নাহিদকে কোপানো কে এই ছাত্রলীগকর্মী ইমন?

| আপডেট :  ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৫  | প্রকাশিত :  ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১০:৩৫

রাজধানীর নিউমার্কেটে সংঘর্ষের সময় নাহিদ ও মুরসালিনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ইমন বাসার ওরফে ইমনকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হলের ১০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার বাসা খুলনার পাইকগাছায়।

রোববার (২৪ এপ্রিল) এসব তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ডিবি পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নিথর পড়ে থাকা একটি দেহের ওপর নির্মমভাবে কোপাচ্ছে এক যুবক। হেলমেট পরা যুবকের নাম ইমন। তিনি ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। থাকতেন ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হলের ১০১ নম্বর কক্ষে।

তদন্তকারীদের তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত নিহত নাহিদ ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের পক্ষ হয়ে সংঘর্ষে জড়ান। একটি বড় ছাতা হাতে তাকে সংঘর্ষের একদম সামনে অন্তত দুই ঘণ্টা ধরে দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে ইটের আঘাতে আহত হয়ে সড়কে পড়েন নাহিদ। এরপর তার ওপর নির্মম হামলা চালায় হেলমেটধারী কিছু যুবক।

ইমনকে খুঁজতে এরই মধ্যে আজ (রোববার) বিকেলে ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হলের ১০১ নম্বর কক্ষে যৌথভাবে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

ডিবি-র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানা যায়, অভিযানে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে ইমনকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে খুঁজতে এখনো অভিযান চলমান।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলার তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। নিহত নাহিদ ও মুরসালিনকে কোপানো কয়েকজনকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা কলেজের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ডিবি ও র‌্যাবের অভিযানে দুটি মোবাইলসহ একজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। আটক শিক্ষার্থীর নাম জহির হাসান জুয়েল। তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

গত ১৮ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা চলে এ সংঘর্ষ। এরপর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পরদিন ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টার পর থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া সংঘর্ষের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের একজন কুরিয়ারকর্মী, অন্যজন দোকান কর্মচারী।

সংঘর্ষের সূত্রপাত নিউমার্কেটের ভেতরে থাকা ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামের দুই দোকান কর্মচারীর দ্বন্দ্ব থেকে। সেই দোকান দুটি সিটি করপোরেশন থেকে মকবুলের নামে বরাদ্দ রয়েছে। তবে কোনো দোকানই নিজে চালাতেন না মকবুল। রফিকুল ইসলাম ও শহিদুল ইসলাম নামে দুজনকে ভাড়া দিয়েছেন দোকান দুটি। রফিকুল ও শহিদুল পরস্পর আত্মীয়।

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে করা হয়। দুই মামলায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১২০০ জনকে আসামি করা হয়।

এছাড়া সংঘর্ষে নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন ও মুরসালিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন। এই চার মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে। তবে তিনটি মামলার মধ্যে শুধু পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি নেতা মকবুলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ মামলার বাদী নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক ইয়ামিন কবীর।

মকবুল হোসেন ছাড়াও এ মামলায় আরও যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, জাপানি ফারুক, মিজান বেপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, তোহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত