চট্টগ্রামে নতুন ব্রিজের এপার-ওপারে ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়!

| আপডেট :  ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৮  | প্রকাশিত :  ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:১৮


চট্টগ্রামে নতুন ব্রিজের এপার-ওপারে ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়!

সারাদেশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি


ইদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম নতুন ব্রিজের এপার ও ওপারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ একাধিক ভয়ংকর ছিনতাইকারী চক্র। এ জন্য ছিনতাইকারীরা অবলম্বন করছে নতুন নতুন কৌশল। রমজানের শুরু থেকেই একের পর এক ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে মইজ্জ্যারটেক আর নতুন ব্রিজ এলাকায়। এতে করে আতঙ্কে রয়েছেন ইদমুখী সাধারণ মানুষ।

প্রতি বছর ইদ এলেই বাকলিয়া থানাধীন নতুন ব্রিজের চৌরাস্তার মোড় আর কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জ্যারটেক মোড় এলাকায় প্রতারক চক্র, অজ্ঞান ও মলম পার্টি, চোর, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এই প্রতারক চক্র বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলকারী মানুষজনকে টার্গেট করে ছোবল মেরে নগদ অর্থসহ, স্বর্ণালংকার, মোবাইল সেট অথবা প্রয়োজনীয় মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে যায়।

চক্রটি দিনের বেলায় চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে মোবাইল ও স্বর্ণ অলংকার টেনে নিয়ে গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে পাল্টে যায় তাদের ছিনতাইয়ের ধরনও। অনেক সময় সিএনজি ভাড়া করে নিরিবিলি সড়কে এনে ড্রাইভার ও সিএনজি চালককে ছিনতাই করেন। নতুবা ড্রাইভারের ঘাড়ে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যান। রয়েছে ডাব ও পান খাওয়ানোর মতো নানা গল্পও।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পথচারী হওয়াতে অনেকেই মামলায় যেতে পারেন না। আবার অনেকেই মামলা করেন। তবে ইদকে ঘিরে যেন ছিনতাইকারীরা কোন সুযোগ নিতে না পারে তার জন্য নতুন ব্রিজ ও মইজ্জ্যারটেকে সারারাত পুলিশের টহল জোরদার করা জরুরি বলে মনে করেন। বিশেষ করে নজরে পড়ার মতো পোশাকধারী ডিবি পুলিশের উপস্থিতিও দাবি করেন অনেক যাত্রী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের চিহ্নিত অপরাধীদের সঙ্গে পাশের উপজেলাগুলো থেকে আসা চোর, ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। উল্লিখিত দুই স্পটে একাধিক ছিনতাই ও চোরচক্র চুরি ও ছিনতাই করার জন্য মাসিক-দৈনিক মজুরিতেও কিশোর-যুবকদের ভাড়া করছেন বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে।

গত তিন দিনে মইজ্জারটেক ও নতুন ব্রিজে চকরিয়ার এলাকার ফারুক ও বদরখালীর মফিজ মোবাইল ছিনতাইয়ের শিকার হলেও থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি। আবার পথচারী হওয়াতে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হতেও চাননি তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, এসব অপরাধীরা অপরাধ ঘটিয়ে সহজেই চট্টগ্রাম শহরের পাশের উপজেলায় চলে যান। আর কিছু চক্র মইজ্জ্যারটেকে কাণ্ড ঘটিয়ে শহরের বাকলিয়ায় পাড়ি দেন। নতুন ব্রিজের এপার ওপার অনেক ছিনতাইকারীর নিয়মিত ক্রাইম জোন। পুরো শহর জুড়ে রয়েছেই আরও বহু চক্র।

তবে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিনই নতুন ব্রিজের মোড়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু সেগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না। ছিনতাইকারীদের হাতে আহত ব্যক্তিরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে গেলে ঘটনা প্রকাশ পায়। কিন্তু আহত করে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে কম।

জানা যায়, চুরি ও ছিনতাইয়ের শিকার বেশিরভাগ মানুষই হয়রানি ও ঝামেলার আশঙ্কায় মামলা করেন না। এতে করে চুরি ও ছিনতাইয়ের মামলা হয় কম। মামলা হলেও চুরি ও ছিনতাইকৃত টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল উদ্ধার করতে পারে না পুলিশ। আবার কেউ কেউ মামলা করতে গেলেও থানা তা নেয় জিডি হিসেবে। এতে করে প্রকৃত ঘটনা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

মইজ্জ্যারটেক এলাকার পার্শ্ববর্তী শিকলবাহা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘ইদকে সামনে রেখে মইজ্জ্যারটেকে যাতে কোন ধরনের ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে এজন্য পুলিশের সর্বোচ্চ চেষ্টা রয়েছে। যেহেতু জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ সব সময় কাজ করছেন।’

জানতে চাইলে সিএমপি বাকলিয়া থানার ওসি মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘নিয়মিত অভিযানে ১৫ জনের অধিক ছিনতাইকারী ও অজ্ঞানপার্টির সদস্যকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। ইদকে সামনে রেখে জনগণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ সব সময় সক্রিয়। এবারও নতুন ব্রিজে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ডিবি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত এডি. ডিআইজি) মো. আলী হোসাইন বলেন, ‘ইদ এলেই ছিনতাইকারী, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইয়ের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড বা জনবহুল এলাকায় অভিনব কৌশলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ডিবি পুলিশের টহল জোরদার করা হবে।

বিবার্তা/জাহেদ/সউদ

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত