দেশীয় অগ্নিনিরাপত্তা শিল্পে উৎপাদন বাড়াতে সহায়তার আশ্বাস গণপূর্ত মন্ত্রীর
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, দেশীয় অগ্নিনিরাপত্তা ও সুরক্ষা শিল্পের উৎপাদন বাড়াতে এ খাতের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের সহায়তা দেওয়া হবে। তাদের দাবি অনুযায়ী সম্ভব হলে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড সংশোধন করা হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ইলেক্ট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসাব) গোলটেবিল বৈঠকে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে কারখানা, আবাসন ও সরকারি অবকাঠামোসহ মেগাপ্রকল্প সমূহে অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি)-২০২০ সংশোধনীসহ সমন্বিত কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি শিল্প খাতের নেতারা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে অগ্নি নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ ও সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফায়ার সেবা ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তার বক্তব্যে ঘটে যাওয়া কিছু অগ্নি দুর্ঘটনা এবং শিল্পকারখানায় অগ্নি নিরাপত্তার তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেক সবুজ কারখানা নির্মাণ বাংলাদেশের একটি গর্বের জায়গা ঠিকই, তবে নন-আরএমজি খাতে অগ্নি নিরাপত্তা উপেক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস প্রতি বছর গড়ে ২২ হাজার ৩০০ অগ্নিকাণ্ডে ডাক পেয়েছে। কিন্তু গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে অগ্নিদুর্ঘটনা বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার ৭০৩টি। আবার প্রতি বছর অগ্নি দুর্ঘটনায় গড়ে যেখানে ১৪৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে, সেখানে গত বছর প্রাণহানি ইতিবাচকভাবে ১০২-এ নেমে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ডিজি বলেন, অগ্নিদুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ৩৬৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু গত বছর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৭৯৩ কোটি টাকার। গত বছর প্রায় ৩৬ শতাংশ অগ্নিকাণ্ড বিদ্যুৎজনিত কারণে হয়েছে। অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের দায়িত্ব সবাইকে ভাগ করে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস নয়, সব শ্রেণির মানুষের সচেতনতা, অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত এবং মানসম্পন্ন সরঞ্জাম ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। তিনি বলেন, ফায়ার কোডের অনুপস্থিতি যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি বিল্ডিং কোড স্ট্যান্ডার্ড ও আইন মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সচেতন হলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো। অনুষ্ঠানে মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির বলেন, একসময় আগুন নেভানোর জন্য শুধুমাত্র পুকুরের পানির ওপর নির্ভর করা হতো। কিন্তু এখন অনেক যান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। আমাদের সম্পদ রক্ষায় অগ্নি নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা অপরিহার্য। তাই জনগণের কষ্টের টাকায় তৈরি দালান-কোঠা আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে-এটা কাম্য নয়। তাই যান্ত্রিক কৌশল, দক্ষতা ব্যবহার করে বাংলাদেশেই অগ্নি নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি উৎপাদন করতে পারলে আমরাই উপকৃত হবো। মন্ত্রী বলেন, অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির উৎপাদন বাড়াতে ব্যবসায়ীদের দাবিগুলোর সারসংক্ষেপ আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠালে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। স্বল্প খরচে আরও সুরক্ষার যে কোনো প্রস্তাব সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখবে। সরকার এ বিষয়ে খুবই ইতিবাচক। গোলটেবিলের সঞ্চালক ছিলেন ইসাবের সেক্রেটারি জেনারেল জাকির উদ্দিন আহমেদ। তিনি অগ্নি নিরাপত্তা ও সুরক্ষা শিল্পের বিকাশের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড সংশোধনের জন্য মন্ত্রীর কাছে দাবি উত্থাপন করেন। গোলটেবিল বৈঠকে ইসাব’এর সভাপতি মো. নিয়াজ আলী চিশতী বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মধ্যে অগ্নি নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্বারোপ করেন। গোলটেবিল বেঠকের ওই আলোচনায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, এফইবিওএবি, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধি ও নেতারা উপস্থিত ছিলেন। নবম আন্তর্জাতিক ফায়ার সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এক্সপোর অংশ হিসেবে সেমিনারটি হয়েছে। শনিবার এক্সপো উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বিবার্তা/সউদ
দেশীয় অগ্নিনিরাপত্তা শিল্পে উৎপাদন বাড়াতে সহায়তার আশ্বাস গণপূর্ত মন্ত্রীর
জাতীয়
বিবার্তা প্রতিবেদক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত