তুমব্রু-ঘুমধুম থেকে অস্থিরতা যাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে

| আপডেট :  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৪  | প্রকাশিত :  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭:২৪


তুমব্রু-ঘুমধুম থেকে অস্থিরতা যাচ্ছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে

কক্সবাজার প্রতিনিধি


বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের পূর্ব পশ্চিমকুল এলাকায় খাইরুল আমিনের (৩৫) বাড়ি। ৩০০/৪০০ মিটারের মধ্যে মিয়ানমারের রাইট ক্যাম্প। দু’দিন আগেও যেখানে গোলাগুলির বিকট শব্দে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিলেন সেখানে দু’দিন ধরে শোনা যাচ্ছে না কোন গোলাগুলির শব্দ।

৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব কথা বলছিলেন খাইরুল।

তিনি বলেন, কালকেও কোন গোলাগুলির শব্দ শুনা যায়নি। আজকেও একদম শান্ত সীমান্ত। কিন্তু তারপরও ভয়ে আছি। কখন না কখন আবার গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়।

তুমব্রুর উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, দু’দিন ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে না। আমার পরিবারের সবাই ঘরে আসছে। আমরা এখন ভালো আছি। কিন্তু তারপরও একটা ভয় কাজ করছে আবারও কি গোলাগুলি শুরু হবে! আবারও কি মর্টার শেল এসে পড়বে! এগুলো নিয়ে আমরা সবাই এখন চিন্তিত।

সীমান্তের কোনারপাড়ার ছেনোয়ারা বেগম (৪০) বলেন, বাবা কি বলবো দু’জন মারা গেছে এই ভয় এখনো কাটেনি। ওখানে কি হচ্ছে সেটাতো জানি না। আবারও গোলাগুলি শুরু হবে কিনা। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ড জয়পায়তলি এলাকা। যেখানে মিয়ানমার থেকে আসা মর্টার শেল বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায় দু’জন। সেই এলাকার ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার আশপাশের এলাকায় কোন গোলাগুলির আওয়াজ আজকে শোনা যায়নি। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল তারা ঘরে ফিরেছে। কিন্তু আমার এলাকায় যেহেতু দুজনের মৃত্যু হয়েছে সেহেতু এলাকাবাসী খুবই আতঙ্কিত। এখনো আতঙ্ক কাটেনি এলাকাবাসীর।

ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্ত দু’দিন ধরে শান্ত থাকলেও আস্তে আস্তে অস্থিরতা যাচ্ছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের দিকে। গোলাগুলির বিকট শব্দে ঘুম ভাঙছে সীমান্তের মানুষের।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫ টার দিকে হঠাৎ মুহুর্মুহু গুলির বিকট শব্দ ভেসে আসে সীমান্ত থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে উখিয়ার থাইংখালীতে। সবার ভেঙে যায় ঘুম। তখন মাইকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল। মাঝখানে আসছিল গুলির বিকট শব্দও।

থাইংখালীতে বসবাস করা সালাউদ্দিন কাদেরী বলেন, কয়েকদিন ধরে গুলির বিকট শব্দে ঘুমাতে পারি না। ঘুম থেকে উঠতে হয় চমকিয়ে চমকিয়ে। আমরাতো সীমান্ত থেকে দূরে। সীমান্ত এলাকার মানুষ এগুলো কিভাবে সহ্য করছে চিন্তা করে দেখেন।

সালাউদ্দিন কাদেরীর স্ত্রী হুমাইরা বলেন, আমি যখন নামাজ আদায় করছিলাম তখন গুলির বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিলাম। এতোটা ভয় পেয়েছিলাম বলার ভাষা নেই।

এদিকে এর আগে বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সীমান্ত পরিস্থিতি দেখতে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্ত এবং তৎসংলগ্ন বিওপি পরিদর্শন করেন।

পরে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি প্রধান সাংবাদিকদের সীমান্ত পরিস্থিতি তুমব্রু-ঘুমধুম থেকে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তের দিকে চলে যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তুমব্রু-ঘুমধুমে গোলাগুলির শব্দ কম শোনা যাচ্ছে। তুমব্রু-ঘুমধুম বিওপির বাইরেও অন্যান্য বিওপি এলাকাতেও সংঘাতের সম্ভাবনা আছে। সেখানে গোলাগুলি হয়েছেও, হচ্ছেও। তবে আমরা এখন থেকে মানুষকে আতঙ্কিত করতে চাই না। সীমান্ত এলাকার মানুষকে সরে যেতে বলছি না। যদি ঝুঁকিপূর্ণ এরকম অবস্থা হয় তাহলে স্থানীয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে আমরা জনগণের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেটা নিশ্চিত করব।

বিবার্তা/ফরহাদ/জবা

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত