প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন চাইলেন মার্ক জাকারবার্গ

| আপডেট :  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৯  | প্রকাশিত :  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৯


প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন চাইলেন মার্ক জাকারবার্গ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক


ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে শিশুদের সুরক্ষার অভাব স্বীকার করে অভিভাবকদের উদ্দেশে ক্ষমা চেয়েছেন ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গ। সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে জাকারবার্গ ক্ষতিগ্রস্ত বাবা-মায়েদের সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চান।

মার্কিন কংগ্রেসের শুনানির সময় যেখানে মেটা, টিকটক, এক্স এবং অন্যান্য কোম্পানির সিইওদের সমালোচনা করা হয়, যাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিশু এবং কিশোর ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। এদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির শিকার হয়ে মারা যাওয়া সন্তানদের ছবি নিয়ে সিনেট ফ্লোরে এসেছিলেন বাবা-মায়েরা।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ‘বড় প্রযুক্তি সংস্থা ও অনলাইনে শিশুদের যৌন হয়রানি সংকট’ শীর্ষক শুনানিতে মার্কিন সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটি শীর্ষ সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোর যে পাঁচজন প্রধান নির্বাহীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তাদের একজন জাকারবার্গ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- এক্স-এর লিন্ডা ইয়াকারিনো, টিকটকের শো জি চিউ, স্ন্যাপের ইভান স্পিগেল এবং ডিসকর্ডের জেসন সিট্রন।

শুনানির সময় জাকারবার্গ ওই সন্তানদের অভিভাবকদের বলেন, আপনাদের যে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আপনাদের পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা যেন অন্যদের না হয়। আর এ কারণে আমরা এত বিনিয়োগ করি। যেন এমনটি যেন আর কারও সঙ্গে না হয়। আর এ জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব।

এসময় যৌন শিকারী এবং কিশোর-কিশোরীদের আত্মহত্যাসহ অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অনলাইনের নানা বিপদ প্রতিরোধে যথেষ্ট ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য সিনেটরদের তোপের মুখে পড়েন সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট সিইওরা।

শুরুতেই সিনেট কমিটি একটি ভিডিও দেখায়, যাতে শিশুরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিপীড়নের কথা জানায়। এছাড়া, ছবি শেয়ার করার পর বিকৃত যৌনতা, ব্ল্যাকমেইলের শিকার তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার ঘটনা উল্লেখ করেন সিনেটররা।

জকারবার্গ এবং টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শৌ জি চিউ স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতে সম্মত হলেও স্ন্যাপ, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং ডিসকর্ডের প্রধানরা প্রথমে রাজি ছিলেন না। এরপর সরকার তাদের শুনানিতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়। এমন পরিবারও এদিন উপস্থিত ছিলেন যাদের সন্তানরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যৌন নিপীড়ন বা হয়রানির শিকার হয়েছে এবং আত্মহত্যা করেছে।

এই কমিটির প্রধান সিনেটর ডিক ডুবিন বলেন, আমাদের বাচ্চারা অনলাইনে যেসব বিপদের সম্মুখীন হয় তার জন্য দায়ি এই পাঁচ সিইও। তারা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।

তিনি বলেন, এই কোম্পানিগুলি যে প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে, তা প্রচুর বাচ্চার কাছে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিগুলি সুরক্ষার পিছনে যথেষ্ট অর্থ খরচ করেনি, প্রাথমিক সুরক্ষার থেকে লাভকেই বড় করে দেখেছে। এর ফলে বাচ্চারা বিপদের মধ্যে পড়েছে।

সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, মিস্টার জাকারবার্গ, আপনি ও আপনার কোম্পানিগুলির কাজ আমাদের সামনে আছে। আমি জানি, আপনি কখনোই এরকম পরিস্থিতি চাইবেন না, তা সত্ত্বেও আপনার হাতে রক্ত লেগে আছে। আপনার প্রোডাক্ট মানুষকে মারছে।

একপর্যায়ে রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাওলি সোশ্যাল মিডিয়া প্রধানদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কি এখন ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ক্ষমা চাইতে চান, যারা আপনাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

জাকারবার্গ সিনেটরদের বলেন, ইন্টারনেট শুরু হওয়ার পর থেকে বাচ্চাদের নিরাপদে রাখাটা প্রথম থেকে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। অপরাধীরা তাদের কৌশল বদলেছে। আমাদেরও প্রোডাক্টের সুরক্ষা বদলাতে হয়েছে।

তিনি স্বীকার করেন, সমীক্ষায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যম বাচ্চাদের মানসিক স্বাস্থ্য়ের পক্ষে খারাপ।

টিকটক সিইও শাও জি চিউ বলেছেন, আমার তিনটি সন্তান আছে। আমি জানি, যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তা খুবই ভয়ের এবং প্রতিটি বাবা-মার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো।

তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও মানুষের আস্থা ফেরাতে তিনি দুইশ কোটি ডলার খরচ করবেন। চলতি বছরেই আমাদের ৪০ হাজার পেশাদার সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন।

মেটাও জানিয়েছে, তাদের ৪০ হজার কর্মী অনলাইন সুরক্ষার বিষয়টা নিয়ে কাজ করছেন। ২০১৬ সালে থেকে তারা দুই হাজার কোটি ডলার এর জন্য খরচ করেছে।

মেটার কাছেই ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিকানা আছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিশোর ও সদ্য যুকদের কাছে অচেনা জায়গা থেকে কোনো বার্তা পাঠানো হলে, তা ব্লক করা হবে। এছাড়া ইনস্টা ও ফেসবুকে কিশোরদের কনটেন্টের উপর আরো কড়াকড়ি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

বিবার্তা/লিমন

© BBARTA24.NET
Developed by : ORANGEBD
  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত