গৃহবধূর টাকা-ইজ্জত দুটোই নিলেন পুলিশ কনস্টেবল

| আপডেট :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৬  | প্রকাশিত :  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৮:৩৬

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কনস্টেবল তারিকুল ইসলাম রাজিব (৩০)। দায়িত্ব পালন করেন চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মালখানায়। আগের কর্মস্থল থেকে বদলি হয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে আসার পর বায়েজিদ এলাকায় এক দূর-সম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাসায় সাবলেট ওঠেন। একপর্যায়ে সেই বাসায় থাকা গৃহবধূর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক হয়ে ওঠে। যা পরে পরকীয়া প্রেমে পরিণত হয়।

কনস্টেবল তারিকুল এক সময় ওসি হবেন- এই প্রলোভন দেখিয়ে ওই গৃহবধূকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করেন। পাশাপাশি ওসি হতে ঘুষ দিতে হবে জানিয়ে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। শেষ পর্যন্ত ধর্ষণ ও ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তারিকুল ইসলাম রাজিব (৩০) নামের এই পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এই গৃহবধূ। আদালত মামলা আমলে নিয়ে আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। ভুক্তভোগী এই নারী অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের নভেম্বরে ওই বাসায় সাবলেট হয়ে আসার পর তারিকুল ভবিষ্যতে পুলিশের ওসি হচ্ছেন বলে তাকে প্রলোভন দেখান।

ওসি হয়েই তাকে বিয়ে করবেন বলেও আশ্বাস দেয়া হয়। একপর্যায়ে তারিকুলের প্রতি দুর্বল হয়ে যান তিনি।

একপর্যায়ে তাদের দু’জনের সম্পর্ক গভীর হয়। এভাবে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সাবলেট থাকা অবস্থায় তারিকুল তাকে ভুলিয়ে স্বামীর অবর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। এ সময় অজান্তে ওই নারীর বিভিন্ন গোপন ছবি এবং ভিডিও ধারণ করে তারিকুল ইসলাম রাজিব। জানা যায়, কনস্টেবল তারিকুল ওসি পদে পদোন্নতির কথা বলে ভুক্তভোগী নারীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এরপর গোপনে ধারণ করা ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের ভয় দেখিয়ে আরও টাকা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারিকুলের সঙ্গে সম্পর্ক ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ওই নারী। এরপর বিভিন্ন সময় ফোনে ভুক্তভোগী নারীকে শারীরিক সম্পর্ক করতে চাপ দিতে থাকেন তারিকুল।

সর্বশেষ গত ৪ঠা আগস্ট স্বামী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে তারিকুল তাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করেন। পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তারিকুল এসব বিষয় কাউকে জানালে ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়াসহ খুন করার হুমকি দেন। এ সময় তারিকুলকে রাগান্বিতভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে বাসার দারোয়ান ওই নারীর কাছে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সব খুলে বলেন। পরে স্বামী-আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পরামর্শ করে বায়েজিদ থানায় মামলা করতে গেলে তারা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন।

এরপর গত ১২ই সেপ্টেম্বর আদালতে মামলার আবেদন করা হয় এবং গত ১৮ই সেপ্টেম্বর মামলা গ্রহণ করেন আদালত। তারিকুল বাসায় বসে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক সেবন ও বিক্রি করতেন বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী এই গৃহবধূ। ভুক্তভোগী নারী বলেন, কনস্টেবল তারিকুল আমাকে ফাঁদে ফেলে এসব কাজ করিয়েছেন এবং প্রতারণা করে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২১শে সেপ্টেম্বর তার আরেক বন্ধুকে দিয়ে ফোনে আমাকে হত্যার হুমকি দেন। বর্তমানে আমি পরিবারসহ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

এই বিষয়ে বাদীর আইনজীবী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর পিপি নিখিল কুমার নাথ বলেন, ইতিমধ্যে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন। আসামি রাজিব আদালত ভবনে মালখানা শাখায় কর্মরত আছেন। মামলার বাদীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে এই দৃশ্য ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করছেন।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত