এমপি আনার হত্যার মূল কারণ জানা যায়নি, ‘মোটিভ’ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা: ডিবি

| আপডেট :  ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৭  | প্রকাশিত :  ২৭ জুন ২০২৪, ০৫:৫৭


এমপি আনার হত্যার মূল কারণ জানা যায়নি, ‘মোটিভ’ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা: ডিবি

জাতীয়

বিবার্তা প্রতিবদক


ঝিনাইদাহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার  এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা ঘটনায় কিলিং মিশনে অংশ নেয়া ৭ জনসহ মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনো হত্যার ঘটনায় মূল কারণ জানা যায়নি। হত্যার মোটিভ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে গোয়েন্দারা।

২৭ জুন, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর-রশীদ এসব তথ্য জানান।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, এমপি আজীম হত্যা মিশনে অংশ নেয় সাতজন। তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পেছনে কোন মোটিভ কাজ করেছে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে অর্থ, ব্যবসা ও রাজনৈতিক কারণ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

হারুন অর-রশীদ বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে সাতজন সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেয়। বাকিরা পরিকল্পনা ও সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। এদের মধ্যেও দুজনকে গ্রেফতার করেছে ভারতের পুলিশ। বাকি সাতজনকে বাংলাদেশের পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

তিনি বলেন, বুধবার দুপুরের পর খাগড়াছড়ির পাহাড়ি এলাকায় হেলিকপ্টার নিয়ে অভিযান চালিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা ছদ্মবেশে মন্দিরে অবস্থান করছিলেন। এমপি আজীমের হত্যা মিশনে অংশ নেওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন তারা। দেশে এসে চলে যান চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে। সেখানে শ্রী শ্রী পাতাল কালীমন্দির এলাকায় অবস্থান নেন।

ফয়সাল নিজেকে পলাশ ও মোস্তাফিজ নাম পাল্টে শিমুল রায় পরিচয় দেন। এ পরিচয়ে মন্দিরে এতদিন অবস্থান করছিলেন।

বুধবার রাতে হেলিকপ্টারে আসামিদের নিয়ে ঢাকায় ফেরে ডিবির অভিযানিক দলটি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, কলকাতায় এমপি আনারকে খুন করে ১৯ মে দেশে ফেরেন মোস্তাফিজ ও ফয়সাল। এরপর থেকেই পলাতক ছিলেন।

হারুন অর রশীদ আরও বলেন, এই দুজনকে গ্রেফতারের জন্য ডিবির একটি দল ছিল ঝিনাইদহে, সুন্দরবনেও একটি দল গিয়েছিল। আর দুটি দল ছিল খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফটিকছড়ি সীতাকুণ্ডে তারা কাজ করছিল অনেকদিন ধরে। সবদিকে গোয়েন্দা জাল বিছিয়ে গতকাল বুধবার সেই দুজনকে গ্রেফতার করি। শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডের জন্য যা যা করার দরকার তারা তাই করেছে।

তিনি বলেন, ১৩ মে সকালে এমপি আনার তার বন্ধু গোপালের বাসা থেকে বের হন। বিধান সভার কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে অপেক্ষায় ছিল ফয়সাল। ফয়সাল আনারকে রিসিভ করে লাল গাড়ির কাছে যান। যেখানে অপেক্ষায় ছিল শিমুল ভূঁইয়া। আর অন্যদিকে কলকাতা সঞ্জিবা গার্ডেনের ভাড়া বাসায় অপেক্ষায় ছিলেন মোস্তাফিজ ও জিহাদ হাওলাদার। ফয়সাল, শিমুল ভূঁইয়া এমপি আনারকে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে গেলে রিসিভ করেন সিলাস্তি রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান।

তারা নিচে কর্নারের রুমে যান। আনার যখন বুঝতে পারেন তিন চারজনের গতিবিধি, তখন তিনি অনেক কাকুতি-মিনতি করেন, বাঁচার চেষ্টা করেন। দৌঁড় দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টার সময় ফয়সাল তার নাকে মুখে ক্লোরোফম ধরে নিস্তেজ করেন। এরপর হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত করা হয়।

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, সংসদ সদস্য আনার কিলিং মিশনে সাতজন অংশ নিয়েছেন। সাতজনই গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের মধ্যে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর, সিলাস্তি, ফয়সাল, মোস্তাফিজুর, কলকাতায় গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার ও সিয়াম। এর বাইরে আরও দুজন আমাদের কাছে গ্রেফতার রয়েছেন। তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু ও গ্যাস বাবু। ঢাকার ডিবির হাতে গ্রেফতারদের মধ্যে ৪ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আক্তারুজ্জামান শাহীনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হারুন বলেন, এখনো আমাদের কাছে শাহীন মাস্টারমাইন্ড। কারণ তার পাসপোর্ট দিয়ে কলকাতার সঞ্জীবা গার্ডেনে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিল। হত্যার পরিকল্পনা, বাসা ভাড়া, এই সবই শাহীন করেছে। শাহীন ১০ মে কলকাতা থেকে দেশে ফিরে আসে। জিহাদ বাদে হত্যার পর একে একে কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া সবাই দেশে এবং কেউ নেপালে পালিয়ে যায়। শিমুল ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর শাহীন প্রথমে দিল্লি, এরপর নেপাল তারপর দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।

খাগড়াছড়ি পাহাড় থেকে গ্রেফতার ফায়সাল ও মোস্তাফিজ হত্যার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম সম্পর্কে কিছু বলেছে কি-না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, কলকাতার একটি মার্কেট থেকে ১৭ হাজার টাকা দিয়ে একটি চেয়ার কেনা হয়। সঙ্গে কিনে আনা হয় ক্লোরোফম। সেই চেয়ারে বেঁধে আনারকে বিবস্ত্র করা হয়। এই কাজগুলো করেছিল ফয়সাল। আর হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সিয়াম এনে দিয়েছিল ফয়সালকে।

ফয়সাল ও মোস্তাফিজ হত্যার কাজ শেষ করে দেশে ফিরে শাহীনকে ফোন করে বলে, ‘আমরা কোথায় থাকবো?’

তখন শাহীনের বসুন্ধরায় বাসায় যায় তারা। সেখানে গিয়ে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যায়। ফয়সাল ও মোস্তাফিজ ছিল ট্রাক ড্রাইভার। তাদের ৩০ হাজার টাকা দেয় শাহীন। মোবাইল বন্ধ করে তারা চলে যায় খাগড়াছড়ি গহিন বনে। সেখানে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের নিচে পাতাল কালি মন্দিরে নিজেদের নাম বদলে ফেলেন।

ফয়সাল পলাশ রায় আর মোস্তাফিজুর শিমুল রায় নাম ধারণ করে হিন্দু সেজে মন্দিরে অবস্থান করেন। তারা সেখানে বলেন, মা কালীকে তারা খুব ভালোবাসেন। কালীমন্দির ছাড়া তারা থাকতে পারেন না। তারা চুলের ধরণ পরিবর্তন করেন, ধূতিও পরেন।

বিবার্তা/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত