তাদের মূল টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ছাত্রী, এবার ঢাবি ছাত্রীকে নিয়েই ধরা

| আপডেট :  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৪১  | প্রকাশিত :  ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০২:৪১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে অপহরণের পর ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজন গ্রেফতার হয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন- শাকিল আহম্মেদ রুবেল (২৮), আকাশ শেখ (২২), দেলোয়ার হোসেন (৫৫) ও হাবিবুর রহমান। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, একটি ওয়ারলেস সেট, পুলিশ স্টিকারযুক্ত দুইটি মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোনসেট জব্দ করা হয়।

ডিবি জানায়, রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তিনি দেড় হাজারের অধিক ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি রুবেল নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করতেন। তার মূল টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীরা। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি প্রধান) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে রুবেল গত ১২ আগস্ট উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করেন। সেই মোটরসাইকেল পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করেন।

রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিবি প্রধান বলেন, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি রুবেলের বাড়ি গাজীপুরে। তবে তার আরও দুটি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। রুবেল ঢাকায় কোনো বাসা ভাড়া নেননি। রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করতেন। তারপর মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অপহরণ ও ছিনতাই করতেন। তিনি বলেন, গ্রেফতার রুবেল এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় হাজারের অধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ছিনতাইয়ের পর ৫০ জন মেয়ের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন বলে তথ্য পেয়েছি।

ছিনতাইয়ের জন্য রুবেল নির্জনস্থান বেছে নিতেন জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, নারীদের জোর করে মোটরসাইকেল উঠিয়ে রাজধানীর ৩০০ ফিট, দিয়াবাড়ী ও পূর্বাচলের নির্জন এলাকায় নিয়ে যেতেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ছিনতাইয়ের ৬টি মামলা রয়েছে। তাকে এবং তার সহযোগীদের রিমান্ডে এনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ঢাবির একজন শিক্ষার্থী কীভাবে এত সহজে রুবেলের খপ্পরে পরে যায়, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, রুবেলের হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই শিক্ষার্থী তাকে পুলিশ ভেবে নেন। তবে তিনি যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করতেন তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।

ছিনতাই করা রুবেলে পেশা নাকি নেশা?- এমন প্রশ্নে হারুন অর রশীদ বলেন, ছিনতাই রুবেলের পেশা ও নেশা দুটোই। তিনি পুলিশের ছদ্মবেশে এই কাজগুলো করতেন। আমাদের এটা বুঝতে বুঝতেই রুবেল দেড় হাজারের মতো ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, রুবেল একাধিকবার জেলে গিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ৬টি মামলাও রয়েছে।

তার তিন সহযোগীর কাজ কী ছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিতেন, আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগিতা করতেন। গ্রেফতার রুবেল ওয়াকিটকি ও পিস্তল কীভাবে পেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

গ্রেফতার রুবেলের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত আছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি প্রধান বলেন, আমরা রিমান্ডে এনে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। তার সঙ্গে আর কে কে জড়িত রয়েছেন তা জানার চেষ্টা করবো। গত ২৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকায় রিকশার গতিরোধ করেন মোটরসাইকেলে ‘পুলিশ’ স্টিকার লেখা এক ব্যক্তি। এরপর ওই ব্যক্তি ছাত্রীর হাতে থাকা একটি ব্যাগের দিকে তাকিয়ে কর্কশ ভাষায় বলতে থাকেন— ‘এ ব্যাগে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে। আপনাকে থানায় যেতে হবে’।

কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে রিকশা থেকে নামিয়ে ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে দ্রুতগতিতে ছুটতে থাকেন ওই ব্যক্তি। এরপর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ীর নির্জন এলাকায় নিয়ে ছুরিকাঘাতের ভয় দেখিয়ে ওই ছাত্রীর গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন, কানের দুল ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় তুরাগ থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী ঢাবির ছাত্রী।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত