কর্ণফুলীতে দেড় কোটি টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও!

| আপডেট :  ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৫  | প্রকাশিত :  ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৫


কর্ণফুলীতে দেড় কোটি টাকার কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও!

সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি


চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের খোয়াজনগর ‘লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়কের’ দেড় কোটি টাকার কাজ ফেলে রেখে আবারো ঠিকাদার উধাও হয়েছেন। এক বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে। এর আগে একই সড়কের ৫০ লাখ টাকার রাজস্ব বরাদ্দের টেন্ডার তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে বাতিল করেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ।

একই সড়কের কাজ নিয়ে ৪ বছর আগেও মেসার্স শাহ জাব্বরিয়া ও মেসার্স ফোরক আহমেদ এন্ড সন্স নামক দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উধাও ছিলেন। ফলে, সড়কের কোনো কাজ হয়নি। বর্তমান কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ সম্পন্ন করতে এলজিইডি কর্মকর্তারা তাগিদ দিলেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে স্থানীয় লোকজন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।

এলজিইডির সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির প্রেক্ষিতে লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়কটি সর্বশেষ ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা (প্রায়) ব্যয়ে কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান ‘মেসার্স গণি কনস্ট্রাকশন’ নামের নগরীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. ওসমান গণি। কার্যাদেশ অনুযায়ী, কাজ শুরু করলেও হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সড়কটির বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে কর্ণফুলী আনোয়ারা আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রচেষ্টায় লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সংযোগ সড়কে দুটি কালভার্টসহ সড়কটি নির্মাণে ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দে টেন্ডার হয়েছিল। পরে ঠিকাদার নিয়োগ হলো। কিন্তু সংস্কার বা কোনো কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

ওই সময়ে বরাদ্দ পাওয়ার পর টেন্ডার শেষ করা হলেও জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির কাজ কেন শুরু করা হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী জানিয়ে ছিলেন, উপজেলা রাজস্ব বিভাগ থেকে টেন্ডার দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম ৩ প্রকল্পের অধীনে হওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হয়নি। গ্রেটার চট্টগ্রাম ৩ প্রকল্প থেকে কাজটি শিগগিরই সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।

এই চেষ্টা গত ৪ বছরেও শেষ হয়নি। অথচ তৎকালীন ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও টেন্ডারটা বাতিল করে দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। নতুন করে টেন্ডার হলেও সড়কটির দিকে নজর নেই কারো। ঠিকাদারিদের নানা গড়িমসি। ফলে, জনদুর্ভোগ বেড়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে সড়কের ভাঙা অংশ পানিতে ডুবে থাকে। আর জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়।

যদিও বিকল্প হিসেবে দুই কিলোমিটার দূরের আইকেসি সড়ক বর্তমান সাইফুজ্জামান চৌধুরী সড়ক হয়ে ঘুরে আসতে হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ রাজা ও তৎকালীন উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা ঢাকা এলজিইডি হেড অফিসে দৌড়ঝাঁপ করে পুনরায় সড়কের অংশ বর্ধিত করে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দে সড়কটি টেন্ডার করেন। পরে ঠিকাদার নিয়োগ হয়।

তথ্য সূত্র বলছে, আয়ুব বিবি সড়কের শেষাংশ এমদাদ মাস্টারের বাড়ির সামনে হতে লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়কটি সংযুক্ত হয়েছে, হাজী আলীম উদ্দিন মার্কেটের কালাইয়ার দোকান পর্যন্ত এ সড়কের কাজ করার কথা।

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্যাকেজের আওতায় প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ সড়কটি নির্মাণ ও সংস্কার কাজের ই-টেন্ডার হয়। যার টেন্ডার আইডি ছিল ৫২৭৩৯৯।

রাজস্ব খাত থেকে টেন্ডারটি অর্গানাইজ করেছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ। ওই প্যাকেজের পার্ট এ’তে ছিল লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক ৫০০-৯০৭ মিটার পর্যন্ত আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন। পার্ট বি’তে ছিল একই সড়কে অন্য অংশে ৫০ মিটার আরসিসি বক্স-কালভার্টসহ ৫৩৩ মিটার লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক নির্মাণ করা।

তখন এটি শাহ জাব্বরিয়া লাইসেন্স এ ১ম লোয়েস্ট হিসেবে কাজটি পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে মেসার্স ফোরক আহমেদ এন্ড সন্স এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁদের দাখিলকৃত কার্য সম্পাদন সনদের সমস্যার কারণে কাজ না দিয়ে বিধি মোতাবেক ২য় সর্বনিম্ন দরপত্র দাতা হিসেবে তাঁদেরকেও ওয়ার্ক অর্ডার না দিয়ে সরাসরি টেন্ডারটি বাতিল করেছিলেন।

সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী মহি উদ্দিন মঞ্জু জানান, ‘খোয়াজনগর গ্রামের তিন ওয়ার্ডের বেশির ভাগ মানুষকে পুরাতন ব্রিজঘাট বাজার ও জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য লাল মিয়া কন্ট্রাক্টর সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এ সড়ক দিয়ে এখন কোন বড় গাড়ি চলে না। জোয়ারে সড়কের বেশির ভাগ অংশ নোনা পানিতে ডুবে যায়। ঝুঁকি নিয়ে তবুও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন,’ ঠিকাদারকে বাতিল করতে যতটুকু ব্যবস্থা নেবার আমি নিচ্ছি। অলরেডি চিঠি লেখা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে কাজ শুরু করছেন না। ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করে না। সুতরাং শিগগিরই রি-টেন্ডার করে কাজটি করা হবে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদার মো. ওসমান গণি বলেন, ‘অন্যদিকে ফান্ডের একটা সমস্যা ছিলো তাই কাজটি করতে পারিনি। বর্তমানে সেটা সমাধান হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করব।’

এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমার জানা মতে ঐ রাস্তায় একটা কালভার্ট এর কাজ চলছে।’

এলজিইডি’র চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হাসান আলী বলেন, ‘বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

বিবার্তা/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত