তিন যুবক নিহত, আহত ৯; তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ

| আপডেট :  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭  | প্রকাশিত :  ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৭


তিন যুবক নিহত, আহত ৯; তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি


খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন নয় জন।

এ ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদরের খবংপুড়িয়াসহ আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) রিপল বাপ্পী চাকমা। তিনি জানান, তাদেরকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছে। আহতদের কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ছিল।

নিহতরা হলেন- জুনান চাকমা (২০), ধর্মজয় চাকমা (৫০) ও রুবেল (৩০)। জুনান চাকমা ও রুবেলের বাড়ি খাগড়াছড়ি সদরে এবং ধর্মজয় চাকমার বাড়ি দীঘিনালায় বলে জানা যায়।

উত্তপ্ত পাহাড়ে শেষ নেই ভীতি-উদ্বেগ-উৎকন্ঠার। ফলে আতঙ্কিত বসবাসকারীরা। খাগড়াছড়িতে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। নিহতদের মরদেহ খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তুলনামূলক কম আহতদের চিকিৎসা খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে (আনুমানিক সাড়ে ১০টার পর) খাগড়াছড়ি সদরের নারাঙহিয়া, উপালি পাড়া ও স্বনির্ভর এলাকায় ব্যাপক গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আহতবস্থায় রাতে ১২ জনকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়। চারজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। তবে কাদের সাথে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তা কেউ নিশ্চিত করেনি।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি শান্ত করতে জেলাজুড়ে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসন কাজ করছে। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলার দীঘিনালায় দুইপক্ষের বিরোধের জের ধরে লারমা স্কোয়ার বাজারে ৬০ টির অধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সে আগুনে পুড়ে যায় দোকানপাট। আহত হন পাঁচজনের অধিক স্থানীয় বাসিন্দা।

ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা ঘটনাস্থল পরির্দশন করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার অনুরোধ জানিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানান। শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি সদরের ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে তারা মাঠে আছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এছাড়া বিকেল ৪টায় সময় সর্বজনীন মিটিং রয়েছে বলে জানান।

অন্যদিকে, তিন পার্বত্য জেলায় ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি- খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা, খুন ও বিহার-ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।

এছাড়া দলটি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার আয়োজিত সমাবেশ থেকে ঘোষিত তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছে।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর ) সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে ইউপিডিএফের সহসভাপতি নতুন কুমার চাকমা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি হামলাকে বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে বলেন, গতকাল খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদরে বাস স্টেশনের বটতলা লারমা স্কোয়ারে মিছিল সহকারে এসে পাহাড়িদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে দোকান-ঘরবাড়িসহ একটি বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করে।

এদিকে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাঙামাটিতে ‘সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের’ উদ্যোগে দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজন করা হলে পাহাড়িদের দোকানপাট ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।

বিবৃতিতে ইউপিডিএফ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর পাহাড়িদের ওপর এ ধরনের বর্বর হামলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তার সরকার এ হামলার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর অসংখ্য সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার কোন বিচার আজও হয়নি। হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এমন হামলা পাহাড়িদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।

অবিলম্বে পাহাড়িদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত এবং আহত-নিহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের  জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে তিনি ঢাকায় বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার আহুত তিন পার্বত্য জেলায় আগামীকাল (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে ৭২ ঘণ্টা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানান এবং এই কর্মসূচি সফল করতে নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের নিরন চাকমা প্রেরিত এক  বার্তায় এ তথ্য জানান সংগঠনটি।

বিবার্তা/মামুন/রোমেল/এমজে

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত