জীবন যখন যেভাবে যেমন

| আপডেট :  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১৫  | প্রকাশিত :  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:১৫

কেউ নিজের নয় মাসের ত্যাগ তিতিক্ষার ফসল কলিজার টুকরো সদ্য ভূমিষ্ট শিশুটিকে হারিয়ে অধিক শোকে পাথর হয়ে আছে!

কোনো স্ত্রী তার অন্তরের পরমাত্নীয় স্বামীর জন্য ভাত বেড়ে অপেক্ষা করছে-কবে তিনি অফিস থেকে ফিরবেন? কবে রসাত্মক ভালোবাসা ভরায় গল্পে মেতে উঠতে উঠতে ঢেকে রাখা ধোঁয়া উঠা গরম ভাতে ঘি দিয়ে খাবেন এক সাথে!

কোনো ছেলে আবার নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজেদের লাইফকে লাক্সারিয়াস করতে গিয়ে বৃদ্ধা জন্মধাত্রী মাকেই উটকো বোঝা ভাবে! মায়ের দেখাশোনা, বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকতে এতই অপারগ, তাকে আশ্রমে কীভাবে কত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে আসতে পারে সেই তোড়জোড়ে ব্যস্ত!
অন্যদিকে কোনো বাবা হয়তো জোর করে মেয়ের অমতে তার বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে টাকা-অর্থ-বিত্তের লোভে পড়ে, সমাজে একটা নাম খ্যাতি থাকবে এই আশায়, মাথা উচিয়ে হাঁটতে পারবে এই বা কম কি!

কোন পরিবার হয়তো রাত দিন রবের তালাশে, দ্বীনের ফিকিরে ব্যতি ব্যস্ত প্রোডাক্টিভ সময় কাটাচ্ছে! রবের সন্তুষ্টিই যেনো তাদের মেইন এন্ড আল্টিমেট গোল (Goal)!

কোনো পরিবার আবার পাঁচ তারকা হোটেলে গিয়ে ডিনার পার্টিতে নেচে গেয়ে বেড়াচ্ছে, পিশাচারের মতো নগ্ন উল্লাসে বুঁদ হয়ে আছে, কাড়ি কাড়ি টাকা ঢেলে অঢেল খাবার দাবার অপচয় করার মতো ফ্যাশনকে আঁকড়ে ধরে মরীচীকাময় জীবন-যাপনে অন্ধ!

কোনো সন্তান আবার মা-বাবা দুইজনকেই হারিয়ে এই নশ্বর-স্বার্থপর দুনিয়ায় একলা বেঁচে আছে, অলৌকিক এক আশায় বুক বেঁধে!

ইট পাথরের ইমারতের শহরের কোনো এক গলিতে প্যাডেল চালিয়ে দুই পয়সা কামাই করে দিনানিপাত করেও তুষ্টির নি:শ্বাস ফেলে এমন হাজারো রিকশাওয়ালা ও তার জীর্ণ শীর্ণ পরিবার!
ভার্সিটি পড়ুয়া কোনো ছেলে কিংবা মেয়ে সদ্য দ্বীনে প্রবেশ করেছে, কালচারাল অতি আধুনিক আল্ট্রা (ultra) মডার্ন ফ্যামিলির বিরুদ্ধে গিয়ে দ্বীন পালনে নির্ভীক সেও এক অন্যরকম, অবর্ণনীয় গল্পের মতো পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে নাফসের বিরুদ্ধে গিয়ে, শুধুমাত্র রবের ভালোবাসায় মত্ত হয়ে!
স্থায়ী সুখ আপেক্ষিক, আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে, টাকা পয়সা কাড়ি কাড়ি থাকলেই বুঝি সুখ! আবার না থাকলেই বুঝি অভাব-কষ্ট ভরপুর, সুখ বুঝি নেই!

এই ব্যাপারগুলো কিন্তু শতভাগ সত্য নয়!

সুখ উপলব্ধি করার, অনুভব করার মানসিকতার উপর ডিপেন্ড করে আপনি ভালো থাকবেন নাকি খারাপ! সেটা যেই অবস্থানই হোক না কেন?! এক্ষেত্রে নেগেটিভ বাট ভাইটাল রোল প্লে করে আমাদের এই তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থা! নোংরা বিশ্রি এক সংস্কৃতির চাপে পড়ে লোক দেখানোর খাতিরে অনেক কিছুই করতে হয়, তবে তা বাস্তবিক জীবনে মানসিক প্রশান্তি আনতে পারে না, আনলেও কিঞ্চিৎ! আর সবার উর্ধ্বে যে ব্যাপারটা না বললেই নয়- দায়িত্বশীলিতা বা দায়িত্ববোধের যথাযথ পালন, যার মাধ্যমে সম্পর্কগুলো তাসের ঘরের ন্যায় নড়বড়ে না হয়ে বরং আরো দৃঢ় আর মজবুত হয়, সুন্দর হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়!

সত্যিকারের ভালো থাকার যে মূলমন্ত্র না জানলেই নয়, তা হচ্ছে রবের প্রণীত জীবন ব্যবস্থার অনুসরণ, সর্বোপরি জীবনকে সুন্দর, সুখী, সম্মানিত, মার্জিত করতে এর বিকল্প নেই! প্রতিটা মানুষের জীবন গল্প ভিন্ন, প্রতিটা মানুষ ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে জীবন যুদ্ধে লড়াই করছে, কেউ জিতছে তো কেউ জীবনের কাছে নিজেকে সোপর্দ করতে বাধ্য হচ্ছে!
সত্যিই ❝জীবন যখন যেভাবে যেমন❞।

সম্পাদনায়: উজ্জল ফরিদ

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত