গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়

| আপডেট :  ১১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০  | প্রকাশিত :  ১১ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১০


গোর-এ-শহীদ ময়দানে ৬ লাখ মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়

জাতীয়

দিনাজপুর প্রতিনিধি


ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

১১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দেশের অন্যতম বৃহৎ এ ঈদগাহে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে ঈদের এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঐতিহাসিক এ ঈদের জামাতে অংশ নিতে সদর উপজেলা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের কয়েকটি জেলার মুসল্লিরা আসেন। জামাতে ইমামতি করেন দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম শামসুল হক কাসেমি।

জানা গেছে, বৃহৎ এ জামাতকে ঘিরে পুরো ঈদগাহ ময়দানজুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করেন। মোট ১৭টি গেট মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে শুধুমাত্র জায়নামাজ ও ছাতা নিয়ে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা। ২৬টি সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। তথ্য বিভাগসহ বেসরকারিভাবে ১১০টি মাইক বসানো হয়। এ ছাড়া মুসল্লিদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

নামাজে অংশ নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হুইপ ইকবালুর রহিম ও প্রধান বিচারপতি (ভারপ্রাপ্ত) এনায়েতুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) তৌয়বুল আলম দুলাল, দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলতাফুজ্জামান মিতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সর্বস্তরের জনগণ।

জামাতের ইমাম মাওলানা সামশুল হক কাশেমি বলেন, এ পর্যন্ত ২৭টি ঈদের জামাতে ইমামতি করেছেন তিনি। আজ তার ২৮তম জামাত। তবে গোরে শহীদ বড় ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতে ২০১৭ সাল থেকে ইমামতি করে আসছেন। বিশাল এই জামাতে নামাজ আদায় করার মধ্যে মানুক প্রশান্তিসহ ধর্মীয় ফজিলত রয়েছে। মোনাজাতে দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।

নামাজ শেষে আয়োজক কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় হওয়ায় আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

জাতীয় সংসদ এর হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, নান্দনিক সৌন্দর্যমণ্ডিত গোরে শহীদ বড় ময়দানে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মিনারের ঈদুল ফিতরের বিশাল জামায়াতে লাখো মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন।

রংপুর জেলা থেকে ঈদের জামাতে আসা অলিউল ইসলাম ইসলাম বলেন, এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় ও দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতে নামাজ আদায় করার অন্য অনেক দিনে ইচ্ছে ছিল। আল্লাহ আজ সে আশা পুরণ করেছে। জীবনে প্রথম লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে পেরে ভালো লাগছে।

জেলার খানসামা উপজেলা থেকে নামাজ পড়তে আসা ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমি এর আগেও ঐতিহ্যবাহী এই ময়দানে নামাজ পড়েছি। সবাই মিলে একসঙ্গে লাখ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করলাম। সবাই মিলে নামাজ পড়ে বেশ ভালো লাগলো।

নামাজ শেষে ঈদগাহ মাঠের সমন্বয়ক, পৃষ্ঠপোষক ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ। এর আয়তন প্রায় ২২ একর। এবার দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন।

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থায়নে এ মাঠের সুন্দর মিনারটি নির্মিত হয়েছে। ভবিষ্যতে এটিকে আরও সুন্দর করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান ঈদগাহ মাঠের এ সমন্বয়ক।

ঈদের নামাজের আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) তৌয়বুল আলম দুলাল, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম।

জানা যায়, বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় ঈদগাহ মাঠের চিত্র নিয়ে এসে এ মাঠের নির্মাণ পরিকল্পনা করা হয়। সর্বপ্রথম মাঠের পশ্চিম প্রান্তে গত ২০১৫ সালে এ ঈদগাহ মাঠের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর পর এটি নামাজের জন্য পুরো প্রস্তুত করা হয়। এ ঈদগাহে রয়েছে ৫২টি গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে দু’টি মিনার, এর মধ্যের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এসব মিনার আর গম্বুজের প্রস্থ হলো ৫১৬ ফুট। দেশের বড় ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ ঈদগাহ মিনারটি। প্রত্যেকটি গম্বুজে দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক বাতি সংযোগ। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দুটির উচ্চতা ৩০ ফুট নির্মাণে নান্দনিক স্থাপনা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

উল্লেখ্য, আগে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। এখন দিনাজপুরের ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মাঠে সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৭ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে নির্মিত হয় দেশের বৃহত্তম দৃষ্টিনন্দন ৫২ গম্বুজের বিশাল ঈদগাহ মিনার। ২২ একর আয়তনের এই ময়দানে একসঙ্গে ৫ লক্ষাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।

মূলত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহের ২ প্রান্তের মিনার ৬০ ফুট এবং মাঝখানের দুটি মিনার ৫০ ফুট উচ্চতা। ইমাম দাঁড়ানোর স্থান মেহেরাবের গম্বুজের উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে ৪৯টি গম্বুজ। ৫১৬ ফুট দৈর্ঘ্যের ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক ইটে নির্মিত এবং প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে নয়নাভিরাম লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত