কুষ্টিয়ায় মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর

| আপডেট :  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩৭  | প্রকাশিত :  ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩৭


কুষ্টিয়ায় মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর

সারাদেশ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি


কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা।

৪ আগস্ট, রবিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে় শহরের পিটিআই রোডে মাহবুবউল আলম হানিফের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সরেজমিনে সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সামনে বিভিন্ন ধরনের ফুলের টব, তৈরি করা নৌকা সড়কের ওপর পড়ে আছে। নিচতলার এসি, জানালা ও গ্লাস ভেঙে পড়ে আছে। পেছনের রান্নাঘর তছনছ করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বাড়ির সামনের কাঁচ এবং টংঘর ভেঙ্গে ফেলেছে বলে জানা যায়। তবে অগ্নিসংযোগে তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গেলে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে যায়।

ভাঙচুরের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে গেলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, কুষ্টিয়া শহরে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে নাশকতাকারীরা। তারা ট্র্যাফিক পুলিশ অফিস, জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, জেলা পরিষদ ভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দফায় দফায়, টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে।

এসব ঘটনায় ৪ জন সংবাদকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়াও পুলিশ ও পথচারীসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে শহরের মজমপুর বাস ডিপো মসজিদের সামনে জড়ো হতে শুরু করে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, নিষিদ্ধঘোষিত জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা। তবে এ মিছিলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারে কম ছিল বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। পরে বেলা ১১টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এসময় রাস্তার দুপাশ থেকে শত শত মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে যোগ দেন। পরে চৌড়হাস মোড়ে গিয়ে তারা মহাসড়কের উপর অবস্থান নেন। এসময় নাশকতাকারীদের অবস্থান থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ১০-১২ জন পুলিশ সদস্যের উপর হামলা চালায় নাশকতাকারীরা। সেখানে ৬-৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর নাশকতাকারীরা আবার মিছিল নিয়ে মজমপুর গেটের দিকে রওনা হয়। মিছিলটি ফুলতলা মোড় অতিক্রম করার সময় রাস্তা থেকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে নাশকতাকারীরা। এতে বেশ কয়েককজন পুলিশ সদস্য আহত হন। তবে পুলিশ সে সময় কোনো অ্যাকশনে যায়নি।

পরে রাইফেল ক্লাবের পাশে ছাত্রলীগ কার্যালয় ভেঙে গুড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় নাশকতাকারীরা। এরপর সাদ্দাম বাজার মোড়ে এসে নাশকতাকারীরা কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাঞ্জারুল ইসলাম চঞ্চলের ব্যক্তিগত অফিস এবং সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব বাদশার ব্যক্তিগত অফিসের হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর এবং আগুন দেয়। এরপর নাশকতাকারীরা একে একে মজমপুর গেটে জেলা ট্র্যাফিক পুলিশের আগুন দেয়, ভাঙচুর চালায় পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে। পরে বঙ্গবন্ধু সুপার মার্কেটে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অফিসে ব্যাপক ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা।

নাশকতাকারীরা কুষ্টিয়া মডেল থানা ও জেলা পরিষদের নবনির্মিত ভবনে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। হামলার সময় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শান্তি সমাবেশ করছিলেন। তবে নাশকতাকারীদের হামলার মুখে তারা সেখান থেকে সড়ে যান। এছাড়া বড়বাজার রেলগেটের কাছে পুলিশ বক্স জ্বালিয়ে দেয় নাশকতাকারীরা। নাশকতাকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে লাগানো সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। বেলা ২টার পর নাশকতাকারীরা পুনরায় মজমপুর বাস ডিপো মসজিদের সামনে জড়ো হয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা বৃষ্টির মতো ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এসময় চ্যানেল ২৪ এর কুষ্টিয়া প্রতিনিধি শরীফ বিশ্বাস, ক্যামেরা পার্সন এস আই সুমন, একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিনিধি শাহিন আলী ও ক্যামেরা পার্সন কোহিনুর ইসলাম গুলিতে আহত হন। গুলি-ইটপাটকেলে পুলিশ ও নাশকতাকারীসহ অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের সাথে নাশকতাকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। এতে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরের সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, পুলিশ যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। এমনকি পুলিশের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপের পরও তারা নিশ্চুপ ছিল। তবে নাশকতাকারীরা শহরের পুলিশের স্থাপনাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুন দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত