পরিক্ষার্থীকে দিয়ে সাড়ে ১৩শ কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র মুদ্রণ!

| আপডেট :  ১২ মে ২০২২, ১০:০৬  | প্রকাশিত :  ১২ মে ২০২২, ১০:০৬

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) বিভিন্ন পদে চলছে নিয়োগ কার্যক্রম। প্রায় সাড়ে ১৩শ কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে। সংস্থাটিতে কর্মরত মাস্টার রোলের এক কর্মচারী ও তার স্ত্রীও নিয়োগপ্রার্থী। কিন্তু ওই কর্মচারীকে দিয়েই বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কম্পিউটার কম্পোজ ও মুদ্রণ করানো হয়েছে। ফলে শুধু ওই প্রার্থীই নন, তার স্ত্রী এবং অনেক বন্ধুবান্ধবও উত্তীর্ণ হয়েছেন পরীক্ষায়। সবমিলে মাস্টার রোলে কর্মরত ১০-১২ জন প্রার্থীর এভাবে পাস করার অভিযোগ জমা পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে এই নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়ের করা একাধিক অভিযোগপত্র থেকে এসব তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, বিষয়টি জানার পরে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, স্টোর অফিসার, হিসাবরক্ষক ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকসহ মোট ১০টি ক্যাটাগরিতে প্রায় সাড়ে ১৩শ পদে নিয়োগে প্রার্থী ছিল ৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮৯ জন। গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয়টি ধাপে এমসিকিউ পদ্ধতির লিখিত পরীক্ষা আয়োজন করা হয়। জমা পড়া অভিযোগ অনুযায়ী, এরমধ্যে অন্তত পাঁচটির প্রশ্নপত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন মো. হাসিব নামে এক ডাটা এন্ট্রি অপারেটর (মাস্টার রোল)। তিনি নিজে কম্পিউটার অপারেটর পদের প্রার্থী ছিলেন। তার স্ত্রীও ছিলেন প্রার্থী। এখানেই শেষ নয়, ইইডিতে দীর্ঘদিন ধরে মাস্টার রোলে কর্মরত এই কর্মচারীর ঘনিষ্ট অন্য প্রার্থীরাও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

এ বিষয়ে প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বেনামে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে ওই নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব পদত্যাগপত্র দাখিল করেন। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ তদন্তের দাবি করেন। এরপর ইইডির ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। এছাড়া গত ৯ এপ্রিল শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকেও একটি পত্র দেওয়া হয়। তাতেও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়। পাশাপাশি এতবড় জনবল নিয়োগের কমিটিতে কোনো প্রকৌশলীকে না রাখা নিয়েও জানানো হয় ক্ষোভ।

অভিযোগপত্রের দাবি ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, ইইডিতে অস্থায়ীভাবে কর্মরত হাসিব নামে একজনকে দিয়ে প্রশ্নপত্র কম্পিউটার কম্পোজ ও প্রিন্ট করানোয় তিনি এবং তার স্ত্রী আগেই নিয়োগের প্রশ্নপত্র পেয়ে যান। তার বন্ধুবান্ধবের পাওয়ার সম্ভাবনাও প্রকট হয়।

অভিযোগকারীদের দাবি, এরই মধ্যে প্রার্থীদের ভাইভা পরীক্ষা হয়ে গেছে। তবু পরীক্ষার মূল হাজিরা শিটের ছবি, স্বাক্ষরের সঙ্গে উত্তীর্ণ প্রার্থীর স্বাক্ষর, ছবি এবং আবেদনপত্রের ছবি ও স্বাক্ষর মেলালে ভুয়া পরীক্ষার্থী চিহ্নিত করা সম্ভব।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাসিবের সঙ্গে কথা হলে তিনি দাবি করেন, স্যারদের নির্দেশে তিনি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন কম্পোজ করেছেন। স্যারেরা যা করতে বলবেন তার বাইরে কিছু করার সুযোগ তার নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে কমিটি থেকে পদত্যাগ করা সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে জানান নিয়োগ পরীক্ষায় উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে তিনি নিজেই তদন্ত চেয়েছেন।

তিনি স্বীকার করেন, কর্মচারী হাসিব প্রশ্নপত্র মুদ্রণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু এমন একজন প্রার্থীকে কেন রাখা হলো- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। এ নিয়ে সিদ্ধান্তের এখতিয়ারও আমার ছিল না। তবে তাকে রাখা ঠিক হবে না মর্মে পরামর্শ দিয়েছিলাম।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কয়েকজন ভুয়া প্রার্থী শনাক্ত হয়েছে। তাদের পুলিশেও দেওয়া হয়েছে।

নিয়োগের আহ্বায়ক ও ইইডির পরিচালক রাহেদ হোসেন বলেন, উত্থাপিত অভিযোগের কোনো কোনো বিষয়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র কম্পোজের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী হাসিব ও তার স্ত্রী পরীক্ষায় টিকেছেন। তবে কর্মচারীটি জানায়নি যে তার স্ত্রী পরীক্ষার্থী। এটা তার জানানো উচিত ছিল। আর ওই কর্মচারী যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, সেই পরীক্ষার কাজ থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছিল।

পরিচালক বলেন, ইইডিতে অনেক মাস্টার রোলের কর্মচারী আছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন টিকেছে। কেউ না কেউ যে কোনো পরীক্ষায় টিকে যেতেই পারে। তারপরও গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তবে এজন্য কোনো তদন্ত কমিটি করা হয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন, মন্ত্রণালয়ে অভিযোগের ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত