ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আ.লীগ: প্রস্তাবিত কমিটিতে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ!

| আপডেট :  ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৭:০২  | প্রকাশিত :  ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৭:০২


ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আ.লীগ: প্রস্তাবিত কমিটিতে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ!

রাজনীতি

বিবার্তা প্রতিবেদক


রাজধানী ঢাকায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তর শাখা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে দুই মহানগরে কমিটি গঠন করে দলটি। কমিটি গঠনের প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এখনো নতুন করে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি দিতে পারেননি মহানগর নেতারা। তবে দলের কেন্দ্র থেকে একাধিকবার তাগাদা দেয়ার পর সম্প্রতি ওয়ার্ড ও থানা কমিটির খসড়া তালিকা জমা দিয়েছেন দুই মহানগর নেতারা। আর দীর্ঘদিন পর গঠিত হতে যাওয়া নতুন এসব কমিটিতে কোটি কোটি টাকার পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করে আওয়ামী লীগ। এরপর ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন শুরু করে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে সেই সময় সম্মেলনের মাধ্যমে ইউনিট পর্যায়ে কমিটি হলেও ওয়ার্ড এবং থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হন মহানগর নেতারা। বারবার চেষ্টা করেও কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্যকে দুই মহানগরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একাধিকবার তাগাদা দিয়ে থানা ও ওয়ার্ড কমিটি করাতে পারেননি। সর্বশেষ ঈদুল আজহার আগে দুই মহানগরের শীর্ষ নেতারা থানা ও ওয়ার্ড কমিটির খসড়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিকট হস্তান্তর করেছেন।

জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। সেদিন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি এবং দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটি ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়। ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত হয়নি।

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীনে ২৬ থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ড রয়েছে। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৫ থানা ও ৭৫টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এসব থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গেলো দুই বছরে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সব ইউনিটের সম্মেলন করে কমিটি দেয়া হয়। তবে উত্তর ও দক্ষিণের সকল থানা ও ওয়ার্ডের বিভিন্ন সময়ে সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত থানা বা ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

জানা যায়, থানা ও ওয়ার্ডের কমিটি চূড়ান্ত করে জমা দিতে ২০২৩ সালের ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন ওবায়দুল কাদের। এতেও কাজ না হওয়ায় দলের উচ্চপর্যায় থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। পরে গত ৪ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর ও ১১ জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সব ওয়ার্ড-থানার প্রস্তাবিত কমিটির খসড়া তৈরি করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেন।

তবে অভিযোগ উঠেছে প্রস্তাবিত খসড়ায় থানা ও ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম রয়েছে তাদের অনেকেই বিরুদ্ধে রয়েছে রাজাকারপুত্র, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরোধী, বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সন্তান ও বিতর্কিত ব্যক্তি।

এছাড়া মামলার আসামি, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজ, হাইব্রিড এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত হয়ে বহিষ্কৃতদের নামও রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পদ-পদবি দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা।

এদিকে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে থানা ও ওয়ার্ড কমিটির খসড়া তালিকা হস্তান্তর করার পর থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগের পাহাড় জমেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরেও জমা পড়েছে অভিযোগ।

জানা গেছে, কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মহানগর দক্ষিণের ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি গিয়াস উদ্দিন। লিখিত অভিযোগে তিনি জানান, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক নেতা পুনরায় ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নগদ ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমি টাকা ফেরত চাই।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বিবার্তাকে বলেন, থানা-ওয়ার্ডের সভাপতি-সম্পাদক পদেই বেশিরভাগ পদপ্রত্যাশী থাকেন। আমরা কমিটিতে স্বচ্ছ, ত্যাগী এবং মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়দের নাম প্রস্তাব করেছি। যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত কমিটি অনুমোদন হবে। অনেকে অনেক ধরনের অভিযোগ করছেন, এসব ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বিবার্তাকে বলেন, কাউকে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে কমিটি থেকে কেউ বাদ পড়ছেন এমন শঙ্কা থেকে কেউ কেউ মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ করেন। টাকা নিয়ে পদ দেয়ার এসব অভিযোগের ভিত্তি নেই।

এদিকে প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতির বিরুদ্ধেও। পদ বাণিজ্যের এরকমই একটি অডিও রেকর্ড ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিবার্তা’র হাতে থাকা ওই অডিওতে শোনা যায়, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে ফোন করে দক্ষিণখান থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড নেতা আকবর আলী পদ পেতে ১০ লাখ টাকা দেয়ার বিষয়ে কথা বলছেন। কথোপকথনের একপর্যায়ে টাকা নিয়ে কথা ফোনে না বলে সরাসরি সাক্ষাতে বলার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমরা গত মাসে কমিটি জমা দিয়েছি। কমিটিতে বিতর্কিত কারো আসার সুযোগ নেই। কেন্দ্র থেকে যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা হবে।

তিনি বলেন, যে অডিও ভাইরাল হয়েছে এটি এডিট করা। আমি আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, ঈদের আগে কমিটি জমা পড়েছে। এসব কমিটিতে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। এখানে বিতর্কিত কেউ কমিটিতে আসতে পারবে না। খোঁজ-খবর নিয়েই কমিটি ঘোষণা হবে।

বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত