পাসপোর্ট অফিসের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা মেনে নেওয়া কষ্টকর

| আপডেট :  ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৪১  | প্রকাশিত :  ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:৪১

এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উত্তরা পাসপোর্ট অফিসের ঘুস ও দুর্নীতির যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা মেনে নেওয়া কষ্টকর। স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রম করেছে দেশ। এ পর্যায়ে এসে উত্তরা পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুস বাণিজ্যের ব্যাপকতা আমাদের বিমর্ষ করে বৈকি!

৩ জানুয়ারি দৈনিক যুগান্তর এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেখা গেছে, উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ ফরম পূরণ থেকে শুরু করে ছবি তোলা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে অন্তহীন হয়রানির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্টপ্রত্যাশীরা। তবে এ অফিসের কর্মকর্তাদের নিজস্ব দালালের হাতে ঘুসের টাকা তুলে দিলেই ত্বরিতগতিতে হচ্ছে সব সমস্যার সমাধান।

উদ্বেগজনক হলো, কেবল উত্তরা নয়, দেশের অপরাপর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসও অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন প্রকাশ্যে চলছে কারবার।

হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবাপ্রাপ্তি জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হলেও বাস্তবতা হলো, দেশে বর্তমানে ঘুস ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যেন অলৌকিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলো, আমাদের সেবা খাতে যেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিল্লিতে কেজরিওয়াল সরকার চালু করেছে সরকারি সেবার হোম ডেলিভারি সার্ভিস প্রকল্প। একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করলে সহায়তার জন্য অকুস্থলে পৌঁছে যাবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। যদি কারও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্ধারিত কল সেন্টারে ফোন করে নিজের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও ঠিকানা জানাতে হবে।

এরপর এজেন্সি থেকে একজন ‘মোবাইল সহায়ক’ নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি সরাসরি আবেদনকারীর বাড়িতে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করবেন। অবশ্য আবেদনকারীকে ড্রাইভিং পরীক্ষার জন্য একদিন মোটর লাইসেন্সিং অফিসে যেতে হবে। পরীক্ষায় পাস করলে বাড়িতেই ৫০ রুপি ফি’র বিনিময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স। একইভাবে পাসপোর্ট, আয়কর সনদ, রেশনকার্ডসহ ৪০টি সরকারি সেবা ঘরের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দিল্লি সরকার।

প্রশ্ন হলো, দিল্লিতে যখন সরকারি সেবা মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার নাগরিকবান্ধব প্রকল্প চালু হয়েছে, তখন এদেশের অবস্থা কী? টিআইবির জরিপ বলছে-দুর্নীতিতে শীর্ষ খাতগুলোর মধ্যে অন্তত সাতটিই সেবা খাতের।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উত্তরাসহ দেশের অন্যান্য পাসপোর্ট অফিসে লাগামহীন ঘুস বাণিজ্য ও দুর্নীতি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী ক্ষতির শিকার হচ্ছে। উত্তরা পাসপোর্ট অফিসে ঘুস বাণিজ্যে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষ যাতে প্রয়োজনের সময় হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারেন, এজন্য পাসপোর্ট অধিদফতরসহ দেশের সব আঞ্চলিক অফিস ঘুস ও দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত