কমলা হ্যারিসকে নিজেদের মনে করেন ভারতের থুলাসেনধ্রাপুরামের বাসিন্দারা

| আপডেট :  ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭  | প্রকাশিত :  ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৭


কমলা হ্যারিসকে নিজেদের মনে করেন ভারতের থুলাসেনধ্রাপুরামের বাসিন্দারা

বিবার্তা ডেস্ক


ভারতের চেন্নাই থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম থুলাসেনধ্রাপুরাম। জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিস আবির্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই গ্রামের বাসিন্দাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ খবরের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। তাকে নিয়ে গর্বিত গ্রামবাসী। কিন্তু কেন?

জানা গেছে এখানেই ছিল কমলা হ্যারিসের নানাবাড়ি। কমলা হ্যারিসের মায়ের দিকের বংশধরেরা ছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা। গ্রামের মন্দিরের দাতাদের তালিকায় উঠে এসেছে হ্যারিস ও তাঁর নানা-নানিদের নাম। গ্রামটির কেন্দ্রে এখন সগৌরবে শোভা পাচ্ছে ৫৯ বছর বয়স্ক কমলা হ্যারিসের ব্যানার। তাঁর জন্য বিশেষ প্রার্থনা করেছে গ্রামের মানুষ।

জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানো এবং সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম উঠে আসার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন থুলাসেনথ্রাপুরাম গ্রামের বাসিন্দারা।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা কৃষ্ণমূর্তি বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির এমন একটি অবস্থানে পৌঁছা মোটেই চাট্টিখানি কথা নয়, কমলা হ্যারিসের জন্য আমরা গর্বিত। একসময় ভারতীয়দের শাসন করেছে বিদেশিরা। এখন ভারতীয়রা ক্ষমতাধর দেশগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে।  

বিশেষ করে নারীরা কমলাকে নিয়ে গর্বিত। নারীর পক্ষে সর্বক্ষেত্রে কী করা সম্ভব, তার প্রতীক হিসেবে তাঁরা কমলা হ্যারিসকে নিজেদের একজন হিসেবে দেখছেন।

স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অরুলমোঝি সুধাকর বলেন, গ্রামের সবাই তাঁকে চেনে। এমনকি শিশুরাও। তারা কেউ কেউ হ্যারিসকে  নিজেদের মা বা বোন বলে পরিচয় দিচ্ছেন। আমরা খুশি যে তিনি তাঁর শিকড়কে ভোলেননি। আমরা আমাদের আনন্দ প্রকাশ করছি।

কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর সড়কে আতশবাজি ফুটিয়ে, পোস্টার লাগিয়ে ও ক্যালেন্ডারে তাঁর ছবি ছেপে উদ্‌যাপন করেছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। এবারের উৎসাহ-উদ্দীপনা সে কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

ওই গ্রামে বড়সড় একটি ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে ইডলি, সাম্বারসহ ছিল দক্ষিণ ভারতের ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার। হাজারো মানুষ এই ভোজে অংশ নিয়ে এসব খাবারের স্বাদ নিয়েছেন।

হ্যারিসের এক আত্মীয় বলেন, কমলা হ্যারিসের পছন্দের খাবারগুলোর মধ্যে আছে ইডলি ও সাম্বার।

উল্লেখ্য, শ্যামলা গোপালান নামের এক স্তন ক্যানসার বিশেষজ্ঞের মেয়ে কমলা হ্যারিস। ১৯৫৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাডুতে বেড়ে ওঠেন শ্যামলা। তাঁর মা-বাবার বাড়ি ছিল থুলাসেনধ্রাপুরাম গ্রামে।

‘আমার মা ১৯ বছর বয়সে একা ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বিজ্ঞানী, গণ-অধিকার কর্মী এবং এমন একজন মা, যিনি দুই মেয়ের মধ্যে তাঁর জন্য গর্বের জন্ম দিতে পেরেছেন।’ গত বছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে জানান হ্যারিস।

মা মারা যাওয়ার পর বোন মায়াসহ চেন্নাই ভ্রমণ করেন কমলা হ্যারিস। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর দেওয়া তথ্য অনুসারে হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে এ সময় মায়ের ছাইভস্ম সাগরে ফেলেন তাঁরা।

কমলা হ্যারিসের বংশে ভালো অবস্থানে পৌঁছা মানুষের সংখ্যা কম নয়। তাঁর মামা গোপালান বালাচন্দ্রন ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। তাঁর নানা পিভি গোপালান ছিলেন একজন ভারতীয় আমলা, যিনি শরণার্থী পুনর্বাসনে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। ১৯৬০-এর দশকে জাম্বিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক আর রাজারমন কমলা হ্যারিসের মায়ের সহপাঠী ছিলেন। তিনি জানান, শ্যামলার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাঁর সঙ্গে পুনরায় দেখা হয় ১৯৭০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময়। এ সময় বার্কলেতে শ্যামলার বাড়িতে তাঁদের দেখা হয়।

‘শ্যামলা সেখানে ছিল। আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করে। তার দুই মেয়ে কমলা ও মায়া সেখানে ছিল।’ স্মৃতিচারণা করেন তিনি, ‘তারা দুজনেই ছিল খুব উদ্যমী। তাদের মায়ের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। কমলার মধ্যেও এটা দেখতে পেয়েছি।’

আবার ফিরে আসা যাক থুলাসেনধ্রাপুরাম গ্রামে। গ্রামবাসী এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসের নাম ঘোষণার প্রতীক্ষা করছেন।

‘কমলার মায়ের ছোট বোন সরলা এই মন্দিরে নিয়মিত আসতেন। ২০১৪ সালে কমলা হ্যারিসের পক্ষ থেকে মন্দিরে ৫ হাজার রুপি দান করেন তিনি।’ বলেন মন্দিরের পুরোহিত নটরাজন। পুরোহিতের বিশ্বাস, তাঁদের প্রার্থনা কমলা হ্যারিসকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করবে।

গ্রামবাসী বলেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও কমলার এই ভ্রমণে নিজেরাও আছেন বলে ভাবছেন। তাঁরা আশা করছেন কমলা হ্যারিস কোনো একদিন তাঁদের দেখতে আসবেন কিংবা তাঁর কোনো বক্তব্যে গ্রামটির নাম উচ্চারণ করবেন।

বিবার্তা/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত