কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলার জারি

| আপডেট :  ১৯ জুলাই ২০২২, ০৯:৪২  | প্রকাশিত :  ১৯ জুলাই ২০২২, ০৯:৪২

খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের দায়ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিতে চায় না বলেই পুনঃতফসিলের ক্ষমতা বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজেমি সেন্টারে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক জি এম আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন পুনঃতফসিলের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এর জন্য পুরো দায়ী করা হতো। নতুন সার্কুলার জারি করা হয়েছে, মূলত ব্যাংকগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য। এখন থেকে ঋণের ভালো-মন্দের দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে নিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পলিসি দেবে, কোনও ঋণের দায়ভার আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেবে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, যে গ্রাহককে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ দিয়েছে— সেটি ভালো হলেও পর্ষদের, খারাপ হলেও তার দায় পর্ষদের ওপর পড়বে। যেহেতু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, খেলাপি সুবিধা পর্ষদ দেবে, রিশিডিউল তারা করবে। তাই ঋণের ভালোমন্দের দিকটাও তাদের নিতে হবে। এছাড়া দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং আর্থিক খাতের কথা বিবেচনা করে খেলা‌পি ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা ও খেলা‌পি ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার যুক্তি দেখিয়ে ঋণখেলাপিদের আবারও বড় ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখা‌নে মাত্র আড়াই থেকে পাঁচ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে চারবার ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। সোমবার (১৮ জুলাই) এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও প্রভাবশালী গ্রুপের চাপে এই সার্কুলার জারি করা হয়নি।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘ঋণ নিয়মিত করার ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে দেওয়ায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিয়মিত টাকা ফেরত দেবেন। একই সঙ্গে খেলাপি ঋণ কমে আসবে বলে আমরা আশা করছি।’

তিনি উল্লেখ করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই বলেছিলেন, সেন্ট্রাল ব্যাংক অ্যাপেক্স বডি হিসেবে কাজ করবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের চেনেন। ব্যাংকগুলো রি-শিডিউল কীভাবে করবে, তারা তা ঠিক করবে। যেহেতু গ্রাহককে তারা চেনেন। কোনও খেলাপিকে কী সুবিধা দেওয়া হবে, এটা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ খেলাপিকে সুবিধা দেওয়া নয়। কারণ, ব্যাংকের গ্রাহককে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চেনে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ইন্সপেকশন করবে, অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবে।’

নতুন সার্কুলারে ঢালাওভাবে খেলাপিকে সুযোগ দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘একটা প্রেক্ষাপটের কারণে সার্কুলার হয়েছে। আবার অনেক সময় পুনরায় সার্কুলারও দেওয়া হয়। অপারেশনাল কাজটা ব্যাংকগুলো নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে করবে। এটা তাদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে জবাবদিহি বাড়বে, খেলাপি কমবে। এমন স্বাধীনতা ব্যাংকগুলোর ওপর দেওয়ার ফলে এখন থেকে ব্যক্তি ও বোর্ডের ওপর দায়ভার চলে গেছে।’

প্রসঙ্গত, এতদিন বিশেষ সুবিধায় ঋণ নিয়মিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন লাগতো। সেই ক্ষমতা এখন থেকে পুরোটাই ব্যাংকগুলোর হাতে থাকছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক যে নির্দেশনা জারি করেছে। ওই নির্দেশনা মতে, ‘এখন থেকে খেলাপি ঋণে কী সুবিধা দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করতে পারবে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাংক মালিকরাই এখন ঋণখেলাপিদের কী সুবিধা দেওয়া যাবে, তা ঠিক করে দেবেন।

নতুন ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, এখন থেকে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ অর্থ জমা দিলে হবে। এর আগে নিয়মিত করতে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। আগে এ ধরনের ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ দুই বছর সময় পেলে এখন পরিশোধ করা যাবে পাঁচ থেকে আট বছরে। একই সঙ্গে নতুন করেও ঋণ পাওয়া যাবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত