দুষ্কৃতিকারীদের ভয়ে চারতলা থেকে নবজাতককে ফেলেন মা, বাঁচায় পুলিশ

| আপডেট :  ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১২  | প্রকাশিত :  ০২ আগস্ট ২০২৪, ০৯:১২


দুষ্কৃতিকারীদের ভয়ে চারতলা থেকে নবজাতককে ফেলেন মা, বাঁচায় পুলিশ

সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি


নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জে কোটা আন্দোলনের নামে গত ২০ জুলাই, শুক্রবার দুষ্কৃতিকারীদের দেয়া আগুন একটি ক্লিনিকে ছড়িয়ে পড়ে।

ক্লিনিকের চারতলায় তখন দুই প্রসূতি মা তাদের সদ্য ভূমিষ্ট দুই নবজাতককে বাঁচতে ব্যাকুলপ্রাণ। নিচে থাকা পুলিশের আহ্বানে মায়েরা তখন হসপাতালের চারতলার জানালা দিয়ে দুইদিন বয়েসী দু’টি নবজাতককে তাদের দিকে ছুড়ে দেয়, আর দক্ষতার সঙ্গে পুলিশ ধরে দুই নবজাতককে রক্ষা করতে সক্ষম হয়।

গত ২০ জুলাই, শুক্রবার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলের হাজী ইব্রাহীম খলিল কমপ্লেক্সে আন্দোলনকারীরা হামলা চালায়। এ ভবনের আট তলায় শিল্প পুলিশের একটি ক্যাম্প ছিল। দুস্কৃতিকারিদের টার্গেট ছিলো এ পুলিশ ক্যাম্প।

এ ক্যাম্পে তখন অবস্থান করছিল ৩২ জন পুলিশ। এ পুলিশদের হত্যা করতে তারা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভবনের তৃতীয় তলায় ছিলো ডাচ বাংলা ব্যাংক। চতুর্থ তলায় বেসরকারি ক্লিনিক ‘মা হসপিটাল এন্ড ল্যাব’।

সেদিন সেখানে ছিলেন দুইজন সদ্য প্রসূতি। তাদের দু’জনের সন্তানের বয়সই সেদিন ছিলো মাত্র দুইদিন। বাচ্চা প্রসবের জন্য এনেসথেসিয়ার প্রভাবও কাটেনি। ধোঁয়ায় পুরো ক্লিনিক অন্ধকার হয়ে যায়। পা রাখা যাচ্ছিলো না ক্লিনিকের ফ্লোরে। সিঁড়ি নিয়ে নামার উপায় নেই।

কারণ সিড়িতে আগুন। অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে ক্লিনিকের একটি জানালা ভেঙে ফেলেন এক ডাক্তার। পুলিশের কাছে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে তাদের রক্ষার আবেদন জানান। এসময় পুলিশের একটি দল এসে টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ছুড়ে আন্দোলনকারিদের কিছুটা দূরে সরিয়ে দেয়।

ফায়ার ব্রিগেড আসতে পারছিল না আন্দোলনকারীদের বাধায়। তারা ফায়ার ব্রিগেডের উপরেও হামলা চালায়। পুলিশ, পাশের জঙ্গল রেস্টুরেন্টের দোতলার ছাঁদে উঠে ক্লিনিকের বিছানার চাঁদর, পর্দা বেঁধে ঝুলে নিচে নেমে আসতে বলেন ক্লিনিকে আটকে পড়াদের। আর দুই নবজাতককে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে দিতে বলেন। বলছিলেন গৃহবধূ শাবনুর।

শাবনুর বললেন, ‘ভাই একজন মায়ের জন্য তার দুইদিন বয়েসি বাচ্চাকে ছুড়ে দেয়া কী কষ্টের তা যাদের এমন ছোট বাচ্চা আছে তারাই বুঝতে পারবেন। বুঝতে পারছিলাম এখানে আটকে থাকলে আমি আর বাচ্চা দু’জনেই মারা যাবো। তাই বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে নিচে ছুড়ে দিলাম। নিচে জঙ্গল রেস্টুরেন্টের ছাঁদে দাঁড়িয়ে বাচ্চাকে ধরে বাঁচান একজন পুলিশ। আমি নেমে আসি পর্দা ধরে ঝুলে, বেঁচে যাই। ওইদিন পুলিশ না আসলে এই ভবনের ডাচ বাংলা ব্যাংকে আটকে পড়ে মারা যাওয়া তিন শ্রমিকের মতো আমাদের লাশও হয়তো আপনারা উদ্ধার করতেন।’ আবেগময় কন্ঠে বললেন- সিদ্ধিরগঞ্জের মজিববাগ এলাকার সামসুল হকের বাড়ির বাসিন্দা গার্মেন্টস শ্রমিক মোমেন মিয়ার স্ত্রী শাবনূর। ছুড়ে দেয়া সেই মেয়ে বাচ্চার নাম রেখেছেন মায়মুনা বিনতে আনাবিয়া।

একই বর্ণনা দিলেন খাদিজা আক্তার। তার স্বামী শফিকুল ইসলাম থাকেন জর্ডান। সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজির পাইনাদি নতুন মহল্লায় তারা ভাড়া থাকেন। খাদিজা বললেন, ‘এখনো তার বাচ্চা ঠান্ডা-এলার্জিসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছে। হতে পারে সেদিন দম আটকানো আগুনের ধোঁয়ার কারনে হয়তো এ অবস্থা। তবু সান্তনা আমাদের বাচ্চাগুলো বেঁচে গেছে। পুলিশ না আসলে বাচ্চাগুলো বাঁচতো না। আমারাও বাঁচতাম না।’

ঘটনার দিন ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন শিল্প পুলিশের এসআই নূর মিয়াসহ ৩২ পুলিশ। এছাড়া এই ভবনের ৯ তলার বাসিন্দা আরো এক পরিবারের শিশুসহ তিনজন ও আরো দুই মহিলা আশ্রয় নেন।

নূর মিয়া জানান, আগুন আস্তে-আস্তে নয়তলায়ই এসেছিলো। র‌্যাব আমাদের হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। নইলে হয়তো আমরা বাঁচতে পারতাম না। আগুনে পুড়ে মারা যেতাম।

জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জামায়াত-শিবিরের ২৪ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিবার্তা/এসবি

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত