পরিকল্পনা কমিশনের ৫২ নির্দেশনা

| আপডেট :  ৩০ মার্চ ২০২২, ০৯:৩৪  | প্রকাশিত :  ৩০ মার্চ ২০২২, ০৯:৩৪

আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) তৈরির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবার প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কড়াকড়িসহ ৫২টি নির্দেশনা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। ১০ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে সংস্থাটি।

তবে এসব নির্দেশনা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো মানবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, প্রতি বছর এমন নির্দেশনা দেওয়া হলেও এর কতটুকু বাস্তবায়ন হয়- সেটার কোনো মূল্যায়ন করা হয়নি। এসব নির্দেশনা না মানলে শাস্তি অথবা মানলে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় কর্মকর্তাদের মধ্যে শৈথিল্য দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী রোববার বলেন, আমরা শুধু নির্দেশনা দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। প্রথমবারের মতো বাজেট তৈরির সঙ্গে যুক্ত ৫৮টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ধারাবাহিক (সিরিজ) বৈঠক করেছি। তাদের বলেছি- এসব নির্দেশনা মানতেই হবে। একইসঙ্গে তদারকি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। নির্দেশনা দিয়ে আমরা দায়িত্ব শেষ করেছি-বিষয়টি এমন নয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এমন বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হবে সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা নির্দেশনা জারির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে বৈঠক করে তাগিদ দেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু আচরণ পরিবর্তনে এ ধরনের তাগিদ কতটা কার্যকর হবে সেটি নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। তিনি বলেন, নির্দেশনা না মানলে কে দায়ী থাকবেন এবং কী ধরনের শাস্তি ভোগ করবেন-সে ব্যাপারে নীতিমালা জারি করা হলে গেম চেঞ্জের মতো সম্ভাবনা থাকত।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়-উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করে দারিদ্র্য হার কমানোর জন্য সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এসব পরিকল্পনার লক্ষ্য-জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। ২০২১-৪১ সাল পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া বর্তমান সরকার শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দিতে কাজ করছে। একইসঙ্গে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়ন নীতি-কৌশল তৈরি করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়নের লক্ষ্য অর্জনের প্রধান মাধ্যম হলো এডিপি। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপি তৈরির সময় খাতওয়ারী বরাদ্দ বিভাজন, অনুমোদিত প্রকল্প, বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প যুক্ত করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

নিজস্ব অর্থায়নপুষ্ট প্রকল্প, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) প্রকল্প এডিপি অন্তর্ভুক্তি এবং বরাদ্দ প্রস্তাব পাঠানো ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে এডিপির আকার ও অর্থনৈতিক সেক্টর/সাব সেক্টর/প্রকল্পওয়ারী বরাদ্দ বিভাজন এবং অনুমোদনের ক্ষেত্রে পাঁচটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এডিপি তৈরির জন্য ১১টি সাধারণ নির্দেশনা রয়েছে। এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ২০টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে ১৬টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নির্দেশনা হলো-প্রকল্পভিত্তিক অর্থবরাদ্দের ক্ষেত্রে যেনতেন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া যাবে না। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ (ফার্স্টট্র্যাক) প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুধু অনুমোদিত ও এএমএসে (এডিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) অন্তর্ভুক্ত প্রকল্প এডিপিতে বরাদ্দসহ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে।

অনুমোদনের আদেশ ও প্রশাসনিক আদেশ জারি হয়নি-এমন নতুন অনুমোদিত প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। চলতি উন্নয়ন প্রকল্পের সময়ানুগ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানীয় মুদ্রায় বরাদ্দ নিশ্চিত করার পরই কেবল অপরিহার্য নতুন অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য স্থানীয় মুদ্রায় বরাদ্দ প্রস্তাব করতে হবে। এছাড়া আগামী অর্থবছরে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত অননুমোদিত নতুন প্রকল্প যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। এরপর অর্থায়নের জন্য নতুন প্রকল্প বরাদ্দ (থোক) এ নতুন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৫ শতাংশ অর্থের সংস্থান রাখতে হবে।

আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা-চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত তালিকাভুক্ত কোনো প্রকল্প আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তুর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও কাক্সিক্ষত সুফল পেতে এডিপিতে নতুন প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে চলমান প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে-এমন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কার্যক্রম দ্রুত করতে হবে। মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া এসব প্রকল্পে আগামী এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকা যোগ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রস্তাব করতে হবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত