চলনবিলে চায়না দুয়ারী জালে অসহায় পোনা মাছ

| আপডেট :  ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৪:৪৭  | প্রকাশিত :  ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৪:৪৭


চলনবিলে চায়না দুয়ারী জালে অসহায় পোনা মাছ

সারাদেশ

সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি


এখন বর্ষাকাল। মৎস্য ভাণ্ডার নামে খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলায় নতুন বানের পানিতে ঝাক বেঁধে বিচরণ করছে অসংখ্য দেশি প্রজাতি মাছের পোনা। মৎস্য আইনে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও এক শ্রেণির মানুষ তা মানছেন না।

নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জালে নিধন করছেন নানা রকম দেশি প্রজাতি মাছের পোনা। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ ও জলজ প্রাণী। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র। এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।

তবে নির্দিষ্ট সময়ে বন্যার পানি থাকলে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন উপজেলা মৎস্য বিভাগ। মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে দেশের বৃহত্তম মিঠা পানি মাছের প্রধান উৎস চলনবিলে এখনো প্রায় ৪৪ প্রজাতি দেশি মাছ পাওয়া যায়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে পাশের দেশ ভারতেও রপ্তানি করা হয়।

উপজেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, প্রতি বছর এ উপজেলা থেকে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা হয় এর মধ্যে শুধু উন্মুক্ত জলাশয় থেকে বর্ষাকালসহ বছরে মাছ আহরণ করা হয় প্রায় সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন। বাকি মাছ পুকুর ও অন্যান্য জলাশয়ে চাষ করা হয়। উন্মুক্ত জলাশয় থেকে উৎপাদিত শুঁটকি মাছ ও চাষকৃত সাদা পাবদা মাছ পাশের দেশ ভারতে রপ্তানি করা হয়। যা বৈদেশিক আয়ের একটি উৎস এই চলনবিল।

সাধারণত শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ বিলে দেশি প্রজাতি মাছের প্রজননকাল। আষাঢ় মাসের শুরুতেই এ বছর বিলে পানি আসায় এবং পানি বেশি থাকায় পোনা মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। মৎস্য প্রজননের এই সময়ে মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও মানছেন না কেউ। এসব পোনা মাছ ধরার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে কিছু অসাধু মৎস্যজীবী। বানা, কারেন্ট জাল, চায়না জালসহ বিভিন্ন অবৈধ ফাঁদ পেতে অবাধে নিধন করছে মা ও পোনা মাছ।

মাছ শিকারের এসব ফাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো কথিত চায়না দুয়ারী জাল। মাছের পাশাপাশি চায়না দুয়ারী জালের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না কাঁকড়া, ব্যাঙ, কুইচা, সাপসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণী। এতে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণী, হুমকিতে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় পৌর এলাকার উত্তর দমদমা, দক্ষিণ দমদমা, ফলিয়া, হিয়ালা, কয়া, চৌগ্রাম, ডাহিয়া, কলম, তাজপুর ও শেরকোল ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় চায়না দুয়ারীসহ অবৈধ ফাঁদ পেতে পোনা মাছ নিধনের উৎসব চলছে।

এসব মাছ প্রকাশে বিক্রয় করছেন স্থানীয় বাজারে। উপজেলার ডাহিয়া বাজারের কৃষক আলহাজ জানান, প্রতিদিন সকালে মাছের বাজারে চায়না দুয়ারী জালে আটকা পড়া টাকি, শোল, কৈ, বোয়াল, ভেদা, শিং, মাগুর সহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের পোনা বিক্রয় করছেন এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা। উৎসুক হয়ে এসব মাছ কিনছেন কেউ কেউ। তিনি প্রশাসনের কাছে বন্ধের দাবি জানান।

চলনবিল পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সভাপতি মো. এমরান আলী রানা বলেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামাজিকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করে মাছ শিকারের সব ধরনের অবৈধ ফাঁদ বন্ধ করতে পারলে মাছ নিধন ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ধ্বংসের হাত থেকে চলনবিলকে রক্ষা করা সম্ভব।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন বলেন, চলতি অর্থ বছরের শুরুতেই গত ১৫ জুলাইয়ের আগে স্থানীয় বাজার গুলোতে ৮টি অভিযান ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ৭শত ৫০ মিটার চায়না দুয়ারী ও প্রায় দেড় লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়েছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৫ লাখ টাকা। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় মাছের বাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিলে বন্যার পানি থাকলে

মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি।

বিবার্তা/রাজু/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত