পেনশন সুবিধার নতুন আইনের খসড়া

| আপডেট :  ৩০ মার্চ ২০২২, ১২:৫৪  | প্রকাশিত :  ৩০ মার্চ ২০২২, ১২:৫৪

আমৃত্যু পেনশন সুবিধার বিধান রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন ২০২২’-এর খসড়া। এতে অংশ নিতে পারবে ১৮-৫০ বছর বয়সের বাংলাদেশি নাগরিকরা। তারা বিদেশে থাকলেও এ সুযোগ নিতে পারবে। দুস্থ নাগরিকদের মাসিক চাঁদার একটি অংশ অনুদান হিসাবে দেবে সরকার।

এ আইনের অধীনে কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর নির্বাহী চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের অর্থ দিয়ে গঠন করা হবে পৃথক তহবিল। যার অর্থ লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হবে।

এছাড়া পেনশনের অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে। অর্থ মন্ত্রণালয় খসড়াটির ওপর মতামত চেয়েছে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ খসড়া আইনে বলা হয়, সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা এখানে অংশ নিতে পারবে না। এতে বেসরকারি পর্যায়ের লোকজন অংশ নিতে পারবে। প্রাথমিকভাবে স্বেচ্ছায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তি হওয়া যাবে। একজন অংশগ্রহণকারী ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হলে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। প্রতি চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে।

চাকরিরত চাঁদাদাতারা কাজের জায়গা পরিবর্তন করলে পূর্ববর্তী হিসাব নতুন কর্মস্থলের বিপরীতে স্থানান্তরিত হবে। নতুনভাবে হিসাব খুলতে হবে না। এই কর্তৃপক্ষ মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত করবে। মাসিক এবং ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা দেওয়া যাবে, প্রয়োজনে অগ্রিম ও কিস্তিতে জমার সুযোগ থাকবে।

মাসিক চাঁদা দিতে দেরি হলে, বিলম্ব ফিসহ বকেয়া চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে পেনশন হিসাব সচল রাখা যাবে। চাঁদাদাতারা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

তবে পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কেউ মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়ের জন্য (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। কিন্তু কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করলে জমাকৃত অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।

পেনশন তহবিলে জমাকৃত অর্থ কোনো পর্যায়ে এককালীন উত্তোলনের সুযোগ থাকবে না। তবে চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে উত্তোলন করা যাবে। বিপরীতে ধার্যকৃত ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। তবে পেনশনের চাঁদা কর রেয়াতমুক্ত থাকবে। মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থও আয়করমুক্ত থাকবে।

এই আইন কার্যকরের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নামে একটি কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর প্রধান কার্যালয় ঢাকায় হবে। প্রয়োজনে দেশের যে কোনো স্থানে শাখা কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে। একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য থাকবে পেনশন কর্তৃপক্ষের। সরকার নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিযুক্ত করবেন। তবে এর ব্যয় নির্বাহ করবে সরকার।

কর্তৃপক্ষের কায্যবলি : কর্তৃপক্ষ সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালু, ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি চাঁদাদাতাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। এছাড়া এই স্কিম গ্রহণ, স্কিমে প্রবেশ যোগ্যতা, শর্ত নির্ধারণ, অনুমোদন, পরিচালনা, তত্ত্বাবধান এবং পেনশন তহবিলের পুঞ্জীভূত জমার বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা করবে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আহরণকৃত চাঁদার অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।

এতে আরও বলা হয়, চাঁদাদাতাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রতিকারের জন্য প্রয়োজনীয় প্রবিধান প্রণয়ন, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ফি বা অন্যান্য চার্জ নির্ধারণ করবে। এই কর্তৃপক্ষ সরকারের অনুমতি নিয়ে নিজ নামে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে।

পেনশন গভর্নিং বোর্ড : এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন অর্থমন্ত্রী। সদস্য হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, সমাজ কল্যাণ সচিব, মহিলা ও শিশুবিষয়ক সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান এর সদস্য সচিব হবেন।

সর্বজনীন পেনশন তহবিল : পেনশন তহবিলের অর্থ সরকারি সিকিউরিটি, কম ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য সিকিউরিটিজ, লাভজনক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের জন্য গাইডলাইন অনুমোদন দেবেন।

এছাড়া জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একটি তহবিল থাকবে। সেখানে সরকারের অনুদান, আদায়যোগ্য চার্জ, ঋণের অর্থ জমা হবে। তহবিলের অর্থ কর্তৃপক্ষের নামে কোনো তফসিলি ব্যাংকে জমা রাখা হবে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের একজন সদস্যকে সভাপতি এবং এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সদস্য করে পেনশন তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।

পেনশন বিতরণ পরিকাঠামো : কর্তৃপক্ষ ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার প্রক্রিয়ায় মাসিক পেনশন পেনশনারের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছানো নিশ্চিত করবে। এ লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীভূত ও স্বয়ংক্রিয় পেনশন বিতরণ পরিকাঠামো গঠন করা হবে।

সূত্র: যুগান্তর

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত