গাজার হাসপাতালে পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ৬ শিশুর মৃত্যু

| আপডেট :  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০২  | প্রকাশিত :  ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০২


গাজার হাসপাতালে পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ৬ শিশুর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বাড়ছে মানবিক সংকট। প্রায় পাঁচমাস ধরে চলতে থাকা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে নারী ও শিশুরা। ইসরায়েলের বর্বরতা থেকে বাদ যায়নি গাজার হাসপাতালগুলোও। সর্ব শেষ গাজার কামাল আদওয়ান ও আল শিফা হাসপাতালে পানিশূন্যতা ও অপুষ্টিতে ছয় শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক শিশুর অবস্থা গুরুতর। যেকোনো সময় তাদের মৃত্যু হতে পারে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আল জাজিরা জানিয়েছে, বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) কামাল আদওয়ান হাসপাতালে চার শিশুর মৃত্যু হয়। এরপর আল শিফা হাসপাতালে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়।

প্রায় পাঁচমাস ধরে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ হামলার কারণে অবরুদ্ধ এ ভূখণ্ডটিতে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে কয়েক লাখ বাসিন্দা।

লাখো মানুষ উদ্বাস্তু, খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ইসরাইলের বাধায় গাজায় ত্রাণ সহায়তা সরবরাহের গতি আরও মন্থর হয়ে গেছে। ত্রাণ না পৌঁছানোয় ছোট ছোট শিশুরাও অনাহারে থাকছে।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়কারী সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজামুখী অর্ধেকের বেশি ত্রাণ সহায়তাকে গত মাসে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি ইসরাইল। কোথায় ও কীভাবে এই ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে– সে বিষয়েও জাতিসংঘের ওপর খবরদারি করছে ইসরাইলি সেনারা।

বর্তমানে উপত্যকাটির এক-চতুর্থাংশ বাসিন্দা দুর্ভিক্ষ থেকে মাত্র একধাপ দূরে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অব হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (ইউএনওসিএইচএ)-এর কোঅর্ডিনেশন ডিরেক্টর রমেশ রাজাসিংহাম বলেছেন, গাজার দক্ষিণে জনাকীর্ণ এলাকায়ও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। আর যদি এমনটা হয়, তাহলে মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তিনি নিরাপত্তা পরিষদের উদ্দেশে বলেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে ২ বছরের কম বয়সী প্রতি ছয় শিশুর মধ্যে এক শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার এবং ফিলিস্তিনি এ ভূখণ্ডের ২৩ লাখ মানুষই কার্যত বেঁচে থাকার জন্য ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে অপর্যাপ্ত’ খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করছে।

রাজাসিংহাম আরও বলেন, জাতিসংঘ ও ত্রাণ সহায়তা গোষ্ঠীগুলো গাজায় ন্যূনতম সহায়তা সরবরাহ দিতেও অপ্রতিরোধ্য বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এর মধ্যে ক্রসিং বন্ধ, চলাচল ও যোগাযোগের ওপর বিধিনিষেধ, কঠোর পরীক্ষা পদ্ধতি, অস্থিতিশীলতা, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা এবং অবিস্ফোরিত গোলাবারুদের মতো বিষয় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ইসরাইলি বোমায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯ হাজার ৯৫৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭০ হাজার ৩২৫ জন। এর মধ্যে ২১ হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু।

একবিংশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি বড় যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। এর মধ্যে রয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইউক্রেনে বিদেশি শক্তির আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞ। তবে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞের হার এসব যুদ্ধকে পেছনে ফেলেছে।

শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির ওপর মিত্রবাহিনীর বিরামহীন হামলায়ও এত ধ্বংসলীলা সাধিত হয়নি যতটা ঘটেছে ফিলিস্তিনের এই অবরুদ্ধ উপত্যকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত একশ বছরে গাজায় ইসরাইলি বর্বরতার মতো দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত দেখেনি বিশ্ব।

বিবার্তা/মাসুম

 

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত