জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ: ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি
নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারির পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে কথা বলেছে বিবার্তা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা বলেছেন, দীর্ঘদিন পর হলেও বাংলাদেশ থেকে ঘাতক, দালালদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বিবার্তাকে বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুধু বিরোধিতাই নয়; সেসময় তারা (জামায়াত) গণহত্যায় পাকিস্তানি আর্মিদের সহযোগিতা করেছে এবং নিজেরাও গণহত্যা চালিয়েছে। লুটপাট, ধর্ষণের মতো অজস্র ঘটনা ঘটিয়ে চরম মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল। সে কারণে স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সরকার যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। তিনি বলেন, কিন্তু জাতির দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করা সামরিক সরকার খুনি জিয়াউর সেই জামায়াতকে আবার রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। রাজাকারদের মন্ত্রিসভায় এবং স্বাধীনতাবিরোধীকে প্রধানমন্ত্রী বানায়। খুনি জিয়া কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে এই দেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করেছিলেন। দীর্ঘদিন পরে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করায় গোটা জাতি অত্যন্ত আনন্দিত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন- বলেন হানিফ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি আফজাল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ সময়ের দাবি ছিল। দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের দাবি এবং সে দাবি পূরণ হয়েছে। রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে অর্জিত যে বাংলাদেশ- সে বাংলাদেশে রাজাকার, আল বদর ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার থাকবে, সেটা কখনো হতে পারে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীতে যারা ছিল, জার্মানিতে আজও তাদের রাজনীতি স্বীকৃত না। সুতরাং রক্তে অর্জিত বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতিতে থাকুক এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশে যে যে দলই করুক না কেন মৌলিক কিছু বিষয়ে একমত থাকতে হবে। সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার চেতনার বিষয়ে ঐকমত্য থাকতে হবে। এখানে বিভাজিত হলে হবে না। দীর্ঘদিন পর হলেও বাংলাদেশ থেকে ঘাতক, দালালদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে। এজন্য সরকার অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এমপি বিবার্তাকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমি মনে করি, মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ- বিশেষ করে যারা শহিদ বুদ্ধিজীবী ছিলেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে। তারা জাতিরাষ্ট্র যে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের তালিকা করে ঘরে ঘরে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এদের মূল কারিগর ছিল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ছাত্র সংঘ। তিনি বলেন, পরবর্তীতে এরা নাম বদলালেও কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা সবসময় বাঙালি বিদ্বেষী ও জাতির অগ্রগতির বিরোধিতা করে গেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। এদেরকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ করে সরকার যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, আমি মনে করি এতে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হবে। আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বিবার্তাকে বলেন, দুনিয়ার কোনো ইতিহাসে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার অধিকার নাই। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে জার্মানিতে নাৎসিদের নাগরিকত্ব নাই। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যারা আমেরিকার দালালি করেছিল তারা এখনো সেই দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। তাদের জন্য রাজনীতি বহু দূরের বিষয়। বাংলাদেশে আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পরে তারা (জামায়াত-শিবির) শুধু রাজনীতি করেনি বরং হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছে। এ অবস্থায় আমরা বারবার বলে আসছিলাম এরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাসী দল, খুনিদের দল। এখন তাদেরকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করায় আশা করতে পারি তরুণ প্রজন্ম তাদেরকে চিনতে পারবে এবং তাদের সন্ত্রাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। তরুণ প্রজন্ম বুঝতে পারবে তারা যে ইসলামের কথা বলে তা গোলাম আযমের ইসলাম, মওদুদীর ইসলাম; মদিনার ইসলাম নয়। দেরিতে হলেও তাদের রাজনীতি বাংলার মাটিতে নিষিদ্ধ হয়েছে এজন্য সরকারকে অভিনন্দন। বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এমজে
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ: ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি
জাতীয়
বিবার্তা প্রতিবেদক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত