ছাত্রদল কর্মীকে মারধর

| আপডেট :  ২৯ জুন ২০২২, ০৯:৫৩  | প্রকাশিত :  ২৯ জুন ২০২২, ০৯:৫৩

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক ছাত্রদল কর্মীকে মারধর ও ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মোবাইল তল্লাশির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদসংলগ্ন মুরাদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার ওই ছাত্রদল কর্মীর নাম হামিদুল্লাহ সালমান। তিনি ইংরেজি বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের (২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র। অন্যদিকে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম ফরিদুর রেজা খান। তিনি হামিদুল্লাহ সালমানের সহপাঠী ও একই বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বরে চা পান করছিলেন হামিদুল্লাহ সালমান ও ফরিদুর রেজা। এ সময় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা সেখানে গিয়ে হামিদুল্লাহকে চত্বর সংলগ্ন যাত্রী ছাউনির পেছনে নিয়ে যান। তারা সেখানে হামিদুল্লাহকে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে তার এবং ফরিদুর রেজার মোবাইল তল্লাশি করা শুরু করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা হামিদুল্লাহকে উদ্ধার করেন।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে হামিদুল্লাহ সালমান বলেন, সন্ধ্যায় আমি ফরিদুর রেজাসহ মুরাদ চত্বরে চান পান করছিলাম। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ক্যাম্পাসের কিনা। আমি হ্যাঁ বললে আমার সঙ্গে কথা আছে বলে তারা একটু দূরে ডেকে নেয়। আমি সেখানে যাওয়ার পর ২০-২৫ জন অতর্কিত আমার ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে চড়-থাপ্পড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকে এবং বলতে থাকে ‘তুই ছাত্রদল করিস, তুই ক্যাম্পাসে কেন আসবি?’। আমি মাটিতে পড়ে গেলে তারা আমাকে পা দিয়ে মাড়াতে শুরু করে।

হামিদুল্লাহ সালমান আরও বলেন, এ সময় তারা আমার মোবাইলটি নিয়ে নেয় এবং ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ তল্লাশি শুরু করে। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা এলে তারা থেমে যায়। তারা জোর করে আমার জবানবন্দি নেয় এবং তার ভিডিও ধারণ করে।

সাংবাদিক ফরিদুর রেজা খান বলেন, হামিদুল্লাহর সঙ্গে আমার মুরাদ চত্বরে দেখা হয়। কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী হামিদুল্লাহ ডেকে একটু পেছনে নিয়ে গিয়ে মারধর শুরু করে। সেসময় তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে আমি হামিদুল্লাহকে তথ্য দিই, তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, তাকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছি। এসব বলে তারা আমাকে চার্জ করতে থাকে। তার সঙ্গে আমার যে কথোপকথন হয়েছে তারা তা দেখাতে বলে। একপর্যায় তারা আমার ফোনটি কেড়ে নেয়। এবং আধা ঘণ্টার মতো তারা ফোনটিতে তল্লাশি চালায়। এরপর সেখানে আসা এক সাংবাদিক নেতাকে আমি বিষয়টি জানালে তিনি সেখানে উপস্থিত শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির সঙ্গে কথা বলে আমাকে মোবাইলটি ফিরিয়ে দেন।

ফরিদুর রেজা আরও বলেন, পরবর্তীতে মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস ক্লাবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমার সঙ্গে ঘটা ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে পুরাবৃত্তি হবে না বলে তারা আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল মঙ্গলবার রাতে বলেন, যতটুকু শুনেছি ওই ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করে। নেতাকর্মীরা তা বুঝতে পেরে তাকে আটক করে। পরে ছেড়ে দেয়। উল্টো ওই ছেলে হুমকি-ধামকি দিলে তাকে আমরা প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তুলে দিই।

মারধরের প্রশ্নে সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, মারধরের ঘটনার বিষয়ে আমি জানি না। কিন্তু আমি যখন ছিলাম তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, সেদিনের ঘটনায় দুইজন সাবেক ছাত্রনেতা আমাকে ফোন করে বলে যে মুরাদ চত্বরে একজন ছাত্রকে আটকে রাখা হয়েছে। এ খবর শুনে সহকারী প্রক্টরদের পাঠালাম। একটু পর আমিও গেলাম। গিয়ে দেখি ওখানে কোনো মারামারির ঘটনা নেই। যে ছেলের কথা বলা হচ্ছে সে দাঁড়িয়েই কথা বলছিল। মারধরের কোনো অভিযোগ সে তখনও করেনি।

প্রক্টর আরও বলেন, বিশেষ একটি মিটিং থাকায় আমি সেখান থেকে চলে আসি। পরে আমাকে ফোন করে বলা হয় যে এটা মীমাংসা হয়ে গেছে। ঘটনা মীমাংসা হওয়ায় একজন শিক্ষক ও সাবেক এক ছাত্রনেতা আমাকে ফোন করে ধন্যবাদও জানিয়েছে। ওই ছেলে এখন পর্যন্ত আমার সঙ্গে দেখা করেনি। অভিযোগও করেনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত