কঠিন চাপে সরকার

| আপডেট :  ০৯ জুন ২০২২, ০৭:৩০  | প্রকাশিত :  ০৯ জুন ২০২২, ০৭:৩০

নিত্যপণ্য, গ্যাস-পানি, বাসাভাড়া, পরিবহন কিংবা শিক্ষা- কোনো কিছুতেই নেই দামের লাগাম। খরচ বেড়ে চলেছে সব খাতেই। কোনো কোনোটির দাম চলে গেছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এই পটভূমিতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে একাধিক কমিটিও গঠন করেছে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চলছে অবৈধ মজুতবিরোধী অভিযানও। তবু দমেনি দামের ঘোড়া। এ প্রেক্ষাপটে ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভারসাম্য রক্ষাসহ বাজার ব্যবস্থা তদারকি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামী সোমবার সকাল ১০টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি ‘নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে পাইকারি বাজারগুলোতে মজুতদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকটের ফাঁদ পেতে যাতে পণ্যের দর বাড়ানো না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর তদারকি ও সমন্বয় করতে বলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন মিলে অতিরিক্তি চাল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট যাতে ব্যবসায়ীরা তৈরি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তিনটি কমিটিও গঠন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় অবৈধ মজুতসহ বিভিন্ন কারণে ভরা মৌসুমে চালের দাম বেড়েছে। ফলে গত ৩০ মে অবৈধভাবে চাল মজুতকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন ধান-চালের অবৈধ মজুত ঠেকাতে দেশজুড়ে অভিযান চলছে।

আগামী সোমবার ‘নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি’র এ সভায় বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে জনবিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা প্রতিরোধ, জোর করে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বর্তমান অবস্থার পর্যালোচনা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, ঢাকাসহ বিভাগীয় নগরে যানজট সমস্যার কারণে জনদুর্ভোগ কমানো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবে ওই কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচার, অর্থ, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা থাকবেন।

দ্রব্যমূল্য ইস্যুতেই বেশি চাপে রয়েছে সরকার। মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে এখন প্রকাশ্যে ক্ষোভ ঝাড়ছে। ক্রমেই মানুষ হয়ে উঠছে ক্ষুব্ধ। সাধারণ মানুষ মনে করেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাঁদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, এই পরিস্থিতি চলতে পারে না। আর সরকারের পক্ষ থেকে যা করা উচিত, তা করা হচ্ছে না বলেই তাঁরা মনে করে। বিশেষ করে মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। গত সপ্তাহেও লাফিয়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। পণ্যের দাম এমন পর্যায়ে ঠেকেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই, উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য বাজারসদাই করা একটা চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা কিছুতেই আয়ের সঙ্গে খরচ মেলাতে পারছেন না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার বাজার ব্যবস্থাপনার সমস্যা সম্পর্কে অবগত। এসব সমস্যা সমাধানে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হয় না। তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সুশাসনসহ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের সংশ্নিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাড়াতে হবে তদারকি। বাজারের কারসাজির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয় একাধিক কমিটি গঠন করেছে। কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে এ জন্য তদারকি করা হচ্ছে। মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি যে নির্দেশনা দেবে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হবে।

হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরাও :বাজারের ঊর্ধ্বগতির কারণে হিমশিম খাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরাও। বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়ে গত মঙ্গলবার গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের জীবনমান রক্ষায় অবিলম্বে তারা নবম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণাসহ পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়ন চেয়েছে। গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নজরুল ইসলাম বলেন, সরকারি কর্মচারীর ৮৮ শতাংশ বর্তমান বাজারদরের কারণে দারুণ হিমশিম খাচ্ছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত