রি করতে। তাতে প্রকৃত দাম অনেক কমিয়ে আনা যাবে। সেটি অবশ্য সময়সাপেক্ষ। তবে বইয়ের দাম যেহেতু এবার তেমন বাড়ছে না, তাই বিক্রি ভালো হবে, এ আশা নিয়েই আজ থেকে পাঠকের জন্য মেলায় বইয়ের সম্ভার সাজাবেন তাঁরা।

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত