দুই লাখ বিও হিসাব বন্ধ হলো

| আপডেট :  ২৬ জুন ২০২২, ০৮:০১  | প্রকাশিত :  ২৬ জুন ২০২২, ০৮:০১

হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বকেয়া ফি না দেয়াসহ আরো বেশকিছু কারণে গত ১০ বছরে পুঁজিবাজারে দুই লাখ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রীর কাছে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের প্রশ্ন ছিল গত ১০ বছরে দুই লাখ বিও হিসাব বন্ধ করে দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে গেছে ১০ লাখ বিনিয়োগকারী। লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়েছে। সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে এরই মধ্যে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা তা অর্থমন্ত্রীর কাছে জানতে চান এ সংসদ সদস্য।

প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থমন্ত্রী জানান, পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচার জন্য বিও হিসাব খোলা হয়। এক্ষেত্রে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে এ হিসাব পরিচালনার জন্য বছরে ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়, যার মধ্যে সরকার ৪৫০ টাকা এবং বাকি ৫০ টাকা স্টক ডিলার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আনুপাতিক হারে ভাগাভাগি করে নেয়। গত ১০ বছরে অন্যদের মধ্যে মূলত হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের বকেয়া ফি জমা না দেয়ার কারণে এই দুই লাখ বিও হিসাব বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া বিও হিসাব খোলা বা বন্ধ করা অনেকাংশে বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে অবৈধভাবে বেনামে বেশকিছু বিও হিসাব খোলা হয়েছিল, যা বন্ধ হয়েছে। বর্তমানে আনুপাতিক হারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) শেয়ার বিনিয়োগকারীরা পেয়ে যাচ্ছে বিধায় যাদের একাধিক বিও হিসাব ছিল তা এখন আর প্রয়োজন হচ্ছে না বলেই বিও হিসাবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, আইপিও আবেদনের জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম ১ লাখ টাকার বিনিয়োগ থাকতে হবে। পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়ানো, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলা ও প্রকৃত বিনিয়োগকারীদের আইপিও আবেদনে সুযোগ করে দিতে এ বিনিয়োগ সীমা আরোপ করা হয়েছে। এতে আইপিওকেন্দ্রিক অনিয়মিত বিও হিসাবের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অতীতে অনেকে আইপিও শেয়ার পাওয়ার জন্য অসংখ্য বিও হিসাব খুলত, যাদের বড় অংশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের অভ্যাস বা আকাঙ্ক্ষা ছিল না। বরং আইপিও থেকে পাওয়া শেয়ার বিক্রি করে দ্রুত মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। এতে পুঁজিবাজারে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির সুযোগ ছিল।

অর্থমন্ত্রী প্রশ্নের জবাবে সংসদকে আরো জানান, একটি দক্ষ, কার্যকর ও স্বচ্ছ পুঁজিবাজার নিশ্চিত করতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আইপিওতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের জন্য আবেদনে নতুন নিয়মে অসংখ্য বিও হিসাবের সংখ্যা সাময়িকভাবে কিছুটা কমে গেলেও প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমার কোনো আশঙ্কা নেই। বরং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের অভ্যাগ গড়ে উঠবে এবং বাজারে প্রকৃত বিনিয়োগকারীর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে বাড়বে।

সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২৩ জুন শেষে পুঁজিবাজারে সক্রিয় বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৭০ হাজার ৭৭১। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৫৪ আর নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৬০০। এসব বিও হিসাবের মধ্যে ১৪ লাখ ১ হাজার ৪৭টি ছিল একক ব্যক্তির বিও হিসাব এবং ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৭টি যৌথ বিও হিসাব। এ সময়ে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৭৭ হাজার ৪৯৫টি এবং অনিবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ৭৭ হাজার ৫৯টি। ২০ লাখ ৭০ হাজার ৭৭১টি সক্রিয় বিও হিসাবের মধ্যে শেয়ার ছিল এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ৫১০টি। কোনো শেয়ার নেই এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮৪টি। কখনই ব্যবহূত হয়নি এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৭৭।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত