কুষ্টিয়ায় শুরু হয়েছে লাঠি খেলা উৎসব: পা রাখলো ৯০ বছরে

| আপডেট :  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫২  | প্রকাশিত :  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫২


কুষ্টিয়ায় শুরু হয়েছে লাঠি খেলা উৎসব: পা রাখলো ৯০ বছরে

সারাদেশ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি


বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী আয়োজিত কুষ্টিয়ায় ৩ দিন ব্যাপী ‘ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব ও লোকজ মেলা’ উদ্বোধন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালি কুষ্টিয়া শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিকেল সাড়ে ৩টায় এ উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

উৎসব উদযাপন  কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলম রিংকীর সভাপতিত্বে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শিশির কুমার রায়।

এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মুঈদ রহমান, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আনছার হোসেন, কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক এস এম কাদরী শাকিল, মোহাম্মদ আলী নিশান ও এ্যাড. সুব্রত চক্রবর্তী।

জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উৎসব উদযাপন  কমিটির আহ্বায়ক সাইফুল আলম রিংকী।

বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু ও উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য জিয়া হাসান রিপন। পরে শুরু হয় লাঠিখেলা। দর্শকরা উপভোগ করেন এ খেলা।

ঢোল আর কাশির তালে তালে নেচে নেচে দুই পক্ষের লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যের মধ্যে টান টান উত্তেজনার লাঠি কারুকার্যের শক্তির লড়াই হচ্ছে লাঠিখেলা। আধুনিক খেলার ভিড়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঠি খেলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। লাঠি লেখার ৯০ বছর উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিকেলে কুষ্টিয়ায় ‘ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব’ শুরু হয়।

দীর্ঘদিন পর লাঠি খেলা উৎসব হওয়ায় সকলে উচ্ছ্বসিত। তবে এ খেলা টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা।

একসময় বর্গীদের উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে জমিদার অথবা সমাজপতিরা শত্রু বা প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করার জন্য লাঠিয়াল পালতেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর লাঠিয়ালদেরও প্রয়োজন ফুরায়।

তবে তাদের বংশধররা এটাকে খেলা হিসেবে আজও টিকিয়ে রেখেছেন। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখতে লাঠিয়ালদের নিয়ে ১৯৩৩ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী। অর্থ সংকট ও প্রযুক্তি নির্ভর খেলা হওয়ায় লাঠিয়ালদের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই হারানো গৌরব ফিরাতে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে ৩দিনের ‘ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা উৎসব’ শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিচ্ছে নড়াইল, ঝিনাইদহ, পাবনা, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর সহ দেশের বিভিন্ন জেলার ২৬টি লাঠিয়াল দল। পুরুষ দলের পাশাপাশি নারী লাঠিয়াল দলও অংশ নিচ্ছে এ উৎসবে। লাঠি খেলা শুধু খেলা নয়, এটা আত্মরক্ষারও কৌশল। বর্তমান মোবাইল ফোনের যুগে ছেলে মেয়েরা মনের আনন্দ উপভোগ করলে শারীরিক কাঠামো ঠিক রাখতে প্রয়োজন লাঠি খেলা। এটা শরীর ঠিক রাখে আবার মানসিক আনন্দ দেয় বলে জানান, বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্য ও উৎসবের আয়োজক সদস্য ওস্তাদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর বংশধর রূপন্তী চৌধুরী। এ উৎসবে অংশ নিচ্ছে শিশুসহ নারী লাঠিয়াল দলও।

তবে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের ভাষ্য মাঠের অভাবে এই খেলার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

এদিকে জাতীয় দিবসগুলিতে লাঠি খেলা প্রতিযোগিতার আয়োজন রাখার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর গণযোগাযোগ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী নিশান। পাশাপাশি তিনি গ্রামীণ ঐতিহ্য লাঠি খেলা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে ও ধরে রাখতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বলে উল্লেখ করেন।

উৎসবকে ঘিরে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে বসেছে গ্রামীণ মেলা। উৎসব শেষ হবে আগামীকাল শনিবার রাতে। প্রতিদিন বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে এই উৎসব চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।

বিবার্তা/শরীফুল/সউদ

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত