প্রাথমিকের ৭ শিক্ষকের নামে ঋণ তুলে গায়েব কম্পিউটার অপারেটর

| আপডেট :  ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৫৫  | প্রকাশিত :  ০৩ অক্টোবর ২০২২, ০৬:৫৫

জালিয়াতির মাধ্যমে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাত সহকারী শিক্ষকের জিপিএফ ও অবসরভাতা ফান্ড থেকে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ তুলে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনা জানাজানির পর অভিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক গা ঢাকা দিয়েছেন।

জালিয়াতির মাধ্যমে গত বছরের ডিসেম্বরে শিক্ষকদের নামে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ঘটনা জানাজানি হয়।

ঋণের জন্য শিক্ষকরা আবেদন কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলার বিষয়ে কিছু না জানলেও সোনালী ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড সুন্দরগঞ্জ এবং পাঁচপীর শাখা থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ ৬৪ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৬৬ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা তুলে নেওয়া হয়।

শিক্ষকদের অভিযোগ, জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের নামের বিপরীতে ৯ লাখের বেশি টাকা তুলে নিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক। জালিয়াতির এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন-উর-রশিদের যোগসাজস রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। ঘটনার প্রতিকার চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।

অভিযোগে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক স্বপ্না রানী, রহিমা বেগম, আতাউর রহমান, শামছুন্নাহার বেগম, মাসুদা বেগম, হাজেরা বেগম ও আনিছুর রহমান। এই সাত সহকারী শিক্ষক সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা, কালির খামার, দক্ষিণ রাজিবপুর, পূর্ব বজরা হলদিয়া পুটিমারী, নতুন দুলাল ভরট, পুটিমারী ও চণ্ডিপুর ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। শিক্ষকদের নামের বিপরীতে মোট ৯ লাখ ১৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হলেও কিছুই জানা নেই তাদের। ঋণের টাকার জন্য তারা কোনও দিন শিক্ষা অফিসে আবেদনও করেননি। এমনকি তাদের হিসাব নম্বরে কোনও টাকাও আসেনি। জালিয়াতির মাধ্যমে ওই টাকা উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবু বক্কর সিদ্দিক তুলে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

এদিকে, জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা জানা নেই সংশ্লিষ্ট শাখার ব্যাংক কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগও করেননি বলে জানান সোনালী ব্যাংক সুন্দরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক মো. আব্দুল হাদী।

তবে এরইমধ্যে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়াসহ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ।

মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘এমন ঘটনা কখনও কাম্য নয়। দ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দক্ষিণ ধোপাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক স্বপ্না রানী রায় অভিযোগ করেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৩ হাজার ২০০ টাকা কর্তন করা হয়। পরে ট্রেজারি অফিসে গিয়ে দেখি আমার জিপিএফ ফান্ড থেকে দুই লাখ ৬৪ হাজার টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। অথচ এই ঋণের বিসয়ে আমি কিছুই জানি না।’

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষক রহিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বাক্ষর ছাড়া আমার নামে কীভাবে ঋণ মঞ্জুর হয়। এই জালিয়াতির ঘটনা আবু বক্কর একা কখনও করতে পারেন না। এরসঙ্গে শিক্ষা অফিসারও জড়িত।’

এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ কমিটি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম যুথি বলেন, ‘এটা জঘন্যতম জালিয়াতি। এ ঘটনার সঙ্গে শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ট্রেজারি অফিসের কর্মচারি জড়িত। দ্রুত এই জালিয়াতির ঘটনার সমাধান না হলে আন্দোলনে নামবো।’

এদিকে, জালিয়াতির ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয় শিক্ষকরা। ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসার এ কে এম হারুন-উর-রশিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে রবিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে সড়কে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন কর্মসূচি করেছেন তারা। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি স্মারকলিপি দেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে অফিসে গিয়েও শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন-উর-রশিদকে পাওয়া যায়নি।

তবে মোবাইলফোনে এ বিষয়ে কথা হলে জালিয়াতি ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তিনি। এ সময় তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন তিনি।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত